Advertisement
E-Paper

নূতন রাষ্ট্র, নূতন নীতি

বিজেপি সরকারের অধীনে ভারতীয় রাষ্ট্রের এই পুনর্নির্মাণের সহিত তাহার নূতন কাশ্মীর নীতিটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রজাতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে তাহার নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই ভাবে সরাসরি যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়ার কাজটি সহজ নয়

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৭ ০০:০৪

ঝোলা হইতে সত্যটি বাহির হইয়া পড়িল। স্বচ্ছ বাক্য উচ্চারণের জন্য স্বচ্ছ ভারতের ধ্বজাধারী হিসাবে অতঃপর সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে পুরস্কৃত করা যায়। এই মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী যে কাশ্মীরে কোনও সংকট সমাধানের কাজে ব্যাপৃত নয়, তাহারা যে বরং কাশ্মীরিদের পিটাইয়া মারিবার প্রকল্পে নিয়োজিত, তাহা রাওয়াত নিজ মুখে পরিষ্কার করিয়া দিয়াছেন। পুরো কাজটি করিতে পারিতেছেন না কাশ্মীরিরা যথেষ্ট আক্রমণাত্মক হইতেছে না বলিয়া, তাহাও বলিয়াছেন। এহেন রাজনৈতিক উসকানিমূলক বাক্য সেনাধ্যক্ষ কেন উচ্চারণ করিবেন, প্রশ্ন শোনা গিয়াছে। প্রশ্নটি অবান্তর। ঠিক, তিনি একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর নেতা, কথা বলা বা উসকানি দেওয়া তাঁহার কাজ নহে। কিন্তু রাওয়াতরা যাহা করিতেছেন, তাহাই তো বলিতেছেন, সেই কারণেই ইহাতে শৃঙ্খলার কোনও সংকট তাঁহারা দেখিতেছেন না, বরং কথা ও কর্মের সামঞ্জস্যই দেখিতেছেন। এক দিন এক বিজেপি প্রধানমন্ত্রীই কাশ্মীরে সেনার অত্যাচারের আতিশয্যে বিরক্ত হইয়া ‘হিলিং টাচ’ নামক প্রকল্প ব্যাপক ভাবে প্রচলিত করিয়াছিলেন। আজ আর এক বিজেপি প্রধানমন্ত্রীর জমানায় কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধ ঘোষণা করিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নূতন সামরিক (রাজনৈতিক নহে) নীতিটির নামও বলিলেন, ‘স্থায়ী সমাধান’। নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে স্থায়ী সমাধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া ভারতীয় রাষ্ট্র নিজের পুনর্নির্মাণ করিতেছে। ঐতিহাসিক মুহূর্ত বটে।

বিজেপি সরকারের অধীনে ভারতীয় রাষ্ট্রের এই পুনর্নির্মাণের সহিত তাহার নূতন কাশ্মীর নীতিটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রজাতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পক্ষে তাহার নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এই ভাবে সরাসরি যুদ্ধে প্রবৃত্ত হওয়ার কাজটি সহজ নয়, তাহার জন্য অনেক কাঠখড় পুড়াইয়া অনেক বিরোধিতার বাধা টপকাইয়া আসিবার কথা। রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনীর কাজ হইবার কথা রাষ্ট্রের সার্বভৌমতা ও মর্যাদা রক্ষা, সন্ত্রাসবাদীদের দমন করা। কিন্তু যে নাগরিকদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কাজকর্মের কোনও অভিযোগ নাই, কেবল স্থানীয় অশান্তি ও সংঘর্ষের অভিযোগ আছে, তাহাদের বিরুদ্ধে ‘স্থায়ী সমাধান’-এর আহ্বান জানানোর মধ্যে যে অপরিমেয় ক্ষমতার আস্ফালন, অনৈতিক স্বেচ্ছাচার, তাহার দিকে আঙুল তুলিবার লোকও আজ কমিয়া আসিয়াছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলিতেছেন ঠিকই, কিন্তু সংখ্যাতিশয্যে ভয়ভাবনাহীন বিজেপি নেতৃত্বকে আটকাইবার মতো শক্তি সংসদীয় গণতন্ত্রে এখন অনুপস্থিত। উত্তরপ্রদেশের বিপুল জয়ের পর হইতেই কেন্দ্রের কর্তৃত্ববাদী সংখ্যাগুরুবাদী স্বৈরাচার দ্রুত স্পষ্ট হইতেছে। কাশ্মীর নীতির পরিবর্তন তাহারই অংশ।

এই নীতির সম্ভাব্য ফল কী? অনুমান সহজ। এক, কাশ্মীরিদের আরও অনেকখানি চরমতার দিকে ঠেলিয়া দেওয়া হইবে। ঠিক এই অনাস্থাতেই উপত্যকার তরুণসমাজ হাতে পাথর তুলিয়া লইতেছিলেন, এ বার তাঁহারা হাতে বন্দুক তুলিতে দ্বিধা করিবেন না, তাঁহাদের জনসমর্থন হুহু করিয়া বাড়িবে। দুই, কূটনৈতিক দিক দিয়া ভারতের মুখে কালি পড়িবে। পাকিস্তান ভারত বিষয়ে যে প্রোপাগান্ডা বহু কাল যাবৎ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে করিয়া আসিতেছে, ভারতীয় সেনার ‘স্থায়ী সমাধান’-এর হুমকি ও হামলা সেই সমস্ত অভিযোগ, আশঙ্কা ও আতঙ্ককে সত্য প্রমাণ করিবে, বিশ্বের চোখে ভারতকে মানবাধিকার দলনের অপরাধে অপরাধী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করিবে। এমনিতেই পাকিস্তান ও চিনের যৌথ বিরোধিতায় কাশ্মীর লইয়া ভারতের আন্তর্জাতিক অবস্থানটি এখন টলোমলো, তাহা আরও ধ্বস্ত হইবে। যে রাষ্ট্র ভাবে, সেনা লেলাইয়া দিলেই বিরূপ নাগরিক সমাজের বিরূপতা নাশ করা যায়, তাহার হয়তো ইহাই ভবিতব্য।

state Policy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy