E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: অনাদরের প্রদীপ

আগে দীপাবলি উপলক্ষে বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা নিজেদের হাতেই মাটির প্রদীপ তৈরি করতেন। কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রদীপ তৈরির কাজ শুরু হত। মা-ঠাকুমার পাশাপাশি প্রদীপ তৈরির কাজে বাড়ির অন্যান্য সদস্যও হাত লাগাতেন।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৫৪

দেশ জুড়ে এখন উৎসবের মরসুম। কিছু দিন আগেই শেষ হয়েছে দুর্গাপুজো। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোও পালন করা হয়ে গিয়েছে। আজ দীপাবলি। প্রথমেই বলে রাখি যে, দীপাবলি কিন্তু শব্দের আরাধনা নয়, বরং এই উৎসব আলোর রোশনাইকে কেন্দ্র করে উদ্‌যাপিত হওয়ার কথা। এই আলোর উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেকে মোমবাতি, প্রদীপ জ্বালান। বহু জায়গায় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক আলো, টুনি বাল্‌ব ব্যবহার করা হয়। তবে দীপাবলি বা কালীপুজোর রাতে গোটা দেশের পাশাপাশি আমাদের গ্রামবাংলার একাধিক গৃহস্থালিতে আজও মাটির তৈরি প্রদীপের ব্যবহার চোখে পড়ে। মাটির টানেই মাটির তৈরি প্রদীপের উজ্জ্বল দীপ্তি ছোট-বড় সকলের মন কাড়ে। চার পাশের উজ্জ্বল আলোর মাঝেও টিমটিম করে জ্বলা মাটির তৈরি প্রদীপের নরম আলো পরিবেশে সুন্দর একটা অনুভূতির জন্ম দেয়।

আগে দীপাবলি উপলক্ষে বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা নিজেদের হাতেই মাটির প্রদীপ তৈরি করতেন। কালীপুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রদীপ তৈরির কাজ শুরু হত। মা-ঠাকুমার পাশাপাশি প্রদীপ তৈরির কাজে বাড়ির অন্যান্য সদস্যও হাত লাগাতেন। সে ক্ষেত্রে ছোটদের দায়িত্ব থাকত সেগুলি রোদে শুকোতে দেওয়া এবং বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে প্রদীপগুলো গুছিয়ে তুলে আনা। এখন সময় বদলেছে। বদল এসেছে মানুষের চিন্তা-ভাবনাতেও। বাড়িতে এখন ও সবের পাট চুকেছে। সদস্য সংখ্যাও কমে গিয়েছে। এখন আর ক’জন নিজের হাতে মাটির প্রদীপ গড়ে সেগুলো ব্যবহার করেন? এ সব কিছুই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

তবুও দীপাবলি এলে এখনও বছরের বাকি সময়ের তুলনায় মাটির প্রদীপের চাহিদা বাড়ে। পাশাপাশি উৎসব উপলক্ষে আরও বেশি করে মোমবাতিও কেনেন লোকজন। সে ক্ষেত্রে মাটির জিনিসপত্র তৈরির কারিগর এবং মোমবাতি তৈরিতে যুক্ত এই ধরনের পেশাজীবীদের এই সময়টুকুতেই বাড়তি রোজগারের পথ কিছুটা সুগম হয়। তবে সমস্যা অন্যত্র। বর্তমানে বাজারে প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। প্রদীপ ও মোমবাতি তৈরির কাঁচামালের জোগানেও তার প্রভাব পড়ছে। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষের সংসার চালাতে খরচের পরিমাণ বাড়লেও, আয় সে ভাবে বাড়েনি। আগে অনেকেই প্রদীপ জ্বালানোর জন্য ঘি ব্যবহার করতেন। কিন্তু ঘিয়ের এখন যা দাম, তাতে মানুষকে বিকল্প খুঁজে নিতে হয়েছে— সর্ষের তেল। বর্তমানে তার দামও যথেষ্ট ঊর্ধ্বমুখী।

প্রতি বছর উৎসবের মরসুম এলেই বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম চড়চড় করে বেড়ে যায়। দীপাবলিতে তাই মাটির প্রদীপ জোগাড় করেও তুলনায় নিম্নবিত্ত মানুষদের অনেকেই সেটিকে জ্বালানোর বাড়তি খরচটুকু করতে পারেন না, চানও না। পরিবর্তে বাজারচলতি আকর্ষণীয় আলোগুলি বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। জ্বালানোর খরচ কম। বহু দিন ব্যবহারও করা চলে। লোকজন তাই সেই দিকেই ঝুঁকছেন। কোপ পড়ছে মৃৎশিল্পীদের এই বাড়তি রোজগারটুকুর পথেও।

সৌরভ সাঁতরা, জগদ্দল, উত্তর ২৪ পরগনা

আলোর উৎসব

দীপাবলিকে আলোর উৎসব বলা হলেও তা কেবল আলোতে সীমাবদ্ধ নেই। আলোর সঙ্গে যোগ হয় শব্দবাজির উৎসব। এত শব্দ, ধোঁয়া এবং এই ধোঁয়ার জেরে বায়ুদূষণকে কখনওই উৎসবের পর্যায়ে ফেলা যায় কি? অথচ, এই শব্দ ও ধোঁয়া ছাড়া দীপাবলির মতো উৎসব সম্পূর্ণ হয় না অনেকের কাছেই। ভাবটা এমন— আনন্দের সময়ে আবার পরিবেশ নিয়ে কিসের ভাবনা? তবে কেবল দীপাবলিতেই কি আটকে থাকে বাজির ব্যবহার? এর পরে ছট বা জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বাতাস ভরে ওঠে বারুদের গন্ধে। প্রবীণ ও শিশুরা ছাড়াও এই বাজির প্রভাব পড়ে পশুপাখিদের উপরেও। ২০২৩ সালে, রাজ্য সরকার সবুজ বাজির জন্য অনুমোদিত শব্দ সীমা ৯০ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করে। তা-ও আবার বিস্ফোরণের স্থান থেকে চার মিটার দূরত্বে। কিন্তু সবুজ শব্দবাজি বলে সত্যিই কিছু হয় কি?

অন্য দিকে, এই আলোর উৎসবের আগে বাজার ছেয়ে যায় আধুনিক বৈদ্যুতিক নানা আলোয়। এর জেরেই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপের ব্যবহার। মনে পড়ে শৈশবের দিনগুলোর কথা। কালীপুজোর বেশ কিছু দিন আগে থেকে পুকুরপাড়, মাঠ থেকে সংগ্রহ করা হত নরম কাদা-মাটি। তা দিয়ে বানানো হত প্রদীপ। তার পর সেগুলি রোদে শুকানো হত বেশ কিছু দিন ধরে। কাপড়ের টুকরো দিয়ে সলতে পাকিয়ে তাতে সর্ষে বা অন্য যে কোনও রান্নার তেল দিয়ে কালীপুজোর দিন জ্বালানো হত সেই প্রদীপ। শয়ে শয়ে সেই প্রদীপ পড়ত পুকুর ঘাটে, গরুর গোয়ালঘরে। এ ছাড়াও ছিল আকাশ প্রদীপ— কেরোসিনের কুপি বাঁশের ডগায় বেঁধে টাঙিয়ে দেওয়া হত। নিকষ কালো অন্ধকারে সেই লালচে আলো ছড়িয়ে পড়ত চার পাশে। সে সব আজ অতীত। গ্ৰামকে এখন গিলে খাচ্ছে শহর আর মাটির প্রদীপ হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিক আলোর রোশনাইয়ের সামনে।

সনৎ ঘোষ, বাগনান, হাওড়া

ঠাকুরের সন্দেশ

উৎসবের দিনগুলোতে ছোটবেলার স্মৃতি বার বার মনে পড়ে যায়। দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী— প্রতিটি পুজোই ছিল আমাদের কাছে উৎসবের সমার্থক। তখন সময়টা এত দ্রুত চলত না, জীবন ছিল ধীর, সহজ আর প্রাণবন্ত। দশমীর দিন সকাল থেকে পাড়ার মহিলারা নতুন শাড়ি পরে ঠাকুর বরণের জন্য প্রস্তুত হতেন। ঠাকুরের মুখে আর হাতে মিষ্টি, সন্দেশ দিয়ে তাঁরা পুজোর শেষ রীতিটি সম্পন্ন করতেন। সেই সময়ে আমরা কয়েক জন ছোট ছেলে ঠাকুরের পিছনে লুকিয়ে থাকতাম। কারও নজর এড়িয়ে ঠাকুরের হাত থেকে একটা সন্দেশ বা মিষ্টি তুলে মুখে দিয়ে মিলত অজানা সুখে। কারও চোখে পড়ে গেলে পড়ত ধমক, তার পর আবার হাসির রোল।

সেই সরল দিনগুলো এখন শুধু স্মৃতিতে বেঁচে আছে। আজকের ছেলেমেয়েরা মোবাইল, ভিডিয়ো গেম আর ডিজিটাল দুনিয়ায় বড় হচ্ছে। পাড়ার পুজোর সেই একাত্মতা, ঠাকুরের কাছে ধূপের গন্ধ, লুকিয়ে খাওয়া বরণের মিষ্টির স্বাদ— আগের মতো আছে কি?

মানিক সিংহ রায়, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া

বিপন্ন জীবন

‘নতুন ফাঁদ’ (২২-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। সরকারের কর্তব্য ও দায়িত্ব শুধু পরিবেশকে তার বর্তমান অবস্থাটি বজায় রাখতে সাহায্য করা নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাকে আরও উন্নত করাও। অথচ, বর্তমানে প্রশাসন যে সব আইন প্রণয়ন ও পদক্ষেপ করছে, তাতে অসাধু ব্যক্তিদের বিনা বাধায় কার্যসিদ্ধির পথটিই আরও সুগম হচ্ছে।

উন্নয়নের অজুহাত দেখিয়ে এই সব দুর্বৃত্ত সমাজের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত জলাশয়গুলিকে ক্রমশ গ্রাস করে ফেলেছে। পরিবেশ দূষিত হলে কেউই তার প্রভাব থেকে বাইরে থাকতে পারে না— এ বোধ সত্যিই কি এদের কারও নেই? বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বতর্মানে শহরে জলাশয়ের পরিমাণ কমে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে পৌঁছেছে। সেগুলিও ভরাট করে ফেললে আর থাকবে কী? যেখানে বতর্মান জলাশয়গুলিকে বাঁচানো যাচ্ছে না, সেখান নতুন জলাশয় খননের ভাবনা অলীক কল্পনার শামিল। প্রসঙ্গত, এর আগে উন্নয়নের নামে বহু জায়গায় গাছ কাটা হয়েছিল। তার পরিবর্তে নাকি লাগানো হয়েছিল পাঁচটি করে চারাগাছ। তেমনটা সত্যি হলে বহু স্থানই আজ বনাঞ্চলে পরিণত হত। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, নজরদারি হয়নি গাছ কেটে সত্যিই পাঁচটি চারাগাছ লাগানো হয়েছিল কি না। চারাগাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণও কি করা হয়েছিল? কতিপয় মানুষের কুকর্মের জেরে বতর্মান প্রজন্ম সুস্থ ভাবে জীবন কাটাতে পারবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

সজল কুমার মাইতি, কলকাতা-৯৭

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

deepabali lamp Diwali kalipuja

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy