Advertisement
E-Paper

তিক্ত শর্করা

পরীক্ষার ব্যবস্থার সহিত প্রয়োজন চিকিৎসারও। এই রাজ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রহিয়াছে, জাতীয় গড় ২১ শতাংশ। তাহার অর্থ, রোগ নির্ণয় হইবার পরেও তাহার যথাযথ চিকিৎসায় অবহেলা হইতেছে।

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৯ ০০:০১
সতর্ক থাকুন ডায়াবিটিসে। ছবি: শাটারস্টক।

সতর্ক থাকুন ডায়াবিটিসে। ছবি: শাটারস্টক।

ভারতে মৃত্যুর এক প্রধান কারণ, অজ্ঞানতা। রোগ যে শরীরে বাসা বাঁধিয়াছে, অনেকেই তাহা অবগত নহেন। ফলে চিকিৎসা হয় না, রোগ গুরুতর হইয়া অকালমৃত্যু ডাকিয়া আনে। এক সর্বভারতীয় সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে, ডায়াবিটিস বা মধুমেহ-তে আক্রান্ত মানুষদের প্রায় অর্ধেকই জানেন না যে তাঁহাদের রক্তে শর্করা বাড়িয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি অধিক হতাশাজনক। ডায়াবিটিস হইয়াছে, সে বিষয়ে অবহিত মাত্র ৪২ শতাংশ, কোনও চিকিৎসা করাইয়াছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। যাঁহাদের তথ্য গৃহীত হইয়াছে, তাঁহাদের বয়স পঞ্চাশের কম। অর্থাৎ তরুণদেরও একটি বড় অংশ অজ্ঞাত অসুখ লইয়া ঘুরিতেছেন। উচ্চ শর্করা শরীরের নানা প্রত্যঙ্গের, বিশেষত বৃক্ক (কিডনি), চক্ষু এবং স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষয় করিতেছে, তাহা জানেন না। দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তশর্করা হৃদ্‌রোগের সম্ভাবনাও বাড়াইয়া দেয়। ২০১০ সালে ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ ও মধুমেহ নিয়ন্ত্রণের জাতীয় প্রকল্প গ্রহণ করিয়াছে ভারত সরকার। তাহার অধীনে জেলায় জেলায় বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থাও করিবার কথা। কিন্তু হইয়াছে কি? বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকাশ, রক্তে উচ্চ শর্করার ন্যায়, উচ্চ রক্তচাপও অনির্ণীত থাকিতেছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা অধিকাংশ মস্তিষ্ক স্ট্রোকের কারণ, বলিতেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অথচ ভারত-সহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে যাহা চিকিৎসিত হইলে সহজে নিরাময় অথবা নিয়ন্ত্রিত হইত, সেই সব রোগ অপরীক্ষিত থাকিতেছে।

পরীক্ষার ব্যবস্থার সহিত প্রয়োজন চিকিৎসারও। এই রাজ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রহিয়াছে, জাতীয় গড় ২১ শতাংশ। তাহার অর্থ, রোগ নির্ণয় হইবার পরেও তাহার যথাযথ চিকিৎসায় অবহেলা হইতেছে। এই চিত্র উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, এমনকি যক্ষ্মার মতো সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রেও সমান সত্য। প্রধান কারণ, এই সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন সম্পর্কে মানুষ যথেষ্ট অবহিত নহেন। রক্তে উচ্চ শর্করা বা উচ্চ রক্তচাপ তাঁহারা আর পাঁচটি ব্যথা-বেদনার ন্যায় জীবনযাত্রার অঙ্গ হিসাবে মানিয়া লইয়াছেন। তাহার প্রভাব কত ভয়ানক হইতে পারে, রোগযন্ত্রণার সহিত চিকিৎসার ব্যয়ও কত পীড়াদায়ক হইবে, সেই বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগ নাই। বিশেষত পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সংস্কৃতি এখনও পরিবারগুলি সেই ভাবে গ্রহণ করে নাই। ফলে স্থূলত্ব, মধুমেহ ও হৃদ্‌রোগ মহামারি রূপ ধরিয়া প্রাণহানি ও অর্থক্ষয় করিতেছে।

পশ্চিমের দেশগুলি ‘উত্তম আহার’ সম্পর্কে স্কুল-কলেজে নিরন্তর প্রচার করিয়া থাকে। এই দেশে তেমন কোনও চেষ্টা নাই। রাজনীতির নেতা ও নেত্রীরা বিভিন্ন উৎসবে শুভেচ্ছা জানাইয়া কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন করিয়া থাকেন। তাঁহারা যদি যথার্থ শুভচিন্তক হইতেন, তবে উৎসবে মিষ্টান্ন কম খাইবার অনুরোধ করিয়া জনস্বার্থ-বার্তা প্রচার করিতেন। তৎসহ, তামাকের অপকারিতার ন্যায়, উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ এবং মাত্রারিক্ত মদ্যপানের বিপদ বিষয়েও প্রচার চালাইতেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রক্তে শর্করা-সহ জরুরি নানা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তাহার প্রতিশ্রুতি আজও পূর্ণ হয় নাই। লৌহবাসরে ছিদ্রের ন্যায়, অনিয়ন্ত্রিত রোগ মৃত্যু ডাকিয়া আনে। রাষ্ট্র তাহাকে অবহেলা করিতে পারে না। অবহেলা করা অপরাধ।

Diabetes Health West Bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy