চলে এল বৃহত্তম গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসব, লোকসভা নির্বাচন। কোটি কোটি সরকারি টাকা, লক্ষ লক্ষ ভোটকর্মী, হাজার হাজার পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর পরিশ্রম, দরকার কী এ সবের?
অন্য রকম ভাবা যাক না। এখন তো প্রায় সব কাজই ঘরে বসে অনলাইন করছি। জামা-জুতো, সব্জি, মশলা থেকে ট্যাক্সি ট্রেন প্লেনের টিকিট, এমনকি রান্না-করা খাবারও দরজায় হাজির। ব্যাঙ্ক লেনদেন, স্কুল কলেজে ভর্তি, এ ভাবেই হচ্ছে। শুধু দরকার একটা স্মার্টফোন আর তাতে যথাযথ অ্যাপ।
সফটওয়্যার তৈরিতে তো আমাদের জগৎজোড়া নাম, একটা ‘নির্বাচন’ অ্যাপ বানিয়ে, তার মাধ্যমে অনলাইন ভোট দেওয়ার বন্দোবস্তটা করলেই হল। ঘরে বসে চা খেতে খেতে, স্মার্টফোনের পর্দায় আলতো ছোঁয়ায় খুলে ফেলব অ্যাপ, জিপিএস জানিয়ে দেবে আমার এলাকার প্রার্থীদের নাম ও ছবি। পছন্দের নামে ক্লিক করলেই আসবে ওটিপি, এ বার ওটিপি ভরলেই ভোট দেওয়া সম্পূর্ণ। সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন দফতর থেকে ছোট্ট মেসেজে ভোটের প্রাপ্তিস্বীকার।
ভাবছেন, একটু খামতি থেকে গেল? বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, রিগিং কোথায় গেল? চিন্তা নেই, ওটা হ্যাকারদের উপর ছেড়ে দিন।
তবে আসুন স্লোগান দিই, দেব না লাইন, হোক অনলাইন!
শশাঙ্ক শেখর মৈত্র
কলকাতা-৬৪
কোন নীতি?
অর্থনীতিবিদ তথা সমাজকর্মী জঁ দ্রেজ় ও তাঁর দুই সহকর্মীকে আটক করার সপক্ষে পুলিশের যুক্তি: ‘অনুমতি ছাড়াই রাজনৈতিক সভা’ করছিলেন। এর বিপক্ষে কিছু যুক্তির মধ্যে এক জায়গায় জঁ দ্রেজ় বলেছেন, ‘‘তাঁহারা রাজনীতিক নহেন, রাজনৈতিক সভার আয়োজনও করেন নাই’’ (‘আইনের অজুহাতে’, সম্পাদকীয়, ১-৪)। জঁ দ্রেজ়ের এই যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে। অর্থনীতি আর রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য কেন টানলেন তিনি, নিজের অবস্থান নিরাপদে রাখতে? যদি রাজনৈতিক অবস্থান অস্বীকার করাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তবে তাঁর জীবিকা হিসেবে অর্থনৈতিক অবস্থান নিতান্তই পেশাদারি হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য হিসেবে সামাজিক অবদানও জোলো হয়ে যায়। তখন ওই পুলিশি আটকের কোনও গুরুত্বই থাকে না। সংবাদও গুরুত্ব হারায়।
অর্থনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনীতিবিদ রাজনীতি ছাড়া কোনও কথা বলতে পারেন? এ তো জল ছাড়া মাছের অবস্থান! সম্পাদকীয়তে প্রকাশ, গ্রামবাসীদের ‘খাদ্যের অধিকার’ বাস্তবায়িত করার বিষয়ে সচেতন ও সক্ষম করবার উদ্দেশ্যে সভাটির আয়োজন করা হয়েছিল। সম্পাদক ব্যাখ্যাও করেছেন, এই উদ্দেশ্য পরোক্ষে সরকারের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে। অর্থাৎ দ্রেজ় ও দুই সহকর্মী যখন গ্রামবাসীদের সচেতন ও সক্ষম করার চেষ্টা করছেন, তখন সরকারের ব্যর্থতাও প্রমাণ করছেন। বাস্তবে দুই উদ্দেশ্য অবিভাজ্য। এখন প্রশ্ন: এই ব্যর্থতা অর্থনৈতিক না রাজনৈতিক?
আমরা জানি, শাসক সরকার অরাজনৈতিক হতে পারে না। ভোট এলে তা বেশি বেশি করে জানি, যেমনটা এখন জানছি। সভায় শাসক সরকারকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করতে অর্থনীতির সমালোচনা করার সময়, সমালোচক অর্থনীতিবিদই ভাল ভাবে জানেন যে ওই অর্থনীতি হল শাসক দলের রাজনৈতিক অবস্থানপ্রসূত। শাসক দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে অর্থনৈতিক কর্মসূচি ও রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে কার্যত কোনও পার্থক্য থাকে না। এই অর্থনীতির সমালোচনা করব আর সেই সভা ও সমালোচনা অরাজনৈতিক হবে— এ অসম্ভব যুক্তি। এ বার প্রশ্ন, তা হলে কি দ্রেজ় দোষী? উত্তর: না। কেন?
সম্পাদক স্পষ্ট লিখেছেন, ‘‘সরকারের নীতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাইবার অধিকার গণতন্ত্রের একটি আবশ্যিক শর্ত।’’ ভারতে স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ করার অধিকার আছে। যদিও এই অধিকার নিরঙ্কুশ নয়, কিন্তু সম্পাদকীয়তে যে ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাতে দ্রেজ় অনুমতি চেয়ে তথা সংবিধান মেনেই কাজ করেছেন। তা হলে তিনি খামকা ‘‘রাজনীতিক নহেন, রাজনৈতিক সভার আয়োজনও করেন নাই’’ বললেন কেন?
বোঝা যাচ্ছে, আতঙ্ক কাজ করছে সর্বত্র। বিভিন্ন রকম আতঙ্ক। শাসক দল আতঙ্কিত। সৎ সমালোচক আতঙ্কিত। আমরা, উলুখাগড়া দর্শকের দলও আতঙ্কিত। আমরা দেখছি, পড়ছি, মন্তব্য করছি। ভাবছি, এই বুঝি আমাদের লক-আপে পুরে দিল পুলিশ। অথচ সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশে তা হওয়ার কথা নয়। নির্বাচনের আগে তো অবশ্যই হতে পারে না। এখনই তো সবাই প্রাণ খুলে মনের কথা বলবেন। প্রার্থীরা বলছেন, দলের নেতারা বলছেন। কেউ গাল দিচ্ছেন। কেউ ভয় দেখাচ্ছেন। সাধারণ নাগরিক গাল না দিয়ে, ভয় না দেখিয়ে, সুস্থ ভাবে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করতে পারবেন না? জঁ দ্রেজ় স্বীয় মত প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক মত। তিনি ‘অ্যাকটিভিস্ট’, অ-রাজনীতির অজুহাতের দরকার কী তাঁর?
শুভ্রাংশু কুমার রায়
ফটকগোড়া, হুগলি
ওঁরা
‘এই কি ওদের প্রাপ্য ছিল?’ (৩১-৩) শীর্ষক নিবন্ধ ভাল লাগল। আলোকোজ্জ্বল ভারতের সমান্তরালে যে স্বল্পপরিচিত আর এক ভারত, তারই খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন লেখিকা। ১৯৬১ সালে গুজরাতের কোঠি গ্রামের ‘তাদভি’ আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয় নর্মদা নদীর উপর বাঁধ নির্মাণের কারণে। স্বাধীনতার পর প্রথম ৪০ বছরে শুধুমাত্র বাঁধ নির্মাণের কারণে সহস্রাধিক আদিবাসী ঘরছাড়া হয়েছেন। ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পর, শিল্পের উন্নয়নের জন্য খনিজ সম্পদপূর্ণ প্রত্যন্ত এলাকা— যা অধিকাংশই আদিবাসী অধ্যুষিত, সেগুলি থেকে দ্রুত হারে উচ্ছেদ করা হয়েছে ভূমিপুত্রদের। ২০০৫ সালে গোয়ার এক গ্রাম আদভালপালের লাগোয়া সেশা খনিটি বেসরকারি সংস্থাকে লিজ়-এ েদওয়া হয়। খননের ফলে ভয়াবহ ধসে পুরো গ্রাম পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে স্ট্র্যাটেজিক হ্যামলেটিং-এর শিকার একমাত্র এই তফসিলি জনজাতিগোষ্ঠী। পাকুড় এবং পালামৌ গ্রামের ‘পাহাড়িয়া’ জনজাতি ব্রিটিশ সরকারের এঁটে দেওয়া তকমা অনুযায়ী আজও ‘ক্রিমিনাল ট্রাইব’। তাই তাঁরা পান না কোনও সামাজিক সুরক্ষা, প্রতিনিয়ত নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতেই তাঁরা ব্যস্ত। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার রাজমহল পাহাড়ের লাগোয়া গ্রামে পাঢ়িয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলারা সপ্তাহে দু’দিন ১৮ কিলোমিটার হেঁটে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে হাটে বিক্রি করতে যান। বাকি দিনগুলো ৬-১০ কিলোমিটার হাঁটেন পানীয় জল সংগ্রহের জন্য। তাঁদের আয়ুসীমা ৫০ বছরের বেশি নয়।
কিন্তু সুশিক্ষিত নাগরিক সমাজ এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণি কেন এঁদের জন্য সময় ব্যয় করবেন? তাঁদের নাগালের মধ্যে যে পরিচিত প্রান্তিক দরিদ্র সমাজ আছে তাকে নিয়ে তাঁরা লেখেন, ছবি তৈরি করেন, তার সম্পর্কে সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে হাততালি কুড়োন; অর্থাৎ এক কথায় সেই সমাজ তাঁদের মূলধন। কিন্তু আদিবাসী সমাজ! বছরে দু’এক বার তাঁদের গ্রামে গিয়ে ছুটি কাটানো যায়, মনোরম গেস্ট হাউসে বনফায়ারের সামনে বসে তাঁদের ট্র্যাডিশনাল নৃত্যকলা উপভোগ করা যায়, কিন্তু তাঁদের জন্য কাজ করা!
(ঋণস্বীকার ও সামগ্রিক তথ্যসূত্র: ‘অন্য দেশ’, সমৃদ্ধ দত্ত)
মৌমিতা সিংহ রায়
কলকাতা-১১০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘অনাস্থায় স্থগিতাদেশ পাননি অর্জুন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (পৃ ৫, ৩-৪) অর্জুন সিংহকে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বলা হয়েছে। তিনি ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী।
‘নজরে সাংসদ’ শীর্ষক গ্রাফিকে (পৃ ৫, ৩-৪) অপরূপা পোদ্দারের লোকসভা কেন্দ্র লেখা হয়েছে হুগলি। আদতে তাঁর কেন্দ্র আরামবাগ।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy