Advertisement
E-Paper

কারাট লাইন

প্রকাশ কারাটরা সত্তরের দশকের যে সিদ্ধান্তকে ঢাল করিয়া নিজেদের রাজনীতি রচনা করিতেছেন, তাহার অপ্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে বস্তুত একটি শব্দ খরচ করাও অপচয়।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০২

কোনও একটি বিশেষ প্রজাতির প্রাণীর বিলুপ্তির প্রধান কারণ কী, সে বিষয়ে বিবর্তনবাদ ও বাস্তুতন্ত্রের তত্ত্বে দীর্ঘ তর্ক রহিয়াছে। বিলুপ্তির কারণ কি লুক্কায়িত থাকে সেই প্রজাতির জিনে, না কি পারিপার্শ্বিক কারণই মূল, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এখনও তাহার মীমাংসায় পৌঁছায় নাই। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষেত্রে অবশ্য সেই তর্ক থাকিবে না। ভবিষ্যতের গবেষকরা জানিবেন, একদা ভারতের কতিপয় অঙ্গরাজ্যের হর্তাকর্তাবিধাতা দলটির শেষ চিহ্ন অবধি মুছিয়া গিয়াছে একটি জিনের প্রভাবে— তাহার নাম, ‘কেরল লাইন’। তাঁহারা জানিবেন, দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ ছাড়িবার তিন বৎসর পরেও প্রকাশ কারাটের এমনই প্রতাপ যে আজও, ‘বিলুপ্তপ্রায়’ তকমা পাইবার পরও, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট কংগ্রেসের ছোঁয়াচ এড়াইয়া চলাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। ইতিহাস সাক্ষ্য দিবে, সীতারাম ইয়েচুরির কাণ্ডজ্ঞান দলটিকে বাস্তবের পথে ফিরাইয়া আনিতে পারে নাই। কলিকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে প্রকাশ কারাটের নথির নিকট ইয়েচুরির নথি বিপুল ভোটে পরাজিত হইল। পরাজয়ের প্রধান কারণ, শীর্ষনেতৃত্বে বাংলার তুলনায় কেরলের প্রতিনিধির সংখ্যা বেশি। বলা চলে, কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে কেরলের পার্টির স্বার্থের নিকট বাংলার পার্টির স্বার্থ পরাজিত হইল।

প্রকাশ কারাটরা সত্তরের দশকের যে সিদ্ধান্তকে ঢাল করিয়া নিজেদের রাজনীতি রচনা করিতেছেন, তাহার অপ্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে বস্তুত একটি শব্দ খরচ করাও অপচয়। সেই লাইন যে আমলের, বিজেপি নামক হিন্দুত্ববাদী বিভাজনের রাজনীতির সওদাগরদের দলটি তখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। তাহার পর গঙ্গা এবং ভোলগা, উভয় নদীতেই বহু জল বহিয়া গিয়াছে— কংগ্রেস বদলাইয়াছে, সিপিআইএমও। আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ, বিজেপির অভূতপূর্ব উত্থান ঘটিয়াছে। হিন্দুত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদই যে বর্তমান ভারতের বৃহত্তম সংকট, সেই কথাটি এমনকী প্রকাশ কারাটও মানেন। কিন্তু, তাহার পরও কেন তাঁহারা বিজেপির গতিভঙ্গ করিবার স্বার্থে কংগ্রেসের সহিত সমঝোতা করিতে পারিবেন না, সেই প্রশ্নের উত্তরে এখনও জালন্ধর কংগ্রেসের দোহাই দেওয়া ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। কেন, তাহা বোঝা যায়। কেরলে কংগ্রেসই সিপিআইএম-এর প্রতিদ্বন্দ্বী, অতএব সর্বভারতীয় স্তরে তাহার সহিত সমঝোতা করিলে কেরলে রাজনীতি করা মুশকিল— এমন একটি কথা তাত্ত্বিক ভাবে প্রতিষ্ঠা করা দুষ্কর। অতএব, কোনও যুক্তি ব্যতিরেকে কংগ্রেস বিষয়ক ছুঁতমার্গ রাখিবার নীতির নামই কেরল লাইন।

যে দলের সর্বভারতীয় উপস্থিতি নাই, নিয়তিই তাহাকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাজ্যের বশীভূত করিবে। ‘বেঙ্গল লাইন’ নেতৃত্বের নিকট নিয়তিকে মানিয়া লওয়া ভিন্ন উপায়ান্তর নাই। এই নিয়তিই দলকে অনিবার্য বিলুপ্তির পথে টানিয়া লইয়া যাইবে— শেষ অবধি কিছু পড়িয়া থাকিলেও তাহা বড় জোর কেরলের একটি আঞ্চলিক দল হিসাবে থাকিবে। রাজনৈতিক স্বার্থের এই গতি রোধ করিতে পারে, কাণ্ডজ্ঞানের সাধ্য কী? অতএব, তাঁহারা ডোডোপাখি হইবেন, না ডায়নোসর, হায়দরাবাদের পার্টি কংগ্রেসে বরং তাহা লইয়া ভোটাভুটি হউক।

CPM Prakash Karat Bengal Kerala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy