E-Paper

অসময়ের বন্ধু

এমনিতে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক বরাবর উষ্ণই থেকেছে। বস্তুত, মলদ্বীপের পরিকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ০৬:৩০

ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করলে তিক্ত সম্পর্কও মেরামত হয়। সম্প্রতি মলদ্বীপের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের সূত্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বীপরাষ্ট্রে সফর এবং দু’তরফের বক্তব্য তেমনই ইঙ্গিত দিল। মলদ্বীপের উন্নয়ন ও পরিকাঠামোগত চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দ্বীপরাষ্ট্রটিকে ৪৮৫০ কোটি টাকার ঋণদানের কথা ঘোষণা করেন মোদী। ভারত সরকারের দেওয়া ঋণের উপরে মলদ্বীপের বার্ষিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতাকেও হ্রাস করা হল। পাশাপাশি মৎস্য, স্বাস্থ্য, পর্যটন এবং ডিজিটাল আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হয় দুই দেশের মধ্যে। অন্য দিকে, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি, মলদ্বীপের প্রধান বিরোধী দল-সহ রাজনীতির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। অর্থাৎ, কূটনীতির দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মালে-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে এক বাস্তববাদী বিদেশনীতিই গ্রহণ করল দিল্লি।

এমনিতে ভারত-মলদ্বীপ সম্পর্ক বরাবর উষ্ণই থেকেছে। বস্তুত, মলদ্বীপের পরিকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। রাজনৈতিক সঙ্কট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এমনকি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাতে দিল্লিকেই প্রথম পাশে পেয়েছিল মালে। অথচ, বিবিধ কারণে গত এক দশকেরও বেশি সময়ে তিক্ত হয়ে উঠে দুই দেশের সম্পর্ক। বিশেষত, দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন-এর চিন ঘনিষ্ঠতার জেরে। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবং নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারের জোরে ২০২৩ সালে ক্ষমতায় আসেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ়্জ়ু। তার পরই আরও প্রকট হয় তাঁর ভারত-বৈরী মনোভাব। ২০২৪-এর গোড়ায় চিন সফর এবং পরে দ্বীপরাষ্ট্রটি থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান ছিল দিল্লির সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক দূরত্ব বৃদ্ধিরই সঙ্কেত। এর মাঝে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রীর অবমাননাকর মন্তব্য পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। যদিও সাম্প্রতিক কালে মুইজ়্জু-র গলায় শোনা গিয়েছে উল্টো সুর। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মন্দ। বাজেট ঘাটতি এবং ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রাভান্ডারের জেরে এমনিতেই ধুঁকছে মলদ্বীপের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক স্তরে পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা হ্রাসের ক্ষেত্রে বেজিং-এর তরফে উল্লেখযোগ্য সহায়তা মেলেনি। বরং, ভারতের সাহায্যেই শেষ পর্যন্ত ঋণখেলাপি এড়াতে সক্ষম হয় মালে। মুইজ়্জু-র বারংবার উস্কানি সত্ত্বেও, সংযম বজার রেখে মলদ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে দিল্লি। ফলে, মুইজ়্জ়ুর সাম্প্রতিক ভারত-বন্দনায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব কি শেষ পর্যন্ত বুঝল মালে?

লক্ষণীয়, দিল্লির সঙ্গে মালে-র সম্পর্কের বরফ এমন সময় গলছে, যখন অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ভারতের। ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতিতে ভারত মহাসাগরে বাণিজ্য এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তার সূত্রে এমনিতেই বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটির। তবে দিল্লির এ কথাও বিস্মৃত হলে চলবে না যে, মলদ্বীপে নিজের উপস্থিতি ইতিমধ্যেই মজবুত করে রেখেছে বেজিং। তা ছাড়া, পরিস্থিতির চাপে এখন ভারত-মুখী হলেও, দিল্লির উপর অতিনির্ভরশীল হতে চাইবে না মালে-ও। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা দুই পক্ষেই বুদ্ধির কাজ হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Narendra Modi Maldives

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy