Advertisement
E-Paper

দাদাগিরি মনোভাব ছেড়ে এগোনোর চেষ্টা করুক মোদী সরকার

শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন মানে অন্যের মতামতের তোয়াক্কা না করা, এটা আদর্শ রাজনীতি হতে পারে না। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালশক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন মানে অন্যের মতামতের তোয়াক্কা না করা, এটা আদর্শ রাজনীতি হতে পারে না। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০১
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।

নরসিংহ রাও তখন প্রধানমন্ত্রী। সংসদে বিরোধীরা তুমুল বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তাঁর সামনে। বিরোধীদের বক্তব্য, ‘‘আপনার সরকার সংখ্যালঘু, কাজেই সরকার চালানোর অধিকার আপনার নেই। কোনও জনাদেশ নেই আপানার পক্ষে।’’ গোলমাল থামছে না দেখে নরসিংহ রাও উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘এ কথা সত্য আমার সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কিন্তু দেশ শাসন করার একটি বিশেষ জনাদেশ আমি পেয়েছি। আর সেই কারণেই রাষ্ট্রপতি আমাকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন। আমার জনাদেশ হল যে আপনাদের সকলের সঙ্গে কথা বলে, সকলের মতামত নিয়ে আমাকে দেশ চালাতে হবে। সেটাই আমার জনাদেশ। শুধু নিজের মতে বা আমার দলের মতে দেশ চালানোর অধিকার আমার নেই।’’

নরসিংহ রাও জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তাই তিনি খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে পেরেছিলেন যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার কেন তাঁকে চালাতে হয়। সেটাই ছিল জোট রাজনীতির মূল মন্ত্র। নরেন্দ্র মোদী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার। লোকসভায় ২৮২টি আসন নিয়ে বিজেপি আজ অধিষ্ঠিত। কিন্তু এখন এক বছর চার মাস অতিবাহিত হওয়ার পর মনে হচ্ছে, ভারতের মতো একটি বহুত্ববাদী যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশে বোধহয় সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার হলেও, সেই সরকারকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এগোতে হবে। গণতন্ত্রে সংখ্যা নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু দেশ শাসন করতে গেলে সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রক্রিয়ায় নানা মতকে সঙ্গে নিয়ে এগোনোই বাঞ্চনীয়। সংসদে শাসক দল যা-ই করবে, বিরোধী দল তার বিরোধিতা করবে, এটা যেমন অভিপ্রেত নয়, আবার দেশ চালানোর ক্ষেত্রে বিরোধী দলকে কোনও ভাবেই মর্যাদা না দেওয়া, গোটা দেশের মানুষের কাছে বিরোধী দলকে হেয় প্রতিপন্ন করা— সেটাও শাসক দলের কাজ নয়।

ভোটের আগে একটি রাজনৈতিক দল অন্য রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কত কথা বলে। এক জন আর এক জনের মুণ্ডপাত করে। কিন্তু ভোটে জেতার পরে ‘নির্বাচনী রেটোরিক্স’–কে ভোলার দরকার হয়। সেই ‘রেটোরিক্স’-কেই গুরুত্ব দিয়ে শাসক দল ভোটের পরেও বিরোধী দলের শাপশাপান্ত করে চলেছে, এটা অপরিণামদর্শিতা। ভোটের আগে পাক-সন্ত্রাসের বিরোধিতা করতে হয়েছে। তাতে বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্ক খুশি হয়েছে। কিন্তু ভোটের পরেও যদি বিজেপি এই রেটোরিক্সের উর্ধ্বে উঠে শান্তি-প্রক্রিয়ায় মনোনিবেশ না করে তবে তাতে দেশের মঙ্গল হতে পারে না। প্রণব মুখোপাধ্যায় ইউপিএ সরকারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর কার্গিল যুদ্ধের পুরনো বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন বায়ুসেনা ও স্থলসেনার কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান। বায়ুসেনার অভিযোগ ছিল, স্থলসেনার গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণেই কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল। প্রাক্তন বিদেশ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশোবন্ত সিংহের বিরুদ্ধেও অভিযোগের তর্জনি উঠেছিল। সংসদে কংগ্রেস সদস্যেরাই অনেকে এটি নিয়ে বিরোধী দল বিজেপি-কে দুষছিল। তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে প্রণববাবু কিন্তু যশোবন্তকে সমর্থন করেছিলেন এবং সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনও ভিন্ন মত নেই। প্রণববাবুর এই বিবৃতিতে কংগ্রেসের কিছু নেতা অসন্তুষ্ট হন। কিন্তু সনিয়া গাঁধী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী দু’জনকেই প্রণববাবু বলেছিলেন, আমাদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন, আমাদের এমন কোনও কথা বলা উচিত নয় যে বাইরের শক্তির তাতে সুবিধে হয়।

নরেন্দ্র মোদীর সরকার জমি বিল নিয়ে যেটা করতে চাইছিলেন সেটা হয়তো দেশের জন্য মঙ্গল। কিন্তু বিরোধী দলকে উপেক্ষা করে, সংসদকে উপেক্ষা করে একতরফা সেই বিল যে পাশ করা সম্ভব নয়, সেটা কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ংই বুঝতে পারছেন। সবে এক বছর হয়েছে। এখনও এই সরকারের চার বছর বাকি। গোটা সমাজব্যবস্থার মধ্যেই এক লুক্কায়িত হিংসা কুরে কুরে খাচ্ছে আমাদের। আমি সবজান্তা আর তুমি মুর্খ— এই দাদাগিরির মনোভাবই আজ রাজনীতির সব থেকে বড় শক্তি। নরেন্দ্র মোদী এই ত্রুটি পরিহার করে এগোনোর চেষ্টা করবেন এটাই বোধহয় আমজনতার প্রত্যাশা।চিন ও ভারতের রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনা করে অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, এই দুই দেশের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, চিনে রাষ্ট্র শক্তিশালী হলেও সমাজ কিন্তু রাষ্ট্রের চেয়ে কম শক্তিশালী। কিন্তু ভারতে অতীতে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য থেকে সম্রাট অশোক, এমনকী দক্ষিণ ভারতে চোল বা পল্লব রাজত্বেও রাষ্ট্রের চেয়ে সমাজব্যবস্থা ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী। ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় রাষ্ট্র বা সরকারের তুলনায় নাগরিক সমাজ বরাবরই অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। এই গণতন্ত্রকে সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে গেলে প্রয়োজন পরমতসহিষ্ণুতা। শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠন মানে অন্যের মতামতের তোয়াক্কা না করা, এটা আদর্শ রাজনীতি হতে পারে না।

অনিবার্য কারণে এ সপ্তাহে শাহি সমাচার প্রকাশিত হল না

jayanta ghosal shahi samachar latest shahi samachar highhanded mentality dominating mentality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy