Advertisement
E-Paper

বিপণন সত্য

অর্থনীতিবিদকে বাগে পাইয়া মনস্তত্ত্ববিদ আরও জানাইবেন, মন বস্তুটি বিচিত্র। নিজের ‘জ্ঞান’-এর উপর তাহার আস্থাও অসীম।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০০:০৭

রাহুল গাঁধীর প্রতি জনৈক শ্রোতার প্রতি প্রশ্ন ছিল, নেহরু-গাঁধী প্রধানমন্ত্রীদের আমলে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার দুনিয়ার গড়ের তুলনায় কম ছিল কেন? প্রশ্নটি যে ভুল, পরিসংখ্যান দেখিলেই স্পষ্ট হইবে। তবুও সেই প্রশ্ন লইয়াই ভারত উত্তাল। সত্য হইল, ১৯৮০-র দশকটিতে প্রথমে ইন্দিরা গাঁধী এবং পরে রাজীব গাঁধীর প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারতের জিডিপি দুনিয়ার গড়ের তুলনায় অনেকখানি বেশি হারে বাড়িয়াছিল। অর্থনীতির তাত্ত্বিকরা আরও স্মরণ করাইয়া দিবেন, পারিপার্শ্বিকের খোঁজ না করিয়া শুধু জিডিপি-র অঙ্কে দেশের অগ্রগতি মাপাও বিশেষ বিচক্ষণতার কাজ নহে, আর্থিক বৃদ্ধির দায় এবং কৃতিত্ব শুধু প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপাইয়া দিলেও ব্যক্তিবিশেষকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাঁহাদের থামাইয়া দিয়া মনস্তত্ত্ববিদরা বলিতে পারেন, প্রবন্ধ লিখিতে বসিলে বরং এই সব কথা ভাবিয়া দেখিবেন— আপাতত বলুন, অর্থনীতির হালহকিকত সম্বন্ধে মত দেওয়ার সময় কয় জন সাধারণ মানুষ এত শত ভাবিয়া দেখেন, খোঁজ করিয়া লন? ১৯৪৭ হইতে ১৯৮৯ না হয় দীর্ঘ সময়। ইউপিএ আমলের সহিত মোদী-জমানার তুলনা করিতে বসিলে কয় জনের পক্ষে বৎসরওয়াড়ি জিডিপি-র হিসাব কষা সম্ভব? তবুও, সত্য জানা নাই বলিয়া মত দেওয়া হইতে পিছাইয়া আসেন কয় জন? একশত ত্রিশ কোটিতে গুটিকও নহেন। তাঁহারা যাহার ভরসায় মত দেন, তাহার নাম ধারণা। সেটি মনস্তত্ত্বের এলাকা।

অর্থনীতিবিদকে বাগে পাইয়া মনস্তত্ত্ববিদ আরও জানাইবেন, মন বস্তুটি বিচিত্র। নিজের ‘জ্ঞান’-এর উপর তাহার আস্থাও অসীম। সিঙ্গাপুরের শ্রোতাটি অর্থনীতির পরিসংখ্যান সম্বন্ধে কতখানি অবহিত, সে প্রশ্ন ভিন্ন। কিন্তু, জিডিপি বস্তুটি খায় না মাথায় মাখে, সে বিষয়ে যাঁহার ধারণা নাই, তিনিও দুই জমানায় অর্থনীতির স্বাস্থ্য সম্বন্ধে ‘জানেন’। তাঁহার সেই জ্ঞানের উৎস কখনও ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতিবিশিষ্ট কোনও সুবক্তা; কখনও ‘দেশ যাহা জানিতে চাহে’, সেই প্রশ্নের উত্তরসন্ধানী কোনও টেলিভিশন উপস্থাপক; কখনও নিখাদ পাড়ার চায়ের দোকানের আড্ডা। কংগ্রেসের রাজনীতি পছন্দ নহে, অতএব তাহার অর্থনীতিতেও নিশ্চয়ই গোলমাল ছিল— এহেন বিশ্বাসও শক্তিমান। বিবিধ সূত্র হইতে আহৃত ‘জ্ঞান’ অচিরেই মানুষের ‘বিশ্বাস’-এ পরিণত হয়। এবং, সেই বিশ্বাসের সমর্থনে ‘তথ্যপ্রমাণ’ জোগা়ড় করিতেও মানুষের মন সুপটু। ছাতা লইয়া বাহির হইলে যে বৃষ্টি পড়ে না, এই কথাটির পক্ষে প্রমাণ সংগ্রহে কোনও মনের কি কখনও সমস্যা হইয়াছে? অর্থনীতির পণ্ডিতরা হিসাবি ও বেহিসাবি খুচরা ও পাইকারি সকল প্রকার গণনার কার্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করিয়া যদি মনের সেই বিশ্বাসের উলটা কথা বলেন, তবুও বিশ্বাস সহজে টোল খায় না। অতএব প্রশ্ন হইল, বিশ্বাস নামক ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করিবার পথটি তবে কী? তথ্যের অস্ত্র যাহাকে ছিন্ন করিতে পারে না, পরিসংখ্যানের অগ্নি যাহাকে দগ্ধ করিতে পারে না, তাহাকে বাগ মানাইবার পশুপাত অস্ত্রটির নাম মার্কেটিং। বিপণন। সনিয়া গাঁধী সম্প্রতি স্বীকার করিয়াছেন, বিপণনের খেলায় তাঁহারা নরেন্দ্র মোদীর নিকট দশ গোল খাইয়াছেন। বিপণনের মাহাত্ম্যে কী হয়, নরেন্দ্র মোদী জানেন। রাহুল গাঁধীরাও জানিতেছেন।

Government NDA UPA marketing strategy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy