E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: প্রকৃত সংখ্যা

প্রথমে জানা দরকার, রাজ্যে এ সময় (২০২৫) লোকসংখ্যা কত। ২০২১ সালে জনগণনা না হওয়ায় ভরসা ১৪ বছর পুরনো ২০১১ সালের জনসংখ্যা, ৯.১৩ কোটি। পরবর্তী ১৪ বছরে কত বৃদ্ধি হল? স্বাভাবিক বৃদ্ধির হারই বা কত?

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:২০

‘কিছু সংশয়, কিছু ভয়’ (১৭-১১) শীর্ষক প্রবন্ধে তূর্য বাইন গবেষণা সূত্রে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান (২০২৫) নির্বাচক তালিকায় স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ১৩.৬৯ শতাংশ, অর্থাৎ ১.০৪ কোটি বাড়তি ভোটারের নাম রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান তালিকাভুক্ত সংখ্যা ৭.৬৬ কোটি থেকে কমে সঠিক ভোটার সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৬.৬২ কোটি। শেষোক্ত সংখ্যাটির যথার্থতা সম্বন্ধে সংশয় জানাতে এই চিঠি।

প্রথমে জানা দরকার, রাজ্যে এ সময় (২০২৫) লোকসংখ্যা কত। ২০২১ সালে জনগণনা না হওয়ায় ভরসা ১৪ বছর পুরনো ২০১১ সালের জনসংখ্যা, ৯.১৩ কোটি। পরবর্তী ১৪ বছরে কত বৃদ্ধি হল? স্বাভাবিক বৃদ্ধির হারই বা কত? এখানে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল তথা সেন্সাস কমিশনার-এর দেওয়া জন্ম ও মৃত্যুহার ব্যবহার করতে পারি। জন্ম ও মৃত্যুহারের বিয়োগফল হল স্বাভাবিক বৃদ্ধি হার। এই অফিসের সর্বশেষ স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম বা এসআরএস (২০২৩) রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ সালে (২০১১ এবং ২০২৫ সালের মধ্যবর্তী বছর হিসেবে) রাজ্যে এ দু’টি হার ছিল যথাক্রমে হাজার অধিবাসী পিছু ১৫.০ এবং ৫.৬। অর্থাৎ, বাৎসরিক বৃদ্ধির হার হাজারে ৯.৪। যদি ধরে নিই জনসংখ্যা ২০১১ এবং ২০২৫-এর মধ্যে জ্যামিতিক হারে বেড়েছে, তবে ২০২৫ সালে (১ মার্চ) রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১০.৪০ কোটি। এই অনুমিতি গ্রহণ করলে ওই সময় প্রাপ্তবয়স্ক (অর্থাৎ, ১৮ এবং তার চেয়ে বেশি বয়সি) তথা সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা কী হয়েছে?

এ জন্য আবার রেজিস্ট্রার জেনারেলের সর্বশেষ এসআরএস রিপোর্টটি সহায় হোক। এই প্রতিবেদনে বয়সানুগ জনবিন্যাস (শতাংশে) পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের বা অন্য রাজ্যের ১৮ বা বেশি বয়সি ব্যক্তি অনুপাত হিসাব এখান থেকে করা যায়। এই রাজ্যের এই অনুপাত ২০২৩ সালে ছিল ৭৩.৬ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে এই অনুপাত ৭৭.৩ শতাংশ, প্রতিবেশী ওড়িশা এবং বিহারে যথাক্রমে ৭৩.০ও ৬১.৩, সর্বভারতে ৭০.১ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গের অনুপাত ৭৩.৬ শতাংশ প্রয়োগ করে রাজ্যে ২০২৫ সালে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় ৭.৬৫ কোটি। বর্তমান ভোটার তালিকায় দেওয়া সংখ্যার (৭.৬৬ কোটি) খুব কাছাকাছি। বর্তমান তালিকায় যদি মৃত ব্যক্তির নাম থাকে বা একাধিক স্থানে নাম আছে এমন ব্যক্তি থাকেন, তবে আমরা ধরতে পারি সম্ভাব্য (প্রাপ্তবয়স্ক) ভোটারগণের কিছু অংশ নথিভুক্ত হয়নি।

প্রবন্ধে উল্লিখিত গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্য ও পদ্ধতি সাধারণ জনের বোধগম্য ভাবে প্রকাশ করলে পাঠককুল উপকৃত হতে পারেন।

আনন্দ পাঠক, কলকাতা-৬৫

দুই জীবন

সোনালী দত্তের ‘পেশা ও পরিবারে মাঝে’ (২৭-১০) একটি সময়োচিত প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ। কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের মাঝে যে একচিলতে পরিসরটুকু একান্তই প্রয়োজনীয় এবং যাকে ছাড়া এই জীবনের সুস্থ স্বাভাবিক চলার পথটি ব্যাহত হয় প্রতি পদে, সেই জায়গাটুকু যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, বিশেষত যাঁরা আইটি বা স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে। অতিমারির সময় দেখলাম এক দিন রাত তিনটের সময় পাশের বাড়ির দোতলার ঘরে আলো জ্বলছে। খবর নিয়ে জানলাম, যে আমেরিকান কোম্পানিতে ছেলেটি কাজ করে, তার বরাত আসে রাত বারোটা বাজলে। এই কাজের ধরন ধীরে ধীরে মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে প্রভাব ফেলবে। তাই সবেতন ছুটি ও কাজের সময়ের সীমারেখা থাকার প্রয়োজন অস্বীকারের উপায় নেই। আমেরিকায় অধিকাংশ কর্মজীবীই তাঁদের পেশাগত চাপে কাহিল। ভারতে গত কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে বেসরকারি ক্ষেত্রের এক বৃহৎ সংখ্যক কর্মী প্রচণ্ড মানসিক চাপের শিকার। এর মধ্যে বিজেপিশাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্র ও গুজরাত প্রাত্যহিক কাজের সময় আরও বাড়ানোর পথে। বিশ্ব জুড়ে বেসরকারি কর্মীদের মুখে শুধু ফোন আর ল্যাপটপ। কর্মজীবন যে ভাবে আজ পরিবার জীবনকে গ্রাস করছে, তার থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কেরল সরকার একটি বিল আনছে। বিল এলেও প্রশ্ন রয়ে যায়, গোটা পৃথিবী যখন এই কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত, তখন একক ভাবে কর্মসূচিকে সঙ্কুচিত করার পথে হাঁটা কি সঠিক পদক্ষেপ হবে? স্বাস্থ্যক্ষেত্র বা সংবাদ সংস্থার কর্মীদের পক্ষে এই সংযোগ ছিন্ন করার নিয়ম মেনে চলা কি আদৌ সম্ভব?

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

ভারসাম্যহীন

‘পেশা ও পরিবারের মাঝে’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, বিশ্ব জুড়ে বেসরকারি সংস্থা বা কর্পোরেট জগতের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে কখনও শয়ন কক্ষে, কখনও ডাইনিং টেবলে সময়-অসময় না মেনে কর্পোরেট জগতের লম্বা হাত বিরক্ত করেই চলছে। অফিস থেকে ফিরেও পরিবারের জন্য তিনি সময় দিতে পারছেন না। হঠাৎ হঠাৎ আসছে অফিসের ইমেল, ওয়টস্যাপ, মেসেজ, যেগুলি সবই নাকি জরুরি। অথচ, কর্মচারীরা মেশিন নন। তাঁদেরও সঠিক ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজন। প্রয়োজন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর। কিন্তু বাস্তবে সব কিছুই প্রায় তাঁদের কাছে অনিয়মিত। সেই কারণেই আজ কর্পোরেট অফিসের কর্মচারীদের পারিবারিক ও মানসিক শান্তি তলানিতে ঠেকেছে।

এমনই এক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে কেরল সরকার যে ‘সংযোগ ছিন্ন করার অধিকার বিল, ২০২৫’ আনতে চলেছে, তা প্রশংসনীয়। এতে কর্তৃপক্ষের পাঠানো মেল, মেসেজ বা কোনও ফোন কল কর্মচারী তাঁর অবস্থান অনুযায়ী না-ও ধরতে পারেন। এটা তাঁর অধিকারের পর্যায়ে থাকবে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা করতে পারবেন না। কর্মচারীরা যাতে অফিস ও বাড়ির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন, তার জন্য ইউরোপের বেশ কিছু দেশ কর্মচারীদের এই ধরনের সুবিধা দেওয়া শুরু করেছে। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে কাজের ফাঁকে যাতে কর্মচারীরা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন, তারও ব্যবস্থা আছে। তবে এই যে সংযোগ ছিন্ন করার অধিকার বিলের কথা বলা হচ্ছে, তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষের পাঠানো মেল বা মেসেজের গুরুত্ব বা গভীরতার উপর নির্ভর করবে। প্রশ্ন যে, আপৎকালীন পরিষেবার ক্ষেত্রে এমন সংযোগ কি বিচ্ছিন্ন করা যেতে পারে? যে কর্মচারী সংযোগ ছিন্ন করছেন, তাঁর পরিস্থিতির কথা ও কর্তৃপক্ষের পাঠানো মেসেজ বা মেলের গুরুত্বের কথা দু’পক্ষকেই ভাবতে হবে। নয়তো কর্তৃপক্ষ-কর্মচারীর সুসম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

অতলের টান

‘ভাল থাকার ঋণ’ (২৬-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ভোগবাদী অর্থনীতির মূল কথাই হচ্ছে ‘ধার করে হলেও ঘি খাও’। এই অর্থব্যবস্থায় কর্পোরেট মহাজনরাই ঋণগ্রহীতাকে প্রলুব্ধ করেন ঋণ নেওয়ার জন্য। ঋণগ্রহীতাকে প্রথমে বোঝানো হয় স্বল্প সুদে ও সহজ সরল শর্তে কার্ডের মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের জিনিস কিনতে পারবেন কোনও রকম নগদ লেনদেন ছাড়া। যাঁদের নিয়মিত রোজগার আছে, তাঁদের অসুবিধে হয় না। কিন্তু অন্যরা জড়িয়ে পড়েন চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের ফাঁদে। এই কারবারের ডিজিটাল নাম হল ‘ক্রেডিট কার্ড’। উচ্চবিত্ত নিম্নবিত্ত নির্বিশেষে বহু মানুষ আজ এই কার্ড তাঁদের নিত্যদিনের কেনাকাটায় ব্যবহার করে থাকেন। মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য এই কার্ড ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় ও সুবিধা দিয়ে থাকে। সম্পাদকীয়তে সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রেডিট কার্ডকেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি হল মানুষের অবিবেচনা। ফলে অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী এই ক্রেডিট কার্ডকেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থা বিপুল সংখ্যক ঋণখেলাপি মানুষকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বিপর্যয়ের অতলে।

শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Census Election Commission

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy