Advertisement
E-Paper

বিষে আক্রান্ত শুধু ধর্ষিতা নয়, আক্রান্ত ওই ধর্ষক আর পুলিশও

রাষ্ট্র, সমাজ, প্রশাসন, পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে মেয়েটার ধারণা ঠিক কী হল? সবে কৈশোরে পা পড়েছে যার, পৃথিবী-জগৎ-অস্তিত্ব-সম্পর্ক ইত্যাদি অনেক কিছু সম্পূর্ণ নতুন আলোয় ধরা দেয় তার কাছে। সেই মহা-সন্ধিক্ষণে সমাজ তার চরম বিপজ্জনক একটা মুখ নিয়ে দেখা দিল।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৭ ০৪:৫৪

রাষ্ট্র, সমাজ, প্রশাসন, পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে মেয়েটার ধারণা ঠিক কী হল? সবে কৈশোরে পা পড়েছে যার, পৃথিবী-জগৎ-অস্তিত্ব-সম্পর্ক ইত্যাদি অনেক কিছু সম্পূর্ণ নতুন আলোয় ধরা দেয় তার কাছে। সেই মহা-সন্ধিক্ষণে সমাজ তার চরম বিপজ্জনক একটা মুখ নিয়ে দেখা দিল। বিহিত চাইতে গিয়ে কিশোরী দেখল, প্রশাসন আরও বিষম বস্তু। সেখানে রক্ষক নাম নিয়ে বসে থাকা কর্তা আসলে ভক্ষক। একটা জীবনকে উন্মেষের মুহূর্তেই ভেঙেচুরে খান খান করে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত বাতাবরণ আর কী-ই বা হতে পারে?

হরিয়ানার কৈথলে ঘটেছে চরম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটা। প্রথমে ১৪ বছরের মেয়ে ধর্ষণের শিকার। তীব্র শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে যুঝে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই আরও বড় ধাক্কা। ধর্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থানায় গিয়ে পুলিশি পোশাকের আড়ালে থাকা দুর্বৃত্তের থাবা। থানার মধ্যে একাধিক পুলিশকর্মীর উপস্থিতিতে নগ্ন করা হল ধর্ষিতাকে। পুলিশ আধিকারিক সহস্তে ‘পরীক্ষা’ করলেন, আদৌ ধর্ষণ হয়েছে কি না!

আর কত নীচে নামব আমরা? আর কতটা অসংবেদনশীল হবে আমাদের সমাজ? রোগের শিকড় তো এই সমাজের গভীরেই। ধর্ষকের জন্ম যে সমাজে, থানার ভিতরে পুলিশের পোশাক পরে বসে থাকা ব্যক্তিটির জন্মও সেই সমাজেই। তাই সামাজিক শিরা-ধমনীতে প্রবহমান বিষের প্রকোপে দু’জনেই। এই বিষ থেকে কি মুক্তির পথ নেই? নিশ্চয়ই রয়েছে। কিন্তু তার জন্য সর্বাগ্রে বিষটাকে বিষ বলে চিনে নেওয়া দরকার। বিষে আক্রান্ত শুধু ওই ধর্ষিতা নয়, বিষের শিকার ওই ধর্ষক আর ওই পুলিশও— এ কথা উপলব্ধি করা দরকার। কিন্তু এই উপলব্ধির জন্য যে সংবেদনশীলতাটুকু প্রয়োজন, সেটুকুও আজ অমিল পারিপার্শ্বিকতায়।

হরিয়ানার কিশোরী এক প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছে— বাড়তে থাকা অসংবেদনশীলতা, অসংযম, হিংসা, হিংস্রতা এবং অমানবিকতার প্রতীক। রোজ কেউ না কেউ এর শিকার হচ্ছেন, অগণিত নাগরিক ভেঙেচুরে খান খান হয়ে যাচ্ছেন। আসলে কিন্তু মানুষগুলো ভাঙছে না। ভাঙছে সমাজ সম্পর্কে মানুষের ভাবনা, ভাঙছে সভ্যতা সম্পর্কে মানুষের ধারণা। রোজ কত-কত মানসে ভরসা-আস্থা-বিশ্বাসের ভিত টলে যাচ্ছে। এই ভাঙন সর্বগ্রাসী যদি হয়ে ওঠে কোনও দিন, কেউ কিন্তু রেহাই পাব না। গোটা সামাজিক বন্দোবস্তটাই টলে যাবে সে দিন। নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে তাই সক্রিয় হতে হবে সমাজকে, সামাজিক ভাবে এ বার সক্রিয় হতে হবে সব সচেতন নাগরিককে। না হলে সামনে আরও বড় বিপদ।

Rape Rape Victim Police Sexual harassment Anjan Bandyopadhyay Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy