Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Haryana Assembly Election 2024

হার-জিত

মাত্র নব্বই আসনবিশিষ্ট হরিয়ানা বিধানসভার ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তার মাপের চেয়ে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ০৪:৪০
Share: Save:

ভারতে বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফলাফল ভুল হয়েই থাকে। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের পূর্বাভাসেও ভুল হল— তবে, অন্য ভুলের চেয়ে এই ভুলটির চরিত্র একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিন্দুতে পৃথক। সমীক্ষার ফলাফল বলেছিল, দু’দফার বিজেপি সরকারের পতন ঘটবে, কংগ্রেস ক্ষমতায় আসবে। কার্যক্ষেত্রে ইতিহাস গড়ে হরিয়ানায় টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় এল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে প্রবল বিজেপি-বিরোধী হাওয়ায় সম্ভবত গৈরিক জাতীয়তাবাদী শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বও এমন ফলাফল প্রত্যাশা করেননি— প্রধানমন্ত্রী সচেতন ভাবেই খানিক নিষ্ক্রিয় ছিলেন। রাজ্য রাজনীতিতে এই ফলাফলের তাৎপর্য কী, সে আলোচনায় প্রথমেই মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, হরিয়ানা কিন্তু চরিত্রগত ভাবে ‘বিজেপি-রাজ্য’ নয়। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির চেয়ে কিসান-জওয়ান-পহেলয়ানের এ রাজ্যে জাত-রাজনীতি ও কিসান রাজনীতির গুরুত্ব বেশি। কংগ্রেস তার রণকৌশল সাজিয়েছিল এই দু’টি প্রশ্নকে ঘিরেই, কিন্তু সম্ভবত স্রোতের অভিমুখ বুঝতে ভুল করেছিল। ভূপিন্দর সিংহ হুডার নেতৃত্ব কংগ্রেসকে অতিরিক্ত জাঠ ভোট-নির্ভর করেছিল— বিজেপি বরং জাঠ-বিরোধী অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছে। রাজ্যের কিসান সমাজের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠা বিবিধ অসন্তোষকে কংগ্রেস যথেষ্ট ভোটে পরিণত করতে সম্ভবত ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে অতি পুরাতন ব্যাধিটিও— গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ফলাফল প্রকাশের পর হুডা বনাম কুমারী শৈলজা লড়াই যে ভাবে প্রকাশ্য কাদা ছোড়াছুড়িতে পরিণত হয়েছে, তা লজ্জাজনক। রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র থেকে হরিয়ানা— একের পর এক রাজ্যে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কংগ্রেসের সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে।

মাত্র নব্বই আসনবিশিষ্ট হরিয়ানা বিধানসভার ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তার মাপের চেয়ে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমত, এই জয় নিঃসন্দেহে বিজেপির মনোবল বাড়াবে— ভোটে জেতার শিল্পটি যে এখনও তাদের হাতছাড়া হয়নি, এই বিশ্বাস নরেন্দ্র মোদীকে বলীয়ান করবে। দ্বিতীয়ত, হরিয়ানায় ‘জিতে-যাওয়া খেলা’য় পরাজিত হওয়া রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ভোটারদের আস্থার অভাবের প্রতিফলন কি না, সে প্রশ্ন উঠবে। সাম্প্রতিক কালে অন্য কোনও রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনা এমন তীব্র ছিল না। সেই রাজ্যেও হেরে যাওয়া দু’টি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে— এক, ভোট-শেয়ারকে কী ভাবে আসনে পরিণত করতে হয়, সেই শিল্পটি এখনও কংগ্রেসের করায়ত্ত হয়নি; এবং দুই, প্রাদেশিক রাজনীতিতে জোটের পথে হাঁটবে না কি ‘একলা চলা’র নীতি নেবে, কংগ্রেসকে তা আরও বিবেচনা করতে হবে। তবে এ কথাও সত্য যে, হরিয়ানা কংগ্রেসকে একেবারে খালি হাতে ফেরায়নি। ভোট-শেয়ারে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের ফারাক এক শতাংশ-বিন্দুও নয়। রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে ১১ শতাংশ-বিন্দু। রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী ভোটের সিংহভাগ কংগ্রেসের ঝুলিতে এসেছে, অর্থাৎ ভোটাররা কংগ্রেসকে বিজেপি-বিরোধিতার প্রধান মুখ বলে বিবেচনা করেছেন। সর্বভারতীয় জোট রাজনীতিতে এই কথাটি নিঃসন্দেহে গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয়ত, হরিয়ানাও স্পষ্ট করে দিল যে, ভারতের একটি বড় অংশেই ভোট এখন দ্বিমুখী— বিজেপি বনাম বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তির। বিজেপি-বিরোধী জোট রাজনীতিকে এই ‘বাইনারি’র কথাটিও মাথায় রাখতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE