E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: সেলাম, বিরাট রাজা

বিরাট কোহলি ১৪ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ১২৩টি টেস্টে ৯২৩০ রান করেছেন, যা ভারতের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ০৫:৫৪
Share
Save

ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট থেকে আকস্মিক অবসর গোটা দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর এই সিদ্ধান্তে ভারতীয় টেস্ট দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন নানা প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই তাঁর অবদানকে স্মরণ করাও সময়ের দাবি।

বিরাট কোহলি ১৪ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ১২৩টি টেস্টে ৯২৩০ রান করেছেন, যা ভারতের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ। তাঁর ৩০টি শতরান, ৭টি দ্বিশতরান এবং ৪৬.৮৫ গড় তাঁকে বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের শ্রেণিতে স্থান দিয়েছে। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, ২০১৪-১৫ অস্ট্রেলিয়া সফরে ৬৯২ রান এবং অধিনায়ক হিসাবে ২০১৮-১৯’এ ভারতের প্রথম অস্ট্রেলিয়া সিরিজ় জয়, এই দু’টি ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ক্যাপ্টেন কোহলি ভারতের টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে ৬৮টি টেস্টে ৪০টি জয়, ১১টি ড্র এবং মাত্র ১৭টি পরাজয়, পরিসংখ্যানের হিসাবে (সাফল্যের হার ৫৮.৮২%) তাঁকে শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক রূপে চিহ্নিত করেছে। বিরাট কোহলির অবসর ভারতীয় টেস্ট দলে এক বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি করবে। তবে তাঁর রেখে যাওয়া অনুপ্রেরণা, পেশাদারিত্ব ও জয়ের মানসিকতা আগামী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের পথ দেখাবে। তাঁর অবদান ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আমাদের ইচ্ছা, আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর এই কৃতিত্বকে যথাযথ সম্মান জানানো হোক এবং ভবিষ্যৎ-প্রজন্ম তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হোক।

প্রদীপ চক্রবর্তী, নৈনীতাল, উত্তরাখণ্ড

শূন্য হৃদয়

ভারত-অধিনায়ক রোহিত শর্মার অবসরের মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে অপ্রত্যাশিত ভাবে সকলকে চমকে দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে হেলায় বিদায় জানালেন সচিন-পরবর্তী জমানায় ভারতীয়‌ ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ তথা সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার বিরাট কোহলি। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ফিটনেসের তুঙ্গে থেকেও এই প্রজন্মের ব্যাটিং রাজার আচমকা অবসরের এই সিদ্ধান্ত শত্রুর মিসাইলের মতোই আছড়ে পড়েছে বিশ্বজোড়া ক্রিকেট অনুরাগীদের হৃদয়ে। সদ্য মহাতারকা রোহিতের পতনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আর এক মহাতারকা কোহলির ‘বিরাট’ বিদায়ে আরও অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে ভক্তের মন। লাল বলের ক্রিকেটে ১৪ বছরের আগ্রাসনে ভরা বহু স্মৃতিবিজড়িত এক বর্ণময় অধ্যায় শেষ হল। বরাবরের কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং স্বাস্থ্য-সচেতন বিরাট ৩৬ বছর বয়সেও ফিটনেসের মাপকাঠিতে হেলায় পিছনে ফেলতে পারেন ২০-২১’এর তরুণকে। ফর্মও যে একেবারে তলানিতে ছিল, তা নয়। ১০,০০০ রানের মাইলফলক থেকে ছিলেন মাত্র ৭৭০ রান দূরে। চাইলেই অনায়াসে আরও দু’-তিন বছর খেলতে পারতেন চুটিয়ে। কিসেরই বা এত তাড়া ছিল, ‘চিকু’? কেনই বা অগণিত ভক্তের হৃদয় চুরমার করে এত তাড়াতাড়ি টেস্টকে বিদায় জানালেন?

পৃথিবীর নিয়মে এক সময় সকলকেই থামতে হয়। কোহলিকেও হল। সত্যি বলতে, বড় খেলোয়াড়েরা জানেন, ঠিক কখন থামতে হয়। তাঁরা থামেন যাত্রাপথের শেষের খানিকটা আগে। যাতে কোনও প্রশ্ন না ওঠে। একই সঙ্গে পথের শেষটুকু অজানা থেকে যাওয়ার খেদ রয়ে যায়। সময় যত নিখুঁত হয়, অবসর ততই আকর্ষণীয় হয়। তা ছাড়াও কোহলির নিখুঁত টাইমিংয়ের কথা অজানা নয় ক্রিকেট বিশ্বের। টেস্ট কেরিয়ারের অন্তিম সিদ্ধান্তটাও নিখুঁত টাইমিংয়েই খতম করলেন ভক্তদের আদরের ‘চিকু’। আর, টেস্ট ক্রিকেটের পূজারি বিরাটের অবসরে ‘বিরাট’ শূন্যতা নেমে এল দেশের টেস্ট ক্রিকেটে।

সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

এটুকুই প্রাপ্য?

লাল বলের গ্রহ থেকে প্রস্থান ঘটল সর্বকালের অন্যতম সেরা এক প্রতিভার। টেস্ট ক্রিকেটের আকাশ থেকে চিরদিনের মতো অস্ত গেল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। সালটা ২০০৮, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল। ভারত প্রত্যক্ষ করল এক অল্পবয়সি ছেলের কী আগ্রাসী মনোভাব! মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখলাম ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে। তার পর ২০১১-য় টেস্টে অভিষেক। টানা চোদ্দোটা বছর অনেক তারকা ক্রিকেটার থাকা সত্ত্বেও সব দেশের বোলারদের প্রধান লক্ষ্যই ছিল বিরাটের উইকেট, বিশেষত সচিন-পরবর্তী জমানায় ভারতীয় ক্রিকেট টিমের স্তম্ভ হয়ে উঠেছিলেন। রক্ষণ এবং আক্রমণ দুটোতেই ছিল সমান দক্ষতা।

ভিভ রিচার্ডস দেখিয়েছিলেন কী ভাবে মাঠে প্রতিটা পদক্ষেপে বিপক্ষ দলকে দমিয়ে রাখা যায়। যা পরবর্তী কালে কিছুটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মনোভাব যাঁর মধ্যে উত্তুঙ্গ, তিনিই হলেন বিরাট কোহলি। যেন ভিভের প্রতিচ্ছবি। প্রতি পদক্ষেপে বিপক্ষকে জমিতে নামিয়ে আনার হুঙ্কার, যা যে কোনও অধিনায়কের সম্পদ। আগে দেখতাম নবাগত ক্রিকেটারদের সঙ্গে সিনিয়রদের একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতে, যেটা বিরাটের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো। জুনিয়দের উৎসাহ দেওয়া থেকে শুরু করে উৎসব— সবেতেই সামনে থেকে নেতৃত্ব।

এত বড় মাপের এক জন ক্রিকেটারের টেস্ট থেকে বিদায়টা বড়ই সাদামাঠা নয় কি? ১২৩টি টেস্টে ৯২৩০ রান, ১০০০০ রানের থেকে মাত্র ৭৭০ রান দূরে দাঁড়িয়ে হঠাৎ কেন বিদায়? না কি গভীরে অন্য কিছুর ইশারা আছে? কোচ গৌতম গম্ভীরের তারকা তত্ত্বে ঘোর আপত্তি, তাই কি অহংগত সমস্যা?

বিগত কয়েকটি সিরিজ় তাঁর পক্ষে সুখকর ছিল না, কিন্তু তাই বলে অবসর নেওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছিল কি? ধোঁয়াশা থেকে যায়। অধিনায়ক হিসাবেও দুর্দান্ত রেকর্ড। ৬৮ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৪০টিতে জয়— ক’জনের এই কৃতিত্ব আছে? সাত-সাতটা দ্বিশতরান! তাঁর এ রকম সাদামাঠা প্রস্থান ভক্তদের ব্যথিত করে। সিদ্ধান্তটা অবশ্যই তাঁর নিজের। কিন্তু তাঁর রাজকীয় বিদায় প্রাপ্য ছিল। বিপক্ষের কুর্নিশ আর সতীর্থ ক্রিকেটারের কাঁধে সাজঘরে যাওয়া— সেটাই হত যোগ্য। তার বদলে হঠাৎ সরে যাওয়া কেন?

স্বপন চক্রবর্তী, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া

প্রশ্ন থাকছে

শারীরিক সক্ষমতার দিক দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন বিরাট কোহলি। অনায়াসে তিনি লাল বলের ক্রিকেট চালিয়ে যেতে পারতেন— এ মত প্রায় সকল সাধারণ ক্রিকেট ভক্তদের। কোহলি জমানায় বিদেশের মাঠে ভারত সিংহবিক্রমে একের পর এক সিরিজ় জিতে ফিরেছে, বিপক্ষের দর্পচূর্ণ করে দিয়েছে। তাঁর আমলেই পেস বোলিং বিভাগ বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ হিসাবে বিপক্ষের ঘুম কেড়ে নেয়। রোহিত ও বিরাটের মতো মহান দুই ক্রিকেটারের এই ভাবে অবসর কি সত্যিই প্রাপ্য ছিল? ভারতীয় বোর্ড কি পারত না তাঁদের জন্য বিদায়ী টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করতে, আর একটু খেলে যেতে রাজি করাতে?

এই প্রশ্ন কিন্তু সব ক্রিকেটপ্রেমীর মনে উঠছে, উঠবে। এঁরা কি অবসর নিতে বাধ্য হলেন?

সৌগত কাঞ্জিলাল, রামপুর, বাঁকুড়া

ভাল সিদ্ধান্ত

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলির মতো দু’-দু’জন টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়াতে ভারতীয় ক্রিকেট অবশ্যই অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রতিভাবান ক্রিকেটার অগণিত। কিন্তু বড় ম্যাচ খেলার কাঠিন্য হঠাৎ পাওয়া মুশকিল, তাই কিছু ক্রিকেটারের বিকল্প চট করে মেলে না। তবে, আগে দেখতাম ধারাবাহিক ভাবে ব্যর্থ হলেও বোর্ড নামী ক্রিকেটারকে বসিয়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে পারত না। ব্যর্থ ক্রিকেটারও ফর্ম বিচার করে অবসর নিতেন না। এখন অবশ্য দু’পক্ষেরই মনোভাব বেশ পাল্টে গিয়েছে, যা ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে ইতিবাচক।

অরূপরতন আইচ, কোন্নগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Virat Kohli Indian Cricket

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।