Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Netaji Subhash Chandra Bose

সম্পাদক সমীপেষু: সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে

এই সমৃদ্ধ অতীতের যোগ্য উত্তরাধিকার বাংলা পায়নি, বরং সঙ্কীর্ণ রাজনীতি, কেন্দ্র-রাজ্য দোষারোপ, ভ্রান্ত নীতি, নৈতিকতাহীন হিংসার রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেকটা।

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৫৫
Share: Save:

অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকে বলে সোনার বাংলা’ (২০-১) নিবন্ধে লেখক কয়েক জন বিশিষ্ট বাঙালির নাম উল্লেখ করেছেন, যাঁরা বাংলা তথা বিশ্বে ছাপ ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন। কিছু কথা তিনি বলেননি, বা সচেতন ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৮ সালে জাতীয় যোজনা কমিটি গঠন করেন। এই ক্ষেত্রে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বিজ্ঞানসাধক মেঘনাদ সাহা। জওহরলাল নেহরু নিজে ছিলেন চেয়ারম্যান। যোজনা কমিটি বৃহৎ শিল্পের বিকাশ এবং প্রত্যেকটি অঞ্চলের প্রয়োজন অনুযায়ী শিল্পের প্রসারের কথা বলেছিল। মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে আরও কিছু সাব-কমিটি গঠিত হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণার জন্য। বিজ্ঞানচর্চা, বৃহৎ শিল্পের বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিল এই সব কমিটি। সুতরাং বলা যায়, এঁরা কখনও নিজেদের সঙ্কীর্ণ রাজনীতির মধ্যে আবদ্ধ রাখেননি, যদিও বৃহৎ শিল্পের বিকাশের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য সুভাষচন্দ্রকে গাঁধীপন্থীদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।

এই সমৃদ্ধ অতীতের যোগ্য উত্তরাধিকার বাংলা পায়নি, বরং সঙ্কীর্ণ রাজনীতি, কেন্দ্র-রাজ্য দোষারোপ, ভ্রান্ত নীতি, নৈতিকতাহীন হিংসার রাজনীতি পশ্চিমবঙ্গকে পিছিয়ে দিয়েছে অনেকটা। যে পশ্চিমবঙ্গ এক সময় ছিল শিক্ষায় অগ্রগণ্য এক রাজ্য, সেখান থেকে আজ আইএএস খুঁজে পাওয়া ভার! বাংলা তার ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছে। এই দীর্ঘকালীন অবক্ষয় থেকে পশ্চিমবঙ্গ আবার কবে উন্নয়নের পথে হাঁটবে, বলা মুশকিল। ‘সোনার বাংলা’ তো দূর অস্ত্।

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬

গোড়ায় গলদ

অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ভাল কথা। কিন্তু সঙ্কল্পের গোড়াতেই যে একটা গলদ আছে, সেটা বোধ হয় খেয়াল করেননি— অতীত থেকে বেরোতে না পারা। তিনি বলছেন, তাঁর “স্বপ্নের একটা বড় ধাপ রাজ্যের ‘সোনালি অতীত’।” কিন্তু সোনালি অতীতের পাশাপাশি বাংলার একটা কুৎসিত অতীত আছে— জাতপাতের ভিত্তিতে শোষণের। যার বৈশিষ্ট্য হল, জাতের ভিত্তিতে পেশার নির্ধারণ। এক দল লোক নিরন্তর খেটে যাবে, আর অন্য একটি ক্ষুদ্র অংশ সেই শ্রমের ফল ভোগ করে যাওয়ার জন্য তাদের ‘ছোট জাত’-এর পরিচয়ে বেঁধে রাখবে। এর জন্য মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ছোট জাতের লোক মানেই খারাপ, পাপী। এই অনুশীলনেই বাংলাভাষায় ঢুকে পড়েছে ‘চুরিচামারি’-র মতো শব্দ, অনির্বাণবাবুর মতো নতুন গতিপথের উদ্যোক্তাও যার ব্যবহারে অকুণ্ঠ, এবং অনায়াসে লিখে ফেলেন, “চুরিচামারি দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার চালিয়ে যাওয়ার কথা যাঁরা ভাবেন…” ইত্যাদি। চামার একটি জাত। এই জাতের লোকেরা বহু পরিশ্রমে জীবনধারণ করেন। তার সঙ্গে চুরির সম্পর্ক নেই। বরং যাঁরা এই শব্দবন্ধ আবিষ্কার করেছেন, তাঁদেরই টিকে থাকার ভিত্তি চামার এবং অন্য খেটে খাওয়া মানুষদের শ্রম চুরি। এই ‘ছোট ছোট’ বাঁধন থেকে নিজেদের মুক্ত না করে বড় মুক্তির স্বপ্ন দেখা চলে না।

মনোরঞ্জন পাত্র, কলকাতা-১৫৬

যাঁরা নেই

৩৪ বছরের বাম শাসন, ৯ বছরের তৃণমূলি শাসনের নিন্দা করলেও অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় তার আগের ৩০ বছরের কংগ্রেসি শাসন সম্পর্কে নীরব কেন? সেটাই কি আদর্শ ছিল? “স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন” লিখলেন বটে, কিন্তু এই স্বকপোলকল্পিত পরিকল্পনা সম্বন্ধেও নীরব রইলেন। বাংলার অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তির নাম উল্লেখ করলেন, কিন্তু কোনও সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম নেই। মাস্টারদা সূর্য সেন থেকে বিনয় গুপ্ত, দীনেশ মজুমদার, কারও নাম কেন উল্লেখ করলেন না? কারণ, তাতে লেখকের আদর্শস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা আতশকাচের নীচে এসে যাবে। সে বড় কেলেঙ্কারি কাণ্ড!

কুশল মিত্র, কলকাতা-৪

বিষবৃক্ষ

‘কাকে বলে সোনার বাংলা’ কৌতূহলোদ্দীপক রচনা। স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ নাকি পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘দীর্ঘমেয়াদি’ পরিকল্পনা করেছিলেন। এমন তথ্য জানা নেই। অতীতের যে দিকপালদের নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা সবাই প্রায় প্রাক্-স্বাধীনতা যুগের। দু’টি বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত, মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশভাগের মধ্যে যদি কেউ এ-পার বাংলার মানুষকে বাঁচার দিশা দিয়ে থাকেন, তিনি বিধানচন্দ্র রায়। সেই নামটি লেখক সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন। যে শ্যামাপ্রসাদকে অনির্বাণবাবুরা আদর্শ মনে করেন, তিনিই ছিলেন দেশভাগের মূল প্রবক্তা, আর বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অন্যতম জনক। নিজের ভুল পরে উনি স্বীকারও করেছিলেন। কিন্তু তখন যা সর্বনাশ হওয়ার, তা ঘটে গিয়েছে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতিতে আজ অসমে ১৯ লক্ষ বাঙালিকে ‘বেনাগরিক’ করা হয়েছে।
এবং সেই বিষবৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে এই বাংলায়।

আশিস সেনগুপ্ত, কলকাতা-৭৩

শুধু বিরোধিতা

শুভনীল চৌধুরীর ‘তোষণ হলে এমনটা হত?’ (২০-১) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। আরএসএস বা বিজেপির মতো দলগুলি বিরোধিতা করার জন্যই বিরোধিতা করে। অনেকটা সেই ‘নেকড়ে ও মেষশাবক’-এর গল্পের মতো— তুই না করলেও তোর ঠাকুরদা জল ঘোলা করেছে। নেকড়ের উদ্দেশ্য ছিল, মেষশাবকটিকে খাওয়া। এদেরও উদ্দেশ্য, যেনতেনপ্রকারেণ মুসলিমদের এ দেশ থেকে উৎখাত করা। আর এর জন্য যে বিষয়গুলি তারা বেছে নিয়েছে বা তৈরি করেছে, সেগুলি হল— লাভ জেহাদ, গো-মাংস ভক্ষণ, নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ইত্যাদি। আর ‘মুসলিম তোষণ’ বিষয়টি সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর সংখ্যাগুরুদের খেপিয়ে তোলার জন্য। বার বার একই কথা শুনতে শুনতে এক সময় মানুষ তো মিথ্যেটাকেই সত্যি বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে।

মুসলিম-বিদ্বেষের প্রবক্তারা আইন মানে না, মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে অস্বীকার করে। এরা যা বলে, সেটাই আইন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসাব্যবস্থা, শিশু ও নারীর সুরক্ষা ইত্যাদি আজ বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ সব ওদের ভাবায় না। শুভনীলবাবুর কোনও পরিসংখ্যান ও যুক্তি ওরা মানবে না। সাধারণ মানুষ যদি বোঝে, এই আশাটুকু করতে পারি।

রোশেনারা খান, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

প্লাস্টিকে প্রচার

প্রতি দিন নির্বাচনী জনসভা, পদযাত্রা, মিছিল চলছে। চলবে আগামী কয়েক মাস। প্রতিটি কর্মসূচি উপলক্ষে এলাকা সেজে ওঠে টন টন প্লাস্টিকের তৈরি দলীয় পতাকা ও ফ্লেক্সে। হালকা পতাকাগুলো খুব সহজেই বাতাসে উড়ে যায়। নিচু জমিতে, ড্রেনে যেমন জমা হয়, শেষ অবধি নদী বা সমুদ্রের জলে গিয়েও জমে। মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনামে দেখতে পাই, প্লাস্টিক খাওয়ার পরে পশু, পাখি বা সামুদ্রিক মাছের মৃত্যুর খবর। প্লাস্টিক ও ফ্লেক্স যে আমাদের পরিবেশের কতটা ক্ষতি করছে, তা নিয়ে ওয়াকিবহাল প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল। তা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলকে দেখা যায়নি প্লাস্টিকহীন কর্মসূচি পালন করতে। এ বার সময় এসেছে
সচেতন হওয়ার।

নন্দগোপাল পাত্র, সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Meghnad Saha Netaji Subhash Chandra Bose
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE