Advertisement
E-Paper

নিঃস্ব

নৈঃশব্দ্যের এই প্রয়োগ খুবই যুগোপযোগী। সমকালীন মানুষ নিজস্ব পরিসরের স্বাতন্ত্র ও অধিকার লইয়া অতিমাত্রায় সজাগ। সুতরাং, আপনার কনটেন্ট আপনার বৃত্তে। মানুষ একে অন্যকে বিরক্ত করে না, অন্যের ব্যক্তিগত পরিসরে অহেতুক প্রবেশ করিয়া তাহার সত্তায় ব্যাঘাত ঘটায় না।

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০

গণমাধ্যমে ক্রমে নীরবতা ফিরিয়া আসিতেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারের মতো অতিকায় সোশ্যাল মিডিয়ায় শব্দহীন কনটেন্ট সরবরাহ হইতেছে, যাহা কিনা মানুষ কেবল দেখিবে। ওই দৃশ্যেই সব বক্তব্য প্রকাশিত থাকিবে। এই শব্দ-প্রবল যুগে এমন প্রয়াস তাৎপর্যপূর্ণ। জনপরিসরে নিজের ফোন বা কম্পিউটারের ধ্বনি যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায় না, তাহাতে অন্যের অসুবিধা হয়। সুতরাং, সচরাচর নাগরিক স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে হে়ডফোন সংযোগ করিয়া নিজের মতো করিয়া সিনেমা, গান, বিজ্ঞাপন দেখেন। কিন্তু অধুনা বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে কেবল দৃশ্য মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা শুরু হইয়াছে। শব্দবিহীন কনটেন্ট শ্রবণেন্দ্রিয়ের ক্ষতি করিবে না, চার পাশের মানুষকেও বিরক্ত করিবে না। ইহাকে অবশ্য চাহিলেও যুগান্তকারী বলা যাইবে না। গণমাধ্যম শুরুতে শব্দহীনই ছিল, শব্দ পরে আসিয়াছে। সুতরাং, বলা যাইতে পারে, বৃত্ত সম্পূর্ণ হইতেছে। মিডিয়া শব্দহীন হইতে ফের শব্দহীনে ফিরিতেছে। অনুপাত এখনও কম, কিন্তু সম্ভাবনা প্রচুর।

নৈঃশব্দ্যের এই প্রয়োগ খুবই যুগোপযোগী। সমকালীন মানুষ নিজস্ব পরিসরের স্বাতন্ত্র ও অধিকার লইয়া অতিমাত্রায় সজাগ। সুতরাং, আপনার কনটেন্ট আপনার বৃত্তে। মানুষ একে অন্যকে বিরক্ত করে না, অন্যের ব্যক্তিগত পরিসরে অহেতুক প্রবেশ করিয়া তাহার সত্তায় ব্যাঘাত ঘটায় না। কিন্তু ইহার একটি পরিণাম হইল, তাহার দৃশ্যমাধ্যমের বাহিরেও যে একটি জগৎ বহিয়া চলিয়াছে, সে বিষয়েও সে প্রায়শ অজ্ঞাত। সে আপনাতে ব্যাপৃত। পাশ দিয়া ডাইনোসর হাঁটিয়া যাইল কি না কিংবা বৈঠকখানায় ইউএফও নামিল কি না, এ সবও তাহার গোচরে আসে না। সে আপন শব্দহীন কনটেন্ট-এ মগ্ন। এবং এই মগ্নতার কারণে সে, চরাচর তো দূরের কথা, নিজের চারিপাশের সহিতও সংযোগ হারাইতেছে, যে সংযোগ ছাড়া যথার্থ সামাজিক জীবন অ-সম্ভব— মুখ তুলিয়া না তাকাইলে এক জন অসহায় মানুষের মুখের বলিরেখা কী বলিতে চাহিতেছে, তাহা বোঝা সম্ভব নহে।

সম্ভব করিতেই হইবে, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নাই। এক জন ব্যক্তি কাহার বা কিসের সহিত কতটা যোগাযোগ রাখিবেন বা আদৌ রাখিবেন কি না, ইহা তাঁহার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। কিন্তু প্রশ্ন হইল, পরিপার্শ্ব হইতে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করিয়া ব্যক্তিগত পছন্দের নিঃশব্দ বলয়ে নিজেকে রুদ্ধ করিয়া তিনি নিজেকেও বিস্মৃত হইতেছেন না তো? অন্যের মুখ চাহিয়া নিজেকে সংযত রাখিতে বাধ্য হইবার ফলে যে অতৃপ্তি বা বিরক্তি, তাহাও কিন্তু এক ধরনের প্রয়োজনীয় অনুভূতি। সেই অনুভূতিকে আপন মনে জন্মাইবার সুযোগটুকু না দিয়া তিনি যদি কেবল নিঃশব্দ কনটেন্টের পরিতৃপ্তিতেই নিমগ্ন থাকেন, তাহা হইলে শেষ অবধি নিজের অপছন্দ, বিরক্তি, রাগ, দুঃখের অনুভূতিগুলিও হারাইয়া ফেলিবেন না তো? ব্যক্তি স্মার্টফোনের অঙ্গ নহে— এই কথাটি মনে রাখা জরুরি। কেবল পছন্দসই দৃশ্যাবলি দেখিয়া নিজেকে নিঃস্ব করিয়া দিলে, নৈঃশব্দ্যের সহিত— কনটেন্টের নহে, নিজস্ব নৈঃশব্দ্যের সহিত— সময় না কাটাইলে, একটা সময় হয়তো একাকিত্বের এবং শূন্যতার অনুভূতি তাঁহাকে গ্রাস করিয়া লইবে। সেই শূন্যতাই তখন তাঁহার অন্তঃসার হইয়া উঠিবে। সেই কনটেন্ট তাঁহার পছন্দের হইবে কি?

Soundless Media Social Media সোশ্যাল মিডিয়া Content
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy