E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: নারীর বঞ্চনা

তালিবানি ব্যাখ্যায় ধর্মীয় শৃঙ্খলা মানে নারীকে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি রাখা। নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাধীন চলাফেরার অধিকার তো বহু আগেই তারা কেড়ে নিয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:২২

‘স্পর্শ করা বারণ, ধ্বংসস্তূপে আটকে আফগান মেয়েরা’ (৭-৯) শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে আঁতকে উঠলাম। আফগানিস্তানের ঘটনা আবারও দেখিয়ে দেয়, ধর্মীয় কট্টরপন্থা নারীদের কী ভাবে শৃঙ্খলিত করছে। সেখানে ঘোষণা হয়েছে— মহিলারা নাকি ‘স্পর্শযোগ্য নন’, তাই তাঁদের চিকিৎসা করতে পারবেন না পুরুষ ডাক্তাররা। অথচ, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সিংহভাগই পুরুষ চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল। ফলে অসুস্থ নারীরা চিকিৎসার সুযোগ থেকে কার্যত বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি নিছক কোনও সরকারি সিদ্ধান্ত নয়, বরং নারীর মৌলিক মানবাধিকারের উপর প্রবল আঘাত।

আসলে, তালিবানি ব্যাখ্যায় ধর্মীয় শৃঙ্খলা মানে নারীকে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি রাখা। নারীর শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাধীন চলাফেরার অধিকার তো বহু আগেই তারা কেড়ে নিয়েছে। এ বার চিকিৎসার মৌলিক অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যেখানে আধুনিক সভ্যতা নারী-পুরুষকে সমান অধিকার দেওয়ার জন্য সংগ্রাম চালাচ্ছে, সেখানে আফগানিস্তান একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে নারীদের কোনও নাগরিকত্বই অস্বীকার করছে। এটি শুধু নারীদের সমস্যা নয়, পুরো সমাজের বিপর্যয়। কারণ, যখন সমাজের অর্ধেক মানুষকে চিকিৎসা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত করা হয়— তখন গোটা দেশই অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। আফগান মেয়েদের এই দুর্দশা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ধর্মীয় মৌলবাদ যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন স্বাধীনতা, মানবতা ও যুক্তিবোধ— সব ভেঙে পড়ে। ওখানকার নারীদের বর্তমান অবস্থা বিশ্বের কাছে এক সতর্কবার্তা। যে কোনও দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে নারী অধিকারই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও যদি ধর্মীয় শাসনের নামে কুসংস্কার ও নারীবিদ্বেষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তবে সেই পথও শেষ পর্যন্ত অন্ধকারের দিকেই নিয়ে যাবে।

অতএব, এখনই সময় বিশ্ববাসীর সরব হওয়ার। নারীর চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাধীনতা কোনও অনুগ্রহ নয়, বরং মৌলিক অধিকার। তালিবানি শাসন যে ভয়ঙ্কর বর্বরতার নজির গড়ছে, তাকে শুধু আফগান নারীর সমস্যা ভেবে পাশ কাটালে চলবে না। মানবাধিকার রক্ষার লড়াইতে আমাদের সকলকেই যুক্ত হতে হবে— কারণ, অর্ধেক আকাশকে বঞ্চিত রেখে কোনও সমাজই এগোতে পারে না।

প্রতাপ চন্দ্র দাস, নবদ্বীপ, নদিয়া

নজরদারি হোক

মহানগরে বসবাসকারী নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সুরক্ষা বিষয়ক সম্পাদকীয় ‘প্রবীণ সুরক্ষা’ (৮-৯) বেশ ভাবিয়ে তুলল। সম্প্রতি নিউ গড়িয়ায় এজেন্সি নিযুক্ত পরিচারিকা কাজের বাড়িতে পুরুষ সঙ্গীকে ঢুকিয়ে এনে যথেষ্ট ভয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার পরে নড়চড়ে বসেছে পুলিশও। প্রবীণ নাগরিকেরা মহানগরে বাড়ি ভাড়া দিলে কি পরিচারক-পরিচারিকা রাখলে, ছবি-সহ অন্যান্য তথ্য এলাকার থানায় জানিয়ে রাখতে অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। প্রসঙ্গ ক্রমে উঠে এসেছে কলকাতায় বেশ কয়েক বছর আগে পুলিশের চালু করা ‘প্রণাম’ প্রকল্পের কথা। থানার নির্দিষ্ট সংখ্যক আধিকারিক ও কর্মী নিয়ে একটি দল গঠন করে প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত মানবিক যোগাযোগ রাখার ইতিবাচক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল কর্মচারী নিয়ে নিত্য দিন বিবিধ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নাভিশ্বাস ওঠা পুলিশের পক্ষে পরবর্তী কালে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সঙ্গে যথেষ্ট যোগাযোগ রাখা সম্ভব হয়নি।

সম্পাদকীয়তে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে মহানগরে সুশিক্ষিত প্রতিভাবান ও কৃতীদের পিতা-মাতার প্রতি, যাঁদের সন্তানদের যোগ্যতার কদর এই রাজ্য করতে পারেনি। তার ফলেই ওই সন্তানদের উড়ে যেতে হয়েছে সুদূর বিদেশে। তা ছাড়া, এ রাজ্যে সাধারণ মিল-কারখানায় কাজের সুযোগও প্রায় নিঃশেষিত। কাজের পরিবেশ অনুকূল না হওয়ার পাশাপাশি মজুরির হারও তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ার কারণে শ্রমিকদের চলে যেতে হয়েছে অন্য রাজ্যে। সম্প্রতি অন্য অনেক রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষীদের পক্ষে পরিবেশ প্রতিকূল হওয়ায় অনেকে ফিরে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তাঁদের ফিরতি ট্রেন অথবা বিমান ধরার দৃশ্য আমরা দেখেছি। বিনা কর্মসংস্থানে মাসে মাসে কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে মেরুদণ্ড ঝোঁকানোর সংস্কৃতি তাঁদের ধরে রাখতে পারেনি। এখানে যতই দেওয়া হয় নতুন কর্মসংস্থানের আশ্বাস, ততই বাড়ে ভিন রাজ্যে কর্মরত আইটি কর্মচারী, গবেষক ও শ্রমিকদের সংখ্যা। ফলে এই রাজ্যের অগণিত গৃহকোণে উদ্বেগ ও শঙ্কার প্রহর গোনেন তাঁদের প্রবীণ বাবা-মায়েরা। কিন্তু দুষ্কৃতীদের কিছু কমতি নেই মফস্‌সল শহর কি গ্রামগঞ্জে। সেই সঙ্গে আছে কুসংস্কারের ভয়াল বহিঃপ্রকাশ, রাজনৈতিক নির্যাতন। ফলে, কেবল মহানগরে কতিপয় মানুষকে অনিয়মিত ‘প্রণাম’ জানিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের সামাজিক সমস্যার সুরাহা হবে না।

বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি

দায়বদ্ধতা

‘প্রবীণ সুরক্ষা’ একটি সময়োপযোগী সম্পাদকীয়। এই প্রসঙ্গে বলি, আগে প্রত্যেক পরিবারের এক জন পারিবারিক চিকিৎসক থাকতেন। তাঁরা নিয়মিত বাড়িতে আসতেন এবং পরিবারের সকলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার দরুন চিকিৎসার অনেক সুবিধা হত। বর্তমানে চিকিৎসকরা আর বাড়িতে আসতে চান না। প্রবীণদের তো আর কথায় কথায় হাসপাতালে ভর্তি করা যায় না। তা ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনও অনেকাংশে স্পর্শভিত্তিক হওয়ার ফলে টেলি মেডিসিন অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকরা যদি অঞ্চলের প্রবীণদের কথা চিন্তা করে বাড়িতে চিকিৎসা করতে যান, তবে অনেক পরিবারের সুরাহা হয়।

নীলাঞ্জন চৌধুরী, কলকাতা-৫৪

নিরপেক্ষতা চাই

‘হিসাব না দিলেও অনুদান কেন, প্রশ্ন আদালতের’ (২৬-৮) এবং ‘হিসাব দিলেও তবেই মিলবে অনুদান, জানাল হাই কোর্ট’ (২৮-৮)— এই দুই প্রতিবেদন পড়ে জানা গেল, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যে সব পুজো কমিটিকে অনুদান দেওয়া হয়েছিল, তাদের কয়েকটি বাদে প্রায় সকলেই হিসাব দিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। একটু খোঁজখবর নিলেই জানা যায়, এই হিসাবের বিলগুলি কী ভাবে ‘তৈরি’ হয়। সুতরাং, বাকি পুজো কমিটিগুলিরও হিসাব পেশ করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

কিন্তু প্রশ্ন অন্য। একটি ঘোষিত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সরকারের ধর্মীয় বিষয়ে কোনও অবস্থান নেওয়াটা সঙ্গত? একটি মত হল, সকল রকম ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকা, যা জওহরলাল নেহরু মনে করতেন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে রাজেন্দ্র প্রসাদের মতানৈক্যের কথাও আমরা জেনেছি। অপর আর একটি অভিমত হল, সরকার সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই সমান ভাবে যোগ দেবে। বলা বাহুল্য, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন যে কেউ প্রথমটিকেই অধিক গুরুত্ব দেবেন। কারণ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসতে পারে।

এ ছাড়া শাসক দলের মনোভাবেরও প্রভাব পড়তে পারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে। তাই ইমামভাতা ঘোষণা হতেই, পুরোহিত ভাতা দেওয়ার দাবি ওঠে। অদূর ভবিষ্যতে, অন্যান্য আঞ্চলিক উৎসবে উদ্যোক্তারা যদি দাবি তোলেন, দুর্গাপুজোর মতো তাঁদেরও অনুদান দিতে হবে, তখন সেই দাবিকে অস্বীকার করা কঠিন হবে। সমাজে পাশাপাশি বাস করা বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেও সে ক্ষেত্রে বিদ্বেষ দেখা দিতে পারে। অথচ, এত দিন তো পুজো-সহ অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব সরকারি অনুদান ছাড়াই হয়েছে। সুতরাং, সুস্থ সমাজের স্বার্থে এ বার বোধ হয় এ বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রশান্ত দাস, অনন্তপুর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

afganistan taliban

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy