E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দেশসেবা অগ্নিমূল্য

স্বাধীনতার জন্য যাঁরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাঁরা কষ্টকে হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন। কত রাত ঘুমাননি, দিনের পর দিন অনাহারে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:০৯

‘বাড়ল সাংসদের বেতন ও পেনশন’ (২৫-৩) শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে কিছু কথা। দেশের মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে থাকেন, বিনা চিকিৎসায়, অপুষ্টিতে মারা যান। সে দেশে সাংসদদের বেতন মাসিক ১ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে হল ১ লক্ষ ২৪ হাজার। ভাতা, পেনশন-সহ অন্যান্য বিষয়েও তাঁদের আর্থিক সামর্থ্য বাড়ানো হয়েছে। এমনিতেই তাঁদের জন্য বিদ্যুৎ, জল, ফোন, ইন্টারনেট ‘ফ্রি’। বিমানে, সড়কে যাতায়াতের ভাড়াও সরকারের থেকে পান। ফ্ল্যাট বা বাংলো পান, নয়তো আবাসন ভাতা পেয়ে যান। এই খাতে দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়।

স্বাধীনতার জন্য যাঁরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাঁরা কষ্টকে হাসিমুখে গ্রহণ করেছেন। কত রাত ঘুমাননি, দিনের পর দিন অনাহারে থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কারাগারে গিয়েছেন, পুলিশের মার খেয়েছেন, গুলি খেয়েছেন বুকে-পিঠে। কিন্তু তাঁদের স্বপ্ন সফল হয়নি। এত অন্ধকার পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দেশে আলো ফোটেনি। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অন্ন, বস্ত্র-বাসস্থান-কর্মসংস্থান— সব ক্ষেত্রেই হাহাকার। স্বাধীন দেশে যাঁরা মানুষের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব নিলেন, তাঁরা সেই স্বপ্নপূরণের পরিবর্তে নিজেদের এবং পরিবারের নিশ্চিত আরামের জীবন তৈরি করতে মন দিয়েছেন! এখন দেশসেবা হয় অর্থের বিনিময়ে। এ কিন্তু আগে ছিল না। আবার এত পারিশ্রমিক নিয়েও তাঁরা দেশের কাজ করছেন কি? সংসদে প্রায়ই নিজেদের স্বার্থেই হাতাহাতি, ঠেলাঠেলি, অশালীন কথাবার্তার বন্যা দেখা যায়। সেখানে সাধারণ মানুষের সমস্যা কতখানি আলোচিত হয়?

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখে গিয়েছেন, “দেশসেবা কথার কথা নয় দেশসেবা মানবের শ্রেষ্ঠ সাধনা। স্বার্থ-গন্ধ থাকবে না, নাম-যশের আকাঙ্ক্ষা থাকবে না, প্রাণের ভয় পর্যন্ত থাকবে না, এক দিকে দেশসেবক নিজে, আর দিকে তার দেশ, মাঝে আর কিছু থাকবে না। যশ, অর্থ, দুঃখ, পাপ, পুণ্য, ভাল, মন্দ সব যে দেশের জন্য বলি দিতে পারবে, দেশসেবা তার দ্বারাই হবে।” সে কথা কারও মনে আছে? আমরা দেশসেবার দায়িত্ব নিয়েছি, বেতন প্রয়োজন নেই— এ কথা বলে কেউ প্রতিবাদ করলেন কি? কেউ বললেন না, এই ভাতা বা অর্থ সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করা হোক। মনে আছে অতীতে কিন্তু ভাতা বৃদ্ধির প্রতিবাদ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন জয়নগরের সাংসদ তরুণ মণ্ডল। সংবাদে প্রকাশিত হয়েছিল, সেই বর্ধিত বেতনের টাকা তিনি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করেছিলেন। তাঁর কেন্দ্রের দুঃস্থ ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাসোহারা বরাদ্দ করে দিয়েছিলেন।

নিখিল কবিরাজ, শ্যামপুর, হাওড়া

অনাচার চলছে

যাঁরা দেশ পরিচালনা করার দায়িত্বে আছেন সেই সাংসদদের বেতন ও নানা ভাতা সম্প্রতি এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সাধারণ মানুষকে সেবা করার দায়িত্ব নিয়ে তাঁরা ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে এসেছেন। নিজেদের নয়, তাঁদের সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধাই দেখার কথা। সাধারণ মানুষের চাহিদাগুলি অর্থের অভাবে যখন তাঁরা পূরণ করতে পারছেন না, তখন তাঁরা মানুষের সমস্যা ভাবার পরিবর্তে নিজেদের বেতন বাড়িয়ে নিলেন বা সুযোগ-সুবিধা আগেভাগেই নিয়ে নিলেন? এটা কেমন দায়িত্ববোধ বা নৈতিকতার পরিচয়? এ জন্য কি তাঁদের নির্বাচিত করে পাঠানো হয়েছে? তাঁরা তো জনগণের সেবা করতে এসেছেন বলে প্রচার করেন। এই কি সেই সেবার নমুনা?

স্কুল পড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিলের খাদ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর টাকা নেই। মিড-ডে মিল কর্মীদের ভাতা বাড়ানোর অর্থ নেই। কেরলে আশা কর্মীরা দিনের পর দিন অবস্থানে বসে আছেন বেতন বৃদ্ধির দাবিতে। সারা দেশেই সরকারি প্রকল্পগুলির কর্মীরা ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন, তাঁদের জন্য সরকারি কোষাগারে টাকা নেই। এই সমস্ত গরিব কর্মীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ যাঁরা জনগণের সেবার জন্য নির্বাচিত তাঁদের বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে, এই ঘটনা কোন ইঙ্গিত করে? সরকারি কোষাগারে টাকা নেই, এ কথা যে শুধু অজুহাত এতেই তো প্রমাণিত।

ক্ষমতা থাকলে নিজেদের সুযোগ-সুবিধাটুকুই শুধু দেখতে হবে এই স্বার্থপরতা দেখিয়ে নেতারা দেশের কাছে কী দৃষ্টান্ত রাখছেন? তাঁদের দেখে সাধারণ মানুষ কী বুঝবে, কী শিখবে? কোন পথে চলবে? অন্য দিকে, কম মজুরির কর্মীরা অনুদান বাড়ানোর দাবি করলে কাজ ছাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে, প্রতিবাদ বা আন্দোলন করলে তাঁদের উপর অত্যাচারের খাঁড়া নেমে আসছে। এ কেমন বিচার?

অনুরূপা দাস, পাঁশকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর

একজোটে নীরব

‘বাড়ল সাংসদের বেতন ও পেনশন’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত সংবাদ প্রসঙ্গে এই চিঠি। সাংসদদের বেতন বাড়ল। কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের থেকে এ নিয়ে কোনও বিরোধ এল না। প্রতিবাদও নেই, এ ক্ষেত্রে সকলে এককাট্টা ভাবে মৌন। এঁরাই নাকি প্রকৃত দেশসেবক! দেশসেবার এই সুযোগ পাওয়ার জন্য জনগণের কাছে করজোড়ে ভোট চান। তার পর ভোটে জিতে গেলে মাসে মাসে মোটা অর্থলাভ। আগে এক লক্ষ টাকা মাসিক বেতন পেতেন। এখন আরও ২৪ হাজার টাকা বেশি বেতন পাবেন।

আজ সারা দেশে এত বেকার, গরিব মানুষের আয় কিছুতে বাড়ছে না, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর দরকার, জিনিসপত্রের অত্যধিক দাম, ওষুধের দাম বাড়ছে, দুঃস্থদের ভাতা মাত্র মাসে এক হাজার টাকা, ১০০ দিনের কাজ কমছে, চাষির ফসলের ন্যায্য মূল্য নেই। সে সব দিকে উন্নতির দরকার ছিল। তা না করে নিজেদের বেতন নিজেরাই ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিলেন! এ কেমন অনিয়ম? আরও যে সব সুযোগ-সুবিধা পান সেই সবও বাড়ল। এর কি খুব প্রয়োজন ছিল?

বিদ্যুৎ সীট,জগদল্লা, বাঁকুড়া

মহিলা দলের জয়

ইস্টবেঙ্গলের মহিলা ফুটবলাররা দীর্ঘ ২১ বছর পরে দলকে ভারত-সেরা করল, শেষ বার ২০০৩-০৪ সালে ইস্টবেঙ্গল পুরুষ ফুটবল দল আই লিগে জয়ী হয়েছিল।

ভারতীয় ফুটবলে মহিলাদের কৃতিত্বকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে এআইএফএফ প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। জাতীয় লিগে জয়ী দল সরাসরি মহিলা এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে, যেখানে এশিয়ার অন্যান্য দেশে আয়োজিত জাতীয় লিগের বিজয়ী মহিলা দলগুলি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

এই দলের অধিনায়ক সুইটি দেবী এবং বাঙালিদের মধ্যে তৃষা মল্লিক, দেবলীনা ভট্টাচার্য, তিতলি সরকার, সুলঞ্জনা রাউল নিয়মিত খেলেছেন। জয়ী হওয়ার মানসিকতা নিয়েই ইস্টবেঙ্গল মহিলা ফুটবল দল শুরু থেকেই ঝাঁপিয়েছিল। সরাসরি এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে রাজ্যবাসীকে গর্বিত করল ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল। প্রমাণ হল, প্রতিভার অভাব নেই। তাই রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামো আরও উন্নত হোক এবং রাজ্য থেকে উঠে আসুন আরও অনেক মহিলা ফুটবলার।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Member of Parliament MP Indian Economy Central Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy