Advertisement
E-Paper

আঘাতটা ভিতরে লেগেছে

যা ঘটেছে, তা আসলে কোনও একটা কলেজে কোনও একটা মূর্তি ভেঙে যাওয়া নয়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার এই ঘটনা আসলে একটা বৃহত্তর প্রতীক।

এই ক্ষতস্থান সহজে ভরাট করা যাবে না। —ফাইল চিত্র।

এই ক্ষতস্থান সহজে ভরাট করা যাবে না। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০০:৩৪
Share
Save

কারা ঘটাল, এই প্রশ্ন ঘিরে দু'পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর চলছে। এ আমাদের পক্ষে খুব লজ্জাজনক। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙল যারা, আমাদের প্রশাসন তাদের চিহ্নিত করতে পারল না এখনও, এতে অপরাধবোধ আরও বেড়ে যাচ্ছে। সমস্ত সংশয় উত্তীর্ণ হয়ে সবাই মিলে যত ক্ষণ না কাঠগড়ায় তুলতে পারছি আমরা অর্বাচীনদের, তত ক্ষণ এ অপরাধবোধ আমাদের যাওয়ার নয়। কিন্তু অপরাধী কে, তা নিয়ে সংশয় যতই থাক, ঘটনাটা যে অভাবনীয় মাত্রায় দুর্ভাগ্যজনক, সে বিষয়ে কোনও বাঙালির বোধ হয় সংশয় নেই। দুটো রাজনৈতিক দলের মধ্যে সঙ্ঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, আত্মঘাতী হয়ে উঠলাম আমরা, নিজেদের ঐতিহ্য, শিক্ষা-দীক্ষা তথা বোধের শিকড়েই কুঠারাঘাত করলাম। একটু থমকে দাঁড়িয়ে এখনও কি ভাবব না, কোথায় নেমে যাচ্ছি আমরা রাজনীতির নামে? এখনও কি বুঝব না, রাজনীতি আমাদের স্বার্থে পরিচালিত হবে, আমরা রাজনীতির স্বার্থে নই!

যা ঘটেছে, তা আসলে কোনও একটা কলেজে কোনও একটা মূর্তি ভেঙে যাওয়া নয়। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার এই ঘটনা আসলে একটা বৃহত্তর প্রতীক। নৈরাজ্যে কতটা বুঁদ হয়ে গেলে এই রকম দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়া যায়, এই ভাবে আত্মঘাতী হয়ে ওঠা যায়, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ফেলার পাপটা তার পরিমাপ। এ বার অন্তত হুঁশ ফেরা দরকার। নির্বাচন একটা স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা আসবে-যাবে, কিন্তু তার জন্য আমাদের জীবনের গতিকে বদলে যেতে দেওয়া যাবে না। জগৎ সংসারের সব বোধবুদ্ধি, শিক্ষা-দীক্ষা ভুলে গিয়ে শুধু নেতা বা নেত্রীর মুখটা দেখতে পাচ্ছি, আর কোথাও কিছু নেই, কোনও কিছুর মূল্য নেই— এতটা দৈন্যের মধ্যে নিজেদের স্থাপিত করার নাম আর যা-ই হোক, রাজনীতি নয়।

নতুন একটা মূর্তি নিশ্চয়ই তৈরি হয়ে যাবে বিদ্যাসাগর কলেজে। কিন্তু সে তো বহিরঙ্গের ক্ষতিপূরণ হবে। আসল ক্ষতি তো হয়ে গিয়েছে অন্তরে। প্রথমত, অন্তরে ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলেই এমন ধুন্ধুমারে মেতে উঠতে পেরেছি আমরা। দ্বিতীয়ত, এই ধুন্ধুমারে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে যা, তা আমাদের অন্তরকে আরও রক্তাক্ত করেছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগর মূর্তি ভাঙা নিয়ে অমিত শাহের সমর্থনে একটি কথাও বললেন না মোদী

বিদ্যাসাগর আমাদের নবজাগরণের দূত। বিদ্যাসাগর না এলে আজ বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ঠিক কী পরিস্থিতিতে থাকত, আমরা জানি না। বিদ্যাসাগর নারীশিক্ষা প্রসারের পুরোধা, বিদ্যাসাগর বাল্য বিবাহ রোধ আন্দোলনের অগ্রণী, বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ প্রচলনের পথিকৃৎ। নৈরাজ্যে ভূতগ্রস্ত হয়ে যদি সেই অসীম অবদান ভুলি ক্ষণেকের জন্যও, তা হলেও পিছিয়ে যাই শতাধিক বছর। মনে হয়, মৌলিক ভাবে শুদ্ধ হয়ে উঠতে এখনও পারিনি।

আরও পড়ুন: মূর্তি ভাঙা নিয়ে জোর তরজা, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রশ্নবাণে বিদ্ধ বিজেপি-তৃণমূল-পুলিশ

যে ক্ষতস্থান তৈরি হল, তা ভরাট করা বড় সহজ হবে না। কিন্তু এই মুহূর্ত থেকে যদি ক্ষতটার যত্ন নিতে শুরু না করি, তা হলে বিপদ আরও বাড়বে। কোনও মহত্বের উত্তরাধিকার বহন করার শক্তি ভবিষ্যতে আমাদের থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেবে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় BJP TMC Mamata Banerjee Amit Shah Vidyasagar College Vandalization Kolkata Rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy