Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আশ্চর্য ধাঁধা এক

সেপ্টেম্বরের পেনশন অক্টোবরে তুলতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ— পেনশন অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বাগমারি শাখা থেকে আমি পেনশন পাই।

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০

আমি নব্বই বছরের বৃদ্ধা। ২০০১ সালে আমার স্বামী পরলোক গমন করেছেন। তার পর থেকে আমি ফ্যামিলি পেনশন পেয়ে আসছি। নিয়মানুযায়ী আমার স্বামী শেষ যে পেনশন পেয়েছিলেন, তার ত্রিশ শতাংশ। এ বছর (২০১৮) অগস্ট মাস (যেটা সেপ্টেম্বরে প্রাপ্য) অবধি আমি ঠিকঠাক পেনশন পেয়েছি। সেপ্টেম্বরের পেনশন অক্টোবরে তুলতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ— পেনশন অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বাগমারি শাখা থেকে আমি পেনশন পাই। ব্যাঙ্ক থেকে পেনশন স্লিপ বার করিয়ে দেখলাম, বেসিক পে একই আছে, ডি এ অনেক কমে গিয়েছে (হয়তো এক মাসের মধ্যে জিনিসপত্র খুব সস্তা হয়ে গিয়েছে, যেটা জানতে পারিনি বলেই মহার্ঘভাতা এতটা কমে যাওয়ায় অবাক হচ্ছি) আর বার্ধক্যভাতা শূন্য। সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার, এক মাসে আমার বয়স ৩৬ বছর কমে গিয়েছে! বোধ হয় সে জন্যই বার্ধক্যভাতা শূন্যের কোটায়। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার, সার্ভিস ম্যানেজার কেউ কিচ্ছু বলতে পারলেন না। বললেন, রিজিয়নাল ব্যাঙ্ক থেকে যা পাঠায় তাঁরা তা-ই বিতরণ করেন। কলকাতা স্টেট ব্যাঙ্ক রিজিয়নাল অফিস ‘সমৃদ্ধি ভবন’-এ গিয়ে খোঁজ করতে হবে। অনেক ঘোরাঘুরি করে জানা গেল, প্রতি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ২টো পেনশনারদের বক্তব্য শোনা হয়। পরবর্তী বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আমার ছেলেকে লাইন দিতে হল, কারণ সারা পশ্চিমবঙ্গের পেনশনাররা সপ্তাহে ওই এক দিন দু’তিন মিনিট সময় পাওয়ার জন্যে ধর্না দেন। অত কষ্ট করেও কোনও লাভ হল না— পেনশন সেল থেকে ওই দু’তিন মিনিটেই বলে দিলেন ওঁদের কিছুই জানবার কথা নয়। যে ব্যক্তি যে অফিসে কাজ করছেন সেই অফিস প্রাপ্য পেনশনের পরিমাণ নির্ধারণ করে ওঁদের জানায়— ওঁরা শুধু সেই পরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট স্টেট ব্যাঙ্কের শাখায় পাঠিয়ে দেন। যে হেতু আমার স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারের কাস্টমস অফিসার ছিলেন, সে হেতু কাস্টমস হাউসে গিয়ে খোঁজ করতে হবে। আর একটা কথাও ওঁরা জানিয়ে দিলেন, গত ১০ বছরে আমি নাকি দু’লাখ পঁয়ষট্টি হাজার টাকা বেশি নিয়েছি! ওই টাকা আমাকে এখন ফেরত দিতে হবে। অবস্থাটা এক বার হৃদয়ঙ্গম করুন।

এর পর কাস্টমস হাউস পর্ব। পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট, পেনশন সেল ইত্যাদি ঘোরাঘুরি করে ফল হল এই যে, ওঁরা আকাশ থেকে পড়লেন। কী করে এটা হল, কোনও উত্তরই দিতে পারলেন না। শুধু এইটুকু জানালেন, বয়সের ব্যাপারে ‘সমৃদ্ধি ভবন’ই ভুল করেছে। এবং যথারীতি ‘সমৃদ্ধি ভবন’ থেকে জানা গেল তাঁদের ভুল করার কোনও প্রশ্নই নেই, কারণ এ হিসেব তাঁরা করেন না। সব অফিস নিজেরাই পেনশন প্রাপকদের সব কিছু হিসেব করে তাঁদের কাছে পাঠায়।

এখন আমার জিজ্ঞাস্য— এই মর্তভূমির কোথা থেকে আমি জানব হঠাৎ এক মাসের মধ্যে কী ভাবে আমার বয়স ৩৬ বছর কমে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে আমার পেনশনও অর্ধেক হয়ে গেল। আর, যদি আমাকে বাড়তি টাকা দেওয়া হয় সে জন্যে কি আমি দায়ী, যে আমাকে এখন দু’লাখ পঁয়ষট্টি হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে? ভুল ধরতে ১০ বছর লেগে গেল কেন যে দু’লাখ পঁয়ষট্টি হাজার রিকভারির জন্যে জমে গেল?

সাধনা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-৫৪

মন নিয়ে


অমিতাভ গুপ্তর ‘মন নিয়ে খেলা চলবেই’ লেখাটি (১৪-১০) পড়লাম। লেখককে অভিনন্দন যে উনি বেশ কিছু দিন যাবৎ শিবুদা-শিশির-তপেশকে সঙ্গে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করছেন। তা হল, কগনিটিভ বায়াসেস বা চিন্তাধারার ভুলভ্রান্তি। শুনলেই মনে হয়, তবে ঠিক চিন্তাধারা কী? আর এখানেই যাবতীয় তর্কের সূত্রপাত। অষ্টাদশ শতক থেকে, মানে নবজাগরণ-উত্তর ইউরোপে এক দল দার্শনিক সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চর্চা শুরু করলেন। অর্থনীতি এই চিন্তার অগ্রাধিকার পেয়ে গেল, কেননা তখন জ্ঞানের উন্মেষের সঙ্গে ইউরোপ বিশ্বজোড়া বাণিজ্যের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে। আবার নিউটন এবং অন্যরা পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন আঙ্গিক অঙ্কের সাহায্যে তুলে ধরেছেন, সেখানে কয়েকটি সূত্রকে সত্যি ধরে নিয়ে বিচারকে এগিয়ে নেওয়া যায় অনেক গভীর অবধি। তাই সমাজবিজ্ঞানীরা ভেবে বসলেন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যদি ডিটারমিনিজ়ম বা নির্ণয়বাদ নিয়ে গঠন করা যায়, অর্থনীতিই বা নয় কেন? সূচনা হল আধুনিক অর্থনীতির। পরে অনেক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এই চিন্তাগুলিকে গণিতের সূত্র দিয়ে লিপিবদ্ধও করেছেন, ঠিক পদার্থবিদ্যার মতোই। কিন্তু একটি বড় জায়গায় ভুল করে ফেললেন অনেকে। তাঁরা ধরেই নিলেন মানুষ সব সময় যুক্তি দিয়ে চলে, পদার্থ বা শক্তি যেমন কিছু নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য, মানুষও তা-ই, এবং সেই নিয়মগুলি ধ্রুব সত্য। কিন্তু, সব সময় অর্থনীতির নিয়ম মানতে রাজি হয়নি মানুষের মন। সেই মন সম্পর্কে সম্যক ধারণা না করে কী করে বুঝব অর্থনীতি! তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অর্থনীতির বিকাশ ঘটলেও অনেক জায়গাতেই কিন্তু এ ভয়ঙ্কর ভাবে বিফল। সেই ছিদ্র ধরেই বিহেভিয়রাল ইকনমিকস বা আচরণবাদী অর্থনীতির অনুপ্রবেশ, যেখানে চিন্তাধারার জ্যামিতিগুলো বার করে, তা দিয়ে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত বোঝানোর চেষ্টা চলে, যেটা শিবুদা করছেন।
তবে এখন এই চিন্তাধারাকে বোঝার সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ চলছে, কেন মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তিহীন আচরণ করে। আর তাতে হাত মিলিয়েছেন স্নায়ুবিজ্ঞানীরা, ক্ষেত্রটির নাম নিউরো-ইকনমিকস বা স্নায়ু-অর্থনীতি। তাঁরা দেখতে পেয়েছেন, মস্তিষ্কের বিভিন্ন সার্কিট আর নিউরোট্রান্সমিটার একটি বড়সড় কম্পিউটার তৈরি করেছে। তার অনেকটাই জন্মগত, পরিবর্তন করা যায় না, কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের মতো। মানুষের বড় হওয়া, পারিপার্শ্বিক বা শিক্ষা এতে ছাপ ফেলে মাত্র, কিন্তু গঠনটা একই থাকে। ঠিক যেমন বিভিন্ন সফটওয়্যারকে ইনস্টল করা যায় একই হার্ডওয়্যারে। আর এই হার্ডওয়্যারের গঠন মানুষ পেয়েছে বহু শতাব্দীর বিবর্তন থেকে, তাই মস্তিষ্কের অনেকাংশই মনুষ্যেতর প্রাণীদের মতো। উন্নত চিন্তাভাবনা দিয়ে সেই বিধির বিধানকে স্তিমিত করে দিতে পারে বটে মানুষ, কিন্তু সব সময় নয়। আর তারই সুযোগ নেয় ভোগবাদী পণ্য! কী ভাবে? শপিং মলে ঢোকার সময় একটি সুন্দর গান চালিয়ে দিয়ে! জামাকাপড়ের দাম বাড়িয়ে ডিসকাউন্ট দিয়ে! মানে আপনার বিবর্তনের সূত্রে পাওয়া প্রাচীন, প্রিমিটিভ ব্রেন নিয়ে খেলা করে যাচ্ছেন বিজ্ঞাপনদাতারা, বিপণনকারীরা। আপনি জানতেও পারছেন না।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। যে লিবারালিজ়ম মুক্ত অর্থনীতির জয়গান করে, গণতন্ত্রের ধ্বজা ধরে, তার অন্যতম ভিত্তি মানুষের মুক্ত সত্তা বা স্বাধীন ইচ্ছা। কিন্তু যখনই বুঝছি যে সেই চিন্তাগুলো একটা রূপরেখা অনুসরণ করছে মস্তিষ্কের কোষ দ্বারা চালিত হয়ে, মানুষের চিন্তা তা হলে আর মুক্ত রইল কই, হয়ে গেল কয়েকটি নিউরোসার্কিটপ্রসূত একটি নকশা মাত্র। আর আজকের এই যুগে একটা নকশার বা মডেলের খোঁজ পেলে, সেটা ব্যবহার করতে কত ক্ষণই বা লাগে। তাই আজ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা সোশ্যাল মিডিয়ার ডেটা দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের রফা করতে পারছে। আর আপনি মুক্ত অর্থনীতির, গণতন্ত্রের নামে হাততালি দিচ্ছেন এই ভেবে, আপনি আপনার পছন্দের জিনিসটি কিনলেন, পছন্দের ভোটটি দিলেন। আসলে কেউ এক জন সেটি আপনাকে দিয়ে করাল। আপনি ঠকলেন, বুঝতেও পারলেন না। ভাবার কথা না? শিবুদা ভাবাচ্ছেন।


ঋভু বসু
অধ্যাপক, আর জি কর
মেডিক্যাল কলেজ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘রাস্তাতেই কলেজ অনুষ্ঠান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (পৃ ১, ২৮-১১) কলেজটির নাম হুগলি উইমেন্স কলেজ। ভুল করে পিপুলপাতি উইমেন্স কলেজ লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Pension Allowance Economy Banking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy