E-Paper

খাঁড়ার ঘা

গত এপ্রিলে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর কাশ্মীর থেকে ঘরে ফিরতে চাওয়াদের মাত্রাতিরিক্ত বিমানভাড়ার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। শ্রীনগর থেকে কলকাতায় ফেরার বিমানভাড়া এক সময় সর্বোচ্চ ৮২ হাজার টাকার কাছে পৌঁছয়।

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৬:৫২

গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় পর্যটনস্থলে ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং তৎপরবর্তী ঘটনাবলি থেকে স্পষ্ট— দুর্যোগ পর্যটকদের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত শাঁখের করাতের ন্যায় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাঁরা না পারেন বিপর্যস্ত এলাকায় থেকে নিজ পরিকল্পনাটি বজায় রাখতে, না পারেন স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে। সাম্প্রতিক উত্তরবঙ্গ বিপর্যয়ে এই প্রবণতা আবারও দেখা গেল। সময়টি উৎসবের। উত্তরের পাহাড়-জঙ্গলে ভরা পর্যটনের মরসুম। ঠিক সেই মুহূর্তে এমন আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু পর্যটক বাধ্য হয়েছেন ভ্রমণ অসমাপ্ত রেখে ঘরে ফেরার চেষ্টা করতে। কিন্তু বিপদ তখনও তাঁদের পিছু ছাড়েনি। একাধিক ট্রেন বাতিল, শেষ মুহূর্তে ট্রেনের টিকিট বাতিল প্রভৃতির অভিঘাতে তাঁরা বিকল্প পথের সন্ধানে যখন ব্যস্ত, দেখা গেল বেসরকারি সংস্থার বাস এবং বিমানের ভাড়া আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে। পরবর্তী কালে প্রশাসনিক উদ্যোগে অনেক পর্যটককে উদ্ধার করে কলকাতায় ফেরানোর ব্যবস্থা করা হলেও, বহু জন তার আগেই অন্তত দু’গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ঘরে ফেরার পথ ধরেছেন।

এই পরিস্থিতিকে বিপর্যয়-ব্যবসা বলা চলে। গত এপ্রিলে পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানার পর কাশ্মীর থেকে ঘরে ফিরতে চাওয়াদের মাত্রাতিরিক্ত বিমানভাড়ার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। শ্রীনগর থেকে কলকাতায় ফেরার বিমানভাড়া এক সময় সর্বোচ্চ ৮২ হাজার টাকার কাছে পৌঁছয়। কেন্দ্রের অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে শ্রীনগর রুটে ভাড়া না বাড়ানো এবং অতিরিক্ত বিমান চালানোর নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বহু সময় লেগেছিল। বর্তমানে উৎসবের মরসুমে ব্যস্ত রুটে বিমানভাড়া যাতে বৃদ্ধি না পায়, তার জন্য কড়া নজরদারি চালাচ্ছে দেশের বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ডিজিসিএ। তা সত্ত্বেও, উত্তরবঙ্গ বিপর্যয়ের পর বাগডোগরা থেকে সরাসরি কলকাতা আসার বিমানভাড়া পৌঁছেছিল ১৬ হাজার টাকার কাছে। অগত্যা সময়ে ঘরে পৌঁছতে বহু যাত্রীই বেসরকারি বাসের উপরে ভরসা করেছিলেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ভাড়ার দাবিতে হয়রানি অব্যাহত থাকে। বাড়তি ভাড়ার কারণ হিসাবে বেসরকারি বাসে ‘ডায়নামিক ফেয়ার’-এর তত্ত্বটি তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, চাহিদা বাড়লে ভাড়াও বাড়বে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যেখানে বিদেশে বিপর্যস্তদের বিনামূল্যে ঘরে ফেরানোর প্রয়াস দেখা যায়, এ দেশে— বিনামূল্যে না হোক, অন্তত ন্যায্য মূল্যের বিনিময়ে— ধ্বস্ত, বিপন্ন মানুষকে ঘরে ফেরানোর দায়িত্বটি কি সরকারের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাগুলিরও নয়?

অবশ্য, উত্তরবঙ্গ কেন, খাস মহানগরেও বৃষ্টিতে জল জমলেই ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাব থেকে শুরু করে টোটো পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকতে থাকে। এবং ‘জনস্বার্থ’-এ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিশ্চুপ থাকেন। বেসরকারি ক্ষেত্রকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে, এমনটা কাম্য নয়। কিন্তু দুর্যোগকালে, অ-স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অসহায়তার অন্যায় সুবিধা লোটার প্রবণতাটি যাতে বন্ধ হয়, তার ব্যবস্থা করা জরুরি। উত্তরবঙ্গের বহু হোম-স্টে, হোটেলের মালিক এই সময় পর্যটকদের বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, বহু গাড়িচালকও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্বল্পকালীন এই ক্ষতিটুকু স্বীকারের মাধ্যমে তাঁরা এক মহার্ঘ জিনিস অর্জন করেছেন— মানবিকতা। কেবল মহার্ঘ নয়, বিলুপ্তপ্রায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Diasaster Transport Public Transport

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy