ভাসছে বাণিজ্যনগরী। ছবি :পিটিআই।
অন্ধকার নিকষ হলেই বোধ হয় আলোর রেখাটা স্পষ্ট দেখা যায়। প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়ে যে আলোটা দেখাল মুম্বই। হাতে হাত ধরে শুধু ছন্দটাকেই ধরে রাখল না এই শহর, বাড়ির দরজাগুলো হাট খুলে দিল দুর্গত সহনাগরিকের জন্য। আটকে পড়া অচেনা মানুষকে আমন্ত্রণ জানালেন এই শহরের মানুষ, বললেন, আজ এটাই হোক আপনার আশ্রয়। ক্রমাগত অন্ধকার ঠেলতে ঠেলতে এগোনো সভ্যতা এই বানভাসি শহরে আলো দেখল। সেই চিরন্তন মনুষ্যত্বের আলো।
অন্যথায় পারস্পরিক অনাস্থা-বিদ্বেষ-অসহিষ্ণুতার ক্রম-আগ্রাসী এক বাতাবরণে এই মুহূর্তে লালিত হচ্ছে ভারত। খাদ্যাভ্যাসের নামে, ধর্মাচরণের নামে, সম্প্রদায়গত বিশ্বাসের নামে ক্রমাগত ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে উত্তেজনা, বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে হুঙ্কার-গর্জন। সমস্তটাই হচ্ছে স্বার্থসম্পৃক্ত উদ্দেশ্যে, রাজনীতির গাঁটছড়া যার সঙ্গে নিপুণ। আর সেই অঙ্গুলিহেলনে, সেই নোংরা জাদুর দণ্ডে মারামারিতে মেতে উঠেছে আম নাগরিক, ঠিক যেমনটা হয় কাঠপুতলি নাচের মঞ্চে রণাঙ্গন দৃশ্যের অভিনয়ে। বিভাজনের ভিত্তিতে শাসনের ব্রিটিশ পাঠের ফলিত চর্চা ভারতভূমির প্রান্তরে।
এহেন পটভূমিকায় যখন সব বিভেদকে পিছনে ফেলে ধর্ম-খাদ্যাভ্যাস-জাতি-বর্ণ ভুলে এক মানুষ আর এক মানুষকে ডেকে নেন ঘরের ভিতর, তখন তো সুড়ঙ্গশেষের সন্ধানও যেন পাওয়া যায়। অন্তত আশার সঞ্চার হয় আরও এক বার। জল নেমে গেলে আবার হয়ত শহর ফিরে যাবে পুরনো অভ্যাসে, আবার হয়ত আত্মমুখীই হবে নগরী, হয়ত বা বিদ্বেষের কাছে কখনও পরাভূত হবে প্রেম, কিন্তু তাতেও মুছে যাবে না দুর্দিনের মুহূর্তের এই আলিঙ্গন।
খুব বিপদের মধ্যেই নাকি মানুষের আসল সত্তা প্রকাশ হয়ে পড়ে। মুম্বই কি প্রমাণ করল না, মানুষের আসল সত্তা তার এই আস্থা-আমন্ত্রণ-বন্ধুতার উদাত্ততায়? এই সত্তার বিনির্মাণের চেষ্টা চলেছে নিরন্তর, বহু বহু বছর ধরে। তাকে ধাক্কা দিল বাণিজ্যনগরী।
মুম্বইকে কুর্নিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy