Advertisement
E-Paper

অন্যায়ের নূতন মাত্রা

ভারতের মাথায় ‘ধোলাইস্তান’ শিরোপা চড়িয়াছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রহারের শিকার হইয়াছেন মুসলিম ও দলিতেরা।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ছেলেধরা অপবাদে মহিলাকে বিবস্ত্র করিয়া প্রহার করা হইল ধূপগুড়ির ডাউকিমারি গ্রামে। ঘটনার ভয়াবহতায় শিহরিত হইতে হয়। কখনও গরু চুরি, কখনও শিশু চুরির অভিযোগ তুলিয়া গণপ্রহারে হত্যা দেশে ক্রমাগত বাড়িতেছে। ভারতের মাথায় ‘ধোলাইস্তান’ শিরোপা চড়িয়াছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রহারের শিকার হইয়াছেন মুসলিম ও দলিতেরা। এক দলিত ব্যক্তিকে মারধর করিয়া তাহার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়াইয়াছেন তিন জাঠ যুবক, যাহাতে দলিতদের মনে ভীতির উদ্রেক হয়, তাহার দৃষ্টান্তও সম্মুখে আসিয়াছে। এর অর্থ, দলিত-মুসলিমের গণপ্রহারকে অন্যায় বলিয়া গণ্য করিবার মানসিকতাও আজ আর বাঁচিয়া নাই। বিপন্নদের তালিকায় ইহার পর যে মহিলাদের নাম উঠিবে, তাহাতে আর আশ্চর্য কী। লজ্জা কেবল এই যে, মহিলাদের ‘ছেলেধরা’ বলিয়া বিবস্ত্র করা হইল এমন এক রাজ্যে, যাহার মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী এক মহিলা। ইহাতে কেবল ওই চার জন মহিলাই আক্রান্ত হইলেন না, আক্রমণের লক্ষ্য হইয়া গেলেন অগণিত নারী। কর্ম উপলক্ষে বিভিন্ন গ্রাম ও মফস্সল শহরে ঘুরিতে হয় যে মহিলাদের, তাঁহাদের বিপন্নতা বাড়িয়া গেল। তাঁহাদের সকলের সঙ্গেই পরিচয়পত্র থাকা সম্ভব নহে, থাকিলেও তাহাতে লাভ হইবে, এমন আশা কম।

আজ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সহায়তায় কয়েক লক্ষ মহিলা নিজ উদ্যোগে ব্যবসা করিতেছেন। তাঁহাদের জিনিসপত্র কিনিতে ও বিক্রয় করিতে নানা স্থানে ঘুরিতে হয়। ব্যাঙ্ক এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলি ‘এজেন্ট’ হিসাবে মহিলাদের অধিক সংখ্যায় নিয়োগ করিতেছে। তাই গ্রাহকদের থেকে বকেয়া আদায় করিতে, ঋণের টাকা পৌঁছাইতে তাঁহাদের গ্রামে গ্রামে ঘুরিতে হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও গ্রামীণ কর্মকাণ্ডে তৃণমূল স্তরের কর্মী হিসাবে মেয়েদের নিয়োগ করে। সরকারি নানা প্রকল্প গ্রামীণ স্তরে রূপায়ণের দায়িত্ব মহিলা কর্মীরাই অধিক পাইয়া থাকেন। এই মেয়েদের সুরক্ষা কখনওই ছিল না, পরিবহণ বা শৌচালয়ের মতো পরিষেবার অভাব তাঁহাদের বিপন্ন করিত। এখন গণপ্রহারের করাল ছায়াও তাঁহাদের পথকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করিতেছে। কেহ বলিতে পারেন, সব মহিলাই কি সদুদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেন? মহিলা পকেটমার কি নাই? আছে। অপরাধের নিদর্শন পাইলে তাহাদের পুলিশে ধরাইয়া দেওয়া অবশ্যই কর্তব্য। কিন্তু মহিলার গায়ে হাত তুলিবার অপরাধ চুরি-রাহাজানির অপরাধের তুলনায় লঘু নহে, বরং গুরুতর।

ভারতীয় মহিলাদের মাত্র ২৭ শতাংশ কোনও পেশার সহিত যুক্ত আছেন। শিক্ষিত মহিলারাও গৃহবধূর ভূমিকায় অধিক স্বচ্ছন্দ। ইহার অন্যতম কারণ, ভারতের পথ, পরিবহণ ও কর্মক্ষেত্র মহিলাদের জন্য নিরাপদ নহে। স্কুলছাত্রী হইতে ইটভাটার শ্রমিক, করণিক হইতে উদ্যোগপতি, সকল মহিলা নিয়ত শঙ্কিত হইয়া পথ চলেন। যৌন হয়রানি হইতে অ্যাসিড আক্রমণ, ধর্ষণ ও খুন, অপরাধের এক বিচিত্র পসরা ঘরের বাহিরে মেয়েদের জন্য সারা দেশে অপেক্ষা করিতেছে। আক্রান্ত হওয়া যত সহজ, প্রতিকার পাওয়া এ দেশে ততই কঠিন। এখন মেয়েদের নির্যাতন, প্রহার ও হত্যার আরও সহজ পথ দেখাইয়া দিল ধূপগুড়ি। ‘ছেলেধরা’ রব তুলিলেই যথেষ্ট।

Lynching Rumor Law and Order
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy