Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: শূন্য ভারতেরও

তিনি গ্রিক ও আরবে সংখ্যামালা লেখার ক্ষেত্রে সেই সময়ে এক লক্ষের বেশি সংখ্যার মান প্রকাশের সীমাবদ্ধতা ছিল বলে জানিয়েছেন।

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১০
Share: Save:

ভাস্কর চক্রবর্তী তাঁর ‘আধার অতি কঠিন পরীক্ষা’ (২৫-১) নিবন্ধে আলোচনা শুরু করেছেন কৌতুকের আবহে, বলেছেন শূন্য আবিষ্কার ও আধার কার্ড আবিষ্কার ভারতের কৃতিত্ব, তার পরে লিখেছেন ‘...প্রথমটায় না-হয় একটু চোট্টামি আছে’। এই শব্দচয়ন আপত্তিকর।

শূন্য নিয়ে কথা বলতে গেলে, ১) শূন্যের ধারণা বা উপলব্ধি, ২) শূন্যকে সংখ্যা হিসেবে গণ্য করা, ৩) সংখ্যাগুলির মধ্যে শূন্যের স্থান ও মান নির্ণায়ক অবস্থান; যেমন একের পরে একটি শূন্য দিলে ১০, দুটি শূন্য দিলে ১০০, তিনটি দিলে সহস্র ইত্যাদি, দশমিক পদ্ধতির ব্যবহার, ৪) কোনও সংখ্যার সঙ্গে শূন্যের যুক্ত, বিযুক্ত ও গুণ হওয়া এবং শূন্য দিয়ে বিভক্ত হওয়ার ধর্ম, ৫) শূন্যের ‘০’ চিহ্ন (প্রতীক) হিসাবে পরিচিতি— সবগুলো আলোচনা করলে, উল্লিখিত ২, ৩ এবং ৪-এর ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় গণিতজ্ঞদের অবদান সম্পর্কে কোনও বিতর্ক নেই। সুমেরীয়দের থেকে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতা ও ভারতে ‘নাই অথবা খালি’র (emptiness or void) ধারণা চিন্তার বিষয় ছিল। বিন্দুর সংজ্ঞায় দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা নেই, এই রকম কল্পনায় কীভাবে তাকে প্রকাশ করা যাবে সমসাময়িক সভ্যতায় আলোচনার বিষয় ছিল।

আর্যভট্ট (৪৭৬-৫৫০ খ্রিস্টাব্দ) স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সজ্জায় ১ থেকে ১০-এর পরে ১৮টি শূন্য বিশিষ্ট সংখ্যামালার লিখনপদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই সাংখ্যমান প্রকাশ ছিল বর্ণভিত্তিক। গণিতের এই ধারাকে বিস্তৃত করেন ব্রহ্মগুপ্ত (৫৯৮-৬৭০)। আরও সরলীকরণ করে শূন্যসহ দশটি সংখ্যার নিজস্ব মান ও স্থান-মান প্রকাশে সক্ষম হন। প্ৰখ্যাত গণিতবিদ, দার্শনিক, পদার্থবিদ ও ভারততত্ত্ববিদ আলবেরুনি (৯৭৩-১০৪৮) মুক্ত কণ্ঠে ভারতের গণিতচর্চার নানা দিকের আলোচনার সঙ্গে বর্ণভিত্তিক বড় সংখ্যার প্রকাশ ও অঙ্ক (digit) ভিত্তিক সংখ্যার প্রকাশে ভারতের মৌলিক অবদানের কথা লিখে গিয়েছেন। একাদশ শতাব্দীতে সেই সময়ে এক শ্রেষ্ঠ আরব পণ্ডিত ভারতে তো এমনি এমনি তেরো বছর কাটাননি। তিনি গ্রিক ও আরবে সংখ্যামালা লেখার ক্ষেত্রে সেই সময়ে এক লক্ষের বেশি সংখ্যার মান প্রকাশের সীমাবদ্ধতা ছিল বলে জানিয়েছেন।

ব্রহ্মগুপ্তের রচনা ‘ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত’ অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসিদের খলিফা আল-মানসুর বাগদাদে তাঁর নবনির্মিত শিক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান। ভারতীয় গণিত ও জ্যোতিৰ্বিদ্যা ইসলাম জগতের কেন্দ্রে বিজ্ঞান ও গণিতের উন্নতির সহায়ক হয়ে ওঠে। ব্রহ্মগুপ্ত ‘০’-কে সংখ্যারূপে গণ্য হওয়ার অধিকারী করেন। তার পূর্বে ‘শূন্য’ কেবল স্থানিক চিহ্ন হিসেবে (place holder digit) ব্যবহৃত হত। গ্রিক ও রোমানরা সংখ্যার অনুপস্থিতিতে শূন্যচিহ্ন hyphen দিয়ে ব্যবহার করতেন। একটি সংখ্যা থেকে সেই সংখ্যা বিয়োগ করলে, শূন্যকে কোনও সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে শূন্য মান হবে এ-কথা ব্রহ্মগুপ্তই প্রথম বলেন। শূন্যের স্থানিক মানের ব্যবহার বা বড় সংখ্যা লেখার ক্ষেত্র নিয়ে ভারতের গণিতবিদদের মতো সরল ভাবে কেউ নির্ণয় করেননি। রোমানীয় ষষ্ঠিক পদ্ধতিতে লিখনপ্রণালী একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। ফরাসি গণিতজ্ঞ পিয়ের-সিমঁ লাপলাস-এর (১৭৪৯-১৮২৭) কথায়, ‘...যে কোনও সংখ্যার প্রকাশের পদ্ধতি দশটি অঙ্ক দিয়ে স্থান-মান ও সাংখ্যমান উদ্ভাবন ভারতে। আজ যা এত সরল ভাবে প্রকাশিত, তার তাৎপর্য ও মহিমার আর আমরা প্রশংসা করি না। গণনার পদ্ধতি যে-ভাবে ভারতে হয়েছিল তা গণিতের পক্ষে এক অতি প্রয়োজনীয় আবিষ্কার।’

সপ্তম শতাব্দীতে ভারতে ১, ২, ৩, ৪,...০ অঙ্ক সৃষ্ট লিখনপদ্ধতি মধ্যপ্রাচ্যের গণিতবিদ আল খোয়ারিজমি এবং আল কিন্দির হাত ধরে ইউরোপে প্রবেশ করে। ইউরোপে দ্বাদশ শতাব্দী থেকে দশ অঙ্ক নিয়ে গণনা শুরু হয়ে যায়। বিশ্বের মান্য গণিতজ্ঞরা সেই জন্য এগুলিকে ‘হিন্দু-আরাবিক নিউমেরালস’ বলেছেন। আলবেরুনি ভারত ভ্রমণের সময়ে এক একটি প্রদেশে ১ থেকে ৯ প্ৰদেশভিত্তিক সংখ্যাচিহ্ন ও ০-র লিপির উল্লেখ করেছেন।

হাতির মুণ্ড শিশুর মাথায় লাগনো বা ঢেঁকিকে উড়োজাহাজ বানিয়ে উড়ে বেড়ানো ‘প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার’ বলা যেমন উদ্ভট, তেমনই ভারতের আবিষ্কারকে তাচ্ছিল্য করাও ঠিক নয়।

কান্তপ্রসাদ সিংহ, কলকাতা-৬৪

বাজেট ও প্রবীণ

আগামী বছরের বাজেট পেশ হল। কিছু টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রে বলা হল প্রবীণ মানুষদের জন্য সরকার কিছু সুবিধা ঘোষণা করেছেন। দেখা যাক কতটুকু সুবিধা আসলে পাওয়া গেল। প্রথম কথা ব্যাংকে জমা টাকার উপর সুদ বাড়েনি। অবশ্য বাড়েনি বললে ভুল হবে, কারণ যাঁরা এক কোটি টাকার উপর মেয়াদি জমা রাখবেন তাঁদের জন্য সরকারি ব্যাংকগুলিতে বেশি সুদ দেওয়া হচ্ছে। মনে হয় যাঁদের বেশি টাকা আছে, তাঁদের প্রয়োজন বেশি বলে এই ব্যবস্থা। অবসরপ্রাপ্ত মোট মানুষদের মধ্যে কেবল অল্পসংখ্যক মানুষ পেনশনভোগী। অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিগণ অবসরকালীন যৎসামান্য টাকা ডাকঘরে বা ব্যাংকে রেখে তার থেকে প্রায় চোদ্দো থেকে সতেরো শতাংশ সুদ পেয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন, সেই সুদ প্রায় অর্ধেক করে দিয়ে এখন ৮ শতাংশ সুদ দিয়ে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বয়ঃবন্দনা যোজনা। এ বার দেখা যাক এই বাজেটে প্রবীণদের কী সুবিধা দেওয়া হল। ১) পেনশন থেকে আয়করে ৪০ হাজার টাকা স্টান্ডার্ড ডিডাকশন। এই সুবিধা পাবেন কেবল মুষ্টিমেয় পেনশনভোগী। বাকি অগণ্য অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এই সুবিধা পাবেন না, অবশ্য পেয়েও লাভ নেই, কারণ এঁদের প্রায় সকলের আয় আয়কর সীমার নীচে। ২) স্বাস্থ্যবিমায় ছাড়ের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। গত বছর থেকে স্বাস্থ্যবিমার মাশুল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় বয়স্ক ব্যক্তিদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিমা বন্ধ করে দিয়েছেন বা প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য নির্ধারিত বাৎসরিক মাত্র দেড় লক্ষ টাকায় সীমাবদ্ধ স্বাস্থ্যবিমা করতে বাধ্য হয়েছেন। এই বিমার বাৎসরিক মাশুল স্বামী ও স্ত্রী দু’জনের জন্য পনেরো হাজার টাকার মতো, অতএব সামান্য কিছু উচ্চ বিত্তশালী ছাড়া অন্য কারও এই ছাড়ে লাভ হয়নি। ৩) সেভিংস ব্যাংকের জমায় সুদের ছাড় দশ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা করা হয়েছে। সেভিংস ব্যাংকে সুদের হার বছরে সাড়ে তিন শতাংশ। এই সুদে সকলের জন্য বর্তমানে আয়করে দশ হাজার টাকা ছাড় রয়েছে। আকাউন্টে এক বছর ধরে ২৮৫৭১৫ টাকা জমা রাখলে ১০ হাজার টাকা সুদ হয়। মনে হয় না অবসরপ্রাপ্ত কোনও প্রবীণ ব্যক্তি এই পরিমাণ টাকা মেয়াদি জমায় না রেখে সেভিংস অ্যাকাউন্টে ফেলে রাখেন। প্রবীণ ব্যাক্তিদের জন্য এই ছাড় পঞ্চাশ হাজার টাকা করা মানে সেভিংস অ্যাকাউন্টে সাড়ে তিন শতাংশ সুদে এক বছর ধরে প্রায় ১৪ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা ফেলে রাখলে এই ছাড় লাভ করা যাবে। এই ছাড়ের ঘোষণা কি প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিহাস নয়? এর পরেও কি অর্থমন্ত্রী বলবেন, ‘যাঁরা আমাদের যত্ন নিয়েছেন এ বার তাঁদের যত্ন নেওয়াই সন্মান জানাবার অন্যতম উপায়।’

প্রভাত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৩

অন্যরাও ফোনে

মুর্শিদাবাদে মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন এখন যথেষ্ট তৎপর। বাসের গতি বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। ড্রাইভিং করার সময় ড্রাইভার মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন কি না, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন কি না, হঠাৎ হঠাৎ চেকিং হচ্ছে। কিন্তু ট্রাক এবং অন্যান্য চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে কেন এ ধরনের চেকিং হবে না? মোটর বাইকই বা বাদ যাবে কেন? এ-সমস্ত গাড়ির বহু চালক আরও বেশি মোবাইল ব্যবহার করেন। নিজেরা ও অন্যরা বিপদে পড়েন, ভাবেন না।

কৃষ্ণা কারফা, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mathematics Zero Indian Discovery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE