Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
E-Waste

সম্পাদক সমীপেষু: ই-বর্জ্যের দূষণ

যে সমস্ত ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রের জীবন শেষ এবং কর্মে সম্পূর্ণ অক্ষম, সেই সমস্ত যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশকেই ই-বর্জ্য বলে। বিশ্বে বর্তমানে ই-বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টনের একটু বেশি।

E-Waste.

বৈদ্যুতিন বর্জ্য। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৬:১৭
Share: Save:

‘বৈদ্যুতিন বর্জ্য’ (২৭-২) শীর্ষক ছোট্ট সংবাদটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। খবরটি পড়ে জানলাম, দেরিতে হলেও অবশেষে কলকাতা পুরসভা তিনটি বরো অফিসে বৈদ্যুতিন বর্জ্য বা ই-বর্জ্যের পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। অথচ, ই-বর্জ্যের হাত থেকে সমাজকে রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ হিসাবে গত বছরই পরিবেশ দিবসে সায়েন্স সিটির অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকে পরিবেশমন্ত্রী এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ঘটা করে দু’টি স্কুলে আধুনিক মানের ডাস্টবিন প্রদান করেন। আগামী দিনে চার-পাঁচ হাজার স্কুলে এই ডাস্টবিন দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় এবং স্কুল থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্থানীয় পুরসভা ই-বর্জ্য সংগ্রহ করবে বলে ঘোষণা করা হয়। কারণ, নির্দিষ্ট জায়গায় এগুলি ফেলা না হলে মারাত্মক দূষণ ছড়াতে পারে। পরে সেগুলি পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করে তোলাই ছিল উদ্দেশ্য। অথচ, বাস্তবে আমরা কী দেখছি? পুরসভার এখনও পাইলট প্রকল্পই শেষ হয়নি। এই ভাবে চললে দুর্দিনের আগমন বেশি দূরে নেই।

ই-বর্জ্য কী? যে সমস্ত ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রের জীবন শেষ এবং কর্মে সম্পূর্ণ অক্ষম, সেই সমস্ত যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশকেই ই-বর্জ্য বলে। বিশ্বে বর্তমানে ই-বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি টনের একটু বেশি। আমেরিকা এবং চিন যৌথ ভাবে বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ ই-বর্জ্যের মালিক। ২০১৭ সালে বিশ্বে ই-বর্জ্য উৎপাদনে ভারতের স্থান ছিল পঞ্চম, ২০১৮-য় চতুর্থ, ২০১৯-এ তৃতীয়। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের অবস্থাও বিশেষ সুবিধার নয়। এই ভাবে চলতে থাকলে এক দিন ই-বর্জ্য দেশে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। ইউপিইএস দেহরাদূন-এর ২০১৮ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর ২৫ শতাংশ হারে বাড়ছে ই-বর্জ্য। বণিকসভা অ্যাসোচ্যাম-এর ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুসারে, ভারতে ই-বর্জ্যের পরিমাণ ১৮ লক্ষ টন। ভারতে মোট ই-বর্জ্যের প্রায় ১০ শতাংশ আছে এই বাংলায়।

এই ই-বর্জ্য অনেকটাই প্লাস্টিকের। তার পরিমাণ ২০ শতাংশ। এই মুহূর্তে সমস্ত ই-বর্জ্যের ধাতু-অধাতু মিলিয়ে মাত্র ২০ শতাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে। কিন্তু বাকি ৮০ শতাংশের মধ্যে আবার ২০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়নি। কারণ ই-বর্জ্যের প্লাস্টিকে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি এবং থার্মোপ্লাস্টিক ও থার্মোসেটের মিশ্রণ। এই বিষাক্ত উপাদান মাটিতে এবং জলে মিশে চক্রাকারে আসছে মানুষের শরীরে। শীঘ্রই দেশের প্রতিটি রাজ্যে বড় পরিসরে উদ্যোগ না করা হলে সঙ্কট বাড়বে। ই-বর্জ্য প্রাণী-স্বাস্থ্য এবং মানব-স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।

সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া

প্রতারণা চক্র

তূর্য বাইনের ‘জালিয়াতির ফাঁদ পাতা ভুবনে’ (১-৩) শীর্ষক প্রবন্ধটি সাম্প্রতিক কালের এক গুরুতর সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছে। সাইবার প্রতারণা ইদানীং সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে যত যন্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, তত বাড়ছে সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে পা দেওয়ার সম্ভাবনা।

সাধারণ মানুষ বিশ্বজোড়া বড় বড় হ্যাকিং-এর খবর রাখতে চান না। শোনা যায়, হ্যাকাররা নাকি নাসার সুরক্ষিত সাইটে ঢুকে কিছু সময়ের জন্য হলেও তথ্যবিকৃতির মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। এই সব খবরে আমাদের মতো আদার ব্যাপারীদের বিশেষ আগ্রহ নেই। কিন্তু খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা চাই আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকা যেন সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু প্রতারকদের নিত্যনতুন উদ্ভাবনী শক্তির কাছে আমরা হয়ে পড়ছি অসহায়। এই ব্যাপারে ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের মধ্যেও কিছু উদাসীনতা এবং কিছু পরিমাণে নিজেদের আধুনিক বা সময়ের সঙ্গে পরিমার্জিত রাখার গাফিলতিও লক্ষ করা যায়।

দীর্ঘ ৩৫ বছর ব্যাঙ্কে চাকরি করার সুবাদে দেখেছি, ক্যাশ ছাড়া অন্য বিষয়ে সতর্কতার অভাব অল্প হলেও আছে। এ কথা ঠিক, ব্যাঙ্কে কম্পিউটার প্রবেশের আগে দৈনন্দিন লেনদেনের ক্ষেত্রে ক্যাশের ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন হত। কিন্তু এখন তার চেয়েও অনেক বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন হয় কোনও তথ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে। ফোন নম্বর পরিবর্তন বা কেওয়াইসি নবীকরণ ইত্যাদি বিষয় হয়ে গিয়েছে সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গা। একটা ফোন নম্বর পরিবর্তন করতে পারলে অ্যাকাউন্টের প্রায় সমস্ত খুঁটিনাটি এসে যায় প্রতারকের আওতায়।

প্রতারণার ফাঁদে পড়ার জন্য সারা দেশেই জাল ছড়ানো আছে। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিতে গেলে তো বটেই, একটা নতুন সিম কার্ড নিতে গেলে, বিমা করাতে গেলে— সব ক্ষেত্রেই প্যান কার্ড, আধার কার্ড এবং ফোন নম্বর জমা করতে হয়। সুতরাং, সব সময়ই একটা সম্ভাবনা থাকে এগুলো প্রতারকদের কাছে চলে যাওয়ার। এ ছাড়াও যে কারণটা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, সেটা হল মানুষের লোভ। লটারিতে টাকা পাওয়ার লোভ, বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার লোভ ইত্যাদি বহু কারণে মানুষ অসতর্ক হয়ে নিজের যাবতীয় গোপন তথ্য প্রকাশ করে ফেলে।

আর এক ধরনের প্রতারণা সমাজমাধ্যমে ইদানীং খুব দেখা যাচ্ছে। সেটা হল, প্রেমের ফাঁদ পেতে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে গোপন ছবি সংগ্রহ করে ব্ল্যাকমেল করা। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে জালিয়াতদের যোগসাজশের যে অভিযোগ তিনি করেছেন, সে ব্যাপারে প্রবন্ধকারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। যদি ধরেও নিই এর মধ্যে কিছু সত্যি আছে, তবে তা খুবই সামান্য। শতাংশের হিসাবে আসে না। তবে এটা ঠিক যে, সাইবার প্রতারণা এবং জালিয়াতি থেকে মুক্তি পেতে গেলে প্রত্যেককে যেমন অত্যন্ত সাবধান হতে হবে, সেই সঙ্গে যে কোনও ধরনের লোভ থেকে নিজেদের সংযত করতে হবে।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

পাণ্ডব গোয়েন্দা

ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটি বা অর্জুনের তুলনায় পাণ্ডব গোয়েন্দা, অর্থাৎ বাবলু, বিলু, ভোম্বল, বাচ্চু ও বিচ্ছুরা বয়সে কিছুটা নাবালকই ছিল। ফেলুদার মতো শাণিত বুদ্ধির অভাব ওরা ঢেকে দিয়েছিল অতুলনীয় সাহস দিয়ে। ‘পাণ্ডব গোয়েন্দার স্রষ্টা প্রয়াত’ (৪-৩) শীর্ষক সংবাদে লেখা হয়েছে, “১৯৮০-র দশকে আত্মপ্রকাশ ষষ্ঠীপদর পাণ্ডব গোয়েন্দার।” এই তথ্যটি সঠিক নয়। ১৯৬১ সালে প্রথম পাণ্ডব গোয়েন্দার অভিযান-১ বই হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। দীর্ঘ ছ’দশক ধরে ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় সর্বমোট ৪৭টি পাণ্ডব গোয়েন্দার কাহিনি লিখে গিয়েছেন। এনিড ব্লাইটনের দ্য সিক্রেট সেভেন বা দ্য ফেমাস ফাইভ-এর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির সঙ্গে মিল থাকলেও সহজ সরল ভাষা ও কাহিনির জন্য বরাবরই বাঙালি শিশু-কিশোরদের আপনজন হয়ে উঠেছে পাণ্ডব গোয়েন্দা। হাওড়া শহরতলির শিবপুর, শালিমার, রামরাজাতলা, টিকিয়াপাড়া, দাশনগর পাণ্ডব গোয়েন্দাদের প্রধান বিচরণক্ষেত্র ছিল। ওড়িশার পুরীর মতো কখনও কখনও তাদের রাজ্যের বাইরে গিয়েও রহস্যের সমাধান করতে দেখা গেছে। বিপদের সময় এক চোখ অন্ধ কুকুর পঞ্চুর সাহসিকতাও কিশোর পাঠকের মন জয় করে নিয়েছে। সম্ভবত আজও পাঠ্যবইয়ের পড়া ও পরীক্ষার চাপে ক্লান্ত-ধ্বস্ত স্কুলপড়ুয়া ছাত্রেরা ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে মিত্তিরদের বাগানে একটু আশ্রয়ের খোঁজ করে।

ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় কেবল গোয়েন্দা কাহিনির লেখক ছিলেন না, ভ্রমণসাহিত্য রচনাতেও তাঁর মুনশিয়ানার স্বাক্ষর রেখেছেন। রাজস্থান ভ্রমণ, দেবদাসী-তীর্থ, কিংবদন্তীর বিক্রমাদিত্য, কেদারনাথ, হিমালয়ের নয় দেবী কেবল সাহিত্য নয়, বেড়ানোর গাইডবুক হিসেবেও অপরিহার্য ছিল। বইমেলায় ও বিভিন্ন সাহিত্য আলোচনার অনুষ্ঠানে ষষ্ঠীপদবাবুর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। দেখেছি, লেখনীর মতোই তাঁর ছিল সহজ-সরল, সতেজ একটা কিশোর মন। ঠিক যেন পাণ্ডব গোয়েন্দার লিডার বাবলু।

কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

E-Waste Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE