Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Environmental Pollution

সম্পাদক সমীপেষু: বাসযোগ্য নয় পৃথিবী

কেউ কেউ বাড়ির আবর্জনা এক জায়গায় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। এ যেন নিত্য দিনের ঘটনা। রাস্তায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে। চলন্ত গাড়ির হাওয়ায় আগুন ছড়িয়ে বিপদ ঘটাতে পারে।

An image of garbage dumping

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৫:১৮
Share: Save:

কতিপয় অসচেতন স্বার্থপর মানুষের জন্য প্রতিনিয়ত পরিবেশ হয়ে উঠছে বসবাসের অযোগ্য। রাস্তায় পা রাখলেই দেখা যায় রাস্তার কোণে বা কোনও দোকানের সামনে আবর্জনার ঢিবিতে আগুন জ্বলছে। রাস্তার দু’পাশে গজিয়ে ওঠা দোকানের মালিকরা দোকানের আর্বজনা, ছেঁড়া কাগজ, থার্মোকল, প্লাস্টিক, টায়ার ইত্যাদি বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলছেন। কেউ কেউ বাড়ির আবর্জনা এক জায়গায় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন। এ যেন নিত্য দিনের ঘটনা। রাস্তায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে। চলন্ত গাড়ির হাওয়ায় আগুন ছড়িয়ে বিপদ ঘটাতে পারে। তা ছাড়া বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে ঘরে ঘরে। কিন্তু কাউকে তেমন প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো মানুষ এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাঁরা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানোর ফলে নানা বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। বায়ুদূষণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, অ্যালার্জি, চর্মরোগ-সহ নানা জটিল রোগব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই দূষণে এক দিকে যেমন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হচ্ছে, তেমনই আর্থিক ও পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। ভারতে আইন আছে, কিন্তু আইনের সঠিক ব্যবহার নেই। বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮১ অনুযায়ী, রাজ্য সরকার খোলা জায়গায় গাছের ডাল এবং পাতা-সহ কঠিন বর্জ্য পোড়ানোর উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে। আবর্জনা পোড়ানোর জরিমানা হিসাবে প্রথম বার ১,০০০-২,০০০ টাকা এবং দ্বিতীয় বার ৫,০০০ টাকা ধার্য করতে পারে। ব্যবস্থা আছে আরও নানা প্রকার। কিন্তু, প্রশাসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারা উদাসীন।

এর থেকে মুক্তির উপায় আছে। শিশুদের ছোটবেলা থেকেই পরিবেশ সচেতন করে তোলা দরকার। বাড়ির পাশাপাশি সেই কাজে শিক্ষকদেরও বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে পথে নেমে কঠোর হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায়, আগামী দিনে অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে ঘোরাই আমাদের প্রত্যেকের ভবিতব্য।

প্রতাপচন্দ্র দাস, নবদ্বীপ, নদিয়া

পুনর্ব্যবহার

‘অভিনব জ্যাকেটে জি৭-এ নজরে মোদী’ (২২-৫) শীর্ষক সংবাদে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর বার্তা, “পুনর্ব্যবহারের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে পরিবেশ সুরক্ষার চাবিকাঠি।” পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল একাধিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গলিয়ে তাতে রং মিশিয়ে সুতো তৈরি করে তা দিয়ে বোনা হয়েছে মোদীর জ্যাকেটের কাপড়টি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে পুনর্ব্যবহারের ভাবনা চমৎকার। রেডিয়োতে বিজ্ঞান বিষয়ে অনুষ্ঠানে এমন এক রিসাইক্লিং-এর ভাবনায় শুনেছিলাম, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতলের ভিতর বালি ভরে ইটের মতো ব্যবহার, ধানকল থেকে তুষ বালি চুনাপাথর জল সহযোগে দেওয়াল, আখের ছিবড়ে দিয়ে কার্ডবোর্ড নির্মাণ ইত্যাদির কথা। ‘বিকল্প জ্বালানির দিশা বাঙালির’ (১৯-৫) সংবাদে আছে বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান অস্ত্র গ্রিনহাউস গ্যাস বা কার্বন ডাইঅক্সাইডকে রূপান্তরের কথা। এখানে কালনার বিজ্ঞানী মতিয়ার রহমানের আবিষ্কার ‘কৃত্রিম পাতা’, যা আসলে যন্ত্র, তা কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলের মিশ্রণে রেখে সূর্যালোক দিয়ে তরল জ্বালানি ইথানল ও প্রোপানল তৈরির কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে ভাগাড়ের আবর্জনা এক গুরুতর সমস্যা। এই জঞ্জাল বাড়ির বাইরে, শহরের বাইরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। চন্দননগরে উড়ালপুলের উচ্চতা প্রায় ১৩ মিটার। স্টেশন থেকে দেখা যায় উড়ালপুলের দু’দিকে জঞ্জালের পাহাড়। সেই জঞ্জালের প্লাস্টিক বৃষ্টির মতো উড়ছে উড়ালপুলের উপর। দিল্লি রোড থেকে এয়ারপোর্টের দিকে যেতে এক জায়গায় দেখা যায় টিন দিয়ে ঘেরা বিশাল উঁচু জঞ্জালের পাহাড়। প্রতিনিয়ত দূষণ ছড়াচ্ছে শহরগুলিতে। নিয়ন্ত্রণের উপায় এই আবর্জনার পুনর্ব্যবহার। অভিনব জ্যাকেট পরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একাধিক সমস্যার এক সঙ্গে মোকাবিলার কথা। দূষিত বস্তুর পুনর্ব্যবহার বিষয়ে কেন্দ্র, রাজ্য ও স্থানীয় স্তরের প্রশাসনের একত্র উদ্যোগের কথা জানলে উপকার হয়।

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

করবে কে?

অদিতি মুখোপাধ্যায়ের ‘বাসযোগ্য পৃথিবীর অঙ্গীকার’ (১৫-৫) পড়তে পড়তে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীনাথ বহুরূপীর কথা মনে পড়ল। সেখানে বাঘের রূপে বহুরূপী শ্রীনাথকে দেখে বাড়িতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সমস্বরে সকলে বলতে থাকে “লাঠি লাও, সড়কি লাও, বন্দুক লাও... লাও তো বটে কিন্তু আনে কে?” পরিবেশ সম্পর্কে আমাদের বর্তমান অবস্থাও তেমনই। লেখক বলেছেন, জলাভূমিকে রক্ষা করতে হবে, ফিরিয়ে আনতে হবে সবুজ পরিসর ইত্যাদি। কিন্তু করবে কে? সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু করতে গেলে পাড়া-প্রতিবেশী থেকে প্রশাসন সকলের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে ওঠে। লেখক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে অসাধারণ উদ্যোগ আশা করেছেন, তা একটি প্রায় অসম্ভব কাজ। তাঁরা জীবন ও জীবিকার লড়াইয়ে প্রতিনিয়ত বিধ্বস্ত। তাই তাঁদের ক্ষমতা বিদ্যালয়ের শিশুদের ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ প্রবন্ধ রচনা শেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। জলবায়ু বিজ্ঞানী লেখক মূল কারণটিকে চিহ্নিত করেছেন সুন্দর ভাবে। সমাজের এক থেকে পাঁচ শতাংশ মানুষের কার্বন ফুটপ্রিন্ট যখন বাকি ৯৫ শতাংশের চাইতে বেশি, তা হলে তার দায়ভার কি ওই পাঁচ শতাংশের উপর বর্তায় না?

যে কাজ অতি দ্রুত করা প্রয়োজন, তা শুধুমাত্র মানুষের সচেতনতার উপর নির্ভর না করে আইনি পথে করা দরকার। প্রত্যেক পুর এলাকার বাড়িতে ন্যূনতম দু’টি বড় গাছ না থাকলে অনুমোদন মিলবে না— এই আইন প্রয়োজন। রাস্তার ধারে পুরসভার উদ্যোগে গাছ লাগানো ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের কাজে লাগাতে হবে।

বীণাপাণি সিকদার, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

বিশ্বাসযোগ্য?

অদিতি মুখোপাধ্যায়ের ‘বাসযোগ্য পৃথিবীর অঙ্গীকার’ (১৫-৫) শীর্ষক প্রবন্ধে তাঁর বক্তব্যের ভিত্তি আইপিসিসি-র প্রতিবেদন। কিন্তু আইপিসিসি-র প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা কতখানি; গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটুকু? ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) অতীতে বহু বার মিথ্যাকথনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। আইপিসিসি নিজেরা কোনও গবেষণা করে না। তাই হাতফেরতা তথ্য নিয়ে কাজ করার চেয়ে প্রাথমিক উৎসের তথ্য নিয়ে কাজ করা অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য। ১৯৯০ এবং ১৯৯৫-এ তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্তকরণের সময় তারা বিজ্ঞান সাংবাদিকতার প্রাথমিক শর্তগুলিই মানেনি। কারণ, বিশ্ব উষ্ণায়নের কাহিনিকে প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় সরকারগুলির ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা উপস্থাপনে ওই কারসাজিটুকুর দরকার ছিল। রিয়ো ডি জেনিরো-তে আর্থ সামিটের আগে সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিসি প্রোজেক্ট সংস্থার ডা এস ফ্রেড সিঙ্গার সোজাসুজি জানিয়েছিলেন যে, আইপিসিসি-র প্রতিবেদনের অষ্টম অধ্যায়— বিশ্ব জলবায়ুতে মানুষের কাজকর্মের প্রভাব— প্রতিবেদনকারীদের বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে সম্পর্কবিহীন পূর্বানুমানের বহিঃপ্রকাশ। হিমালয়ের হিমবাহের গলন নিয়ে আইপিসিসি-র মিথ্যাচার সর্বজনবিদিত। প্লাবিত ধানখেত পৃথিবীর মোট মিথেন নির্গমনের ১১ শতাংশ— আইপিসিসি-র সেই তথ্যও পরে দেখা গেছে ভুল। ভারতীয়দের খোলা উনুনে রান্না করার অভ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ— সেই কথাও পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

তপন পাল, কলকাতা-১৪০

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE