E-Paper

জলাশয় রক্ষা

শহরের প্রধানতম দুই সরোবরের প্রতিটি দরজা বাঁশ দিয়ে আটকানো থেকেছে, সরোবরকে রক্ষায় রাস্তা জুড়ে পুলিশ পাহারা চলেছে। এবং পুজো সমাপ্ত হয়েছে দুই সরোবরকে ঘিরে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৩৬

ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়— বহু প্রচলিত কথাটির মর্যাদা অন্তত এই বছর ছটপুজোয় রাখল কলকাতা পুরপ্রশাসন। শহরের পরিবেশ নিয়ে তাদের দীর্ঘ সীমাহীন উদাসীনতা এবং বহুবিধ আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের মধ্যে ছটপুজো, সামান্য হলেও, আশার আলোটি জ্বালিয়ে রাখল। ছটপুজোকে কেন্দ্র করে কলকাতার ফুসফুসস্বরূপ দুই জলাশয়— রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরে মাত্রাছাড়া দূষণের অভিযোগ তুলে পরিবেশকর্মীদের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের ফল অবশেষে পেতে শুরু করেছে মহানগর। যত্র তত্র পড়ে থাকা পূজার সামগ্রী, বাজির ধোঁয়ার দাপটে জলজ এবং পাড় সংলগ্ন বাস্তুতন্ত্রের যে অপরিসীম ক্ষতি হত, তা যে পূরণ হওয়ার নয়— সে কথা বোঝাতে বিচার বিভাগকে উদ্যোগী হতে হয়েছিল। সেই পথেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল খোদ প্রশাসন, ‘রীতি-রেওয়াজ’-এর অস্ত্র হাতে। অতঃপর ছটের দিনটিতে চেনা চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছিল— আদালতের নির্দেশ বনাম পুণ্যার্থীদের একগুঁয়েমির দড়ি টানাটানি, যাতে প্রশাসনও প্রচ্ছন্ন মদত জুগিয়ে চলছিল। সেই চিত্র আপাতত অতীত। বিষয় যখন পরিবেশ, তখন ধর্মকে তার বিরুদ্ধে লড়িয়ে না দিয়েও যে সামান্য সদিচ্ছার খরচে বিকল্প পথ তৈরি করা যায়, সে কথা পুরপ্রশাসন অবশেষে বুঝেছে, বুঝেছেন পুণ্যার্থীরাও। সুতরাং, এ বছরও শহরের প্রধানতম দুই সরোবরের প্রতিটি দরজা বাঁশ দিয়ে আটকানো থেকেছে, সরোবরকে রক্ষায় রাস্তা জুড়ে পুলিশ পাহারা চলেছে। এবং পুজো সমাপ্ত হয়েছে দুই সরোবরকে ঘিরে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ছাড়াই।

সরোবর রক্ষায় এই সাফল্য শুধুমাত্র প্রবেশপথটিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়ার মধ্যেই লুকিয়ে নেই, রয়েছে পরিচ্ছন্ন সুসংহত সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে। এক দিকে যেমন শহরের বিভিন্ন পুকুর এবং কৃত্রিম জলাশয় মিলিয়ে ১৮৮টি জায়গা আগেই প্রস্তুত রাখা হয়েছিল, তেমনই ময়লা পরিষ্কারের জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মী এবং ১০০ দিনের কর্মীদের মোতায়েনও করা ছিল। ব্যবস্থা করা হয়েছিল গঙ্গার ঘাটগুলি পরিষ্কারেরও। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা যে কোনও প্রথায় পরিবর্তন আনতে হলে নিয়মের মধ্যে থেকেও সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিকল্প পথে চিন্তা করা এবং সাধারণ মানুষের কাছে সেই চিন্তাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা— দুই-ই আবশ্যক। এবং তা সমস্ত উৎসবের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। দুর্গাপুজো-সহ যে কোনও বিসর্জন অন্তে জলদূষণ এখনও উদ্বেগের বিষয়। গঙ্গায় বিসর্জনের দূষণ প্রশাসনিক উদ্যোগে পূর্বের চেয়ে অনেকটাই হ্রাস পেলেও অন্য জলাশয়গুলির এখনও দুরবস্থার সীমা থাকে না। ছটপুজোর শিক্ষা সেখানেও কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, অতঃপর ভেবে দেখতে পারে স্থানীয় প্রশাসনগুলি।

এবং অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে উৎসবের অন্য ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়েও। রাত পর্যন্ত শব্দবাজি, সাউন্ড বক্সের তাণ্ডবে দীপাবলির মতোই ছটপুজোতেও শহরবাসীর কর্ণযুগল রক্ষা পায়নি। ভাবতে অবাক লাগে, যে প্রশাসন দুই সরোবরে মাছি পর্যন্ত গলতে না দেওয়ার নির্দেশ দেয়, সেই প্রশাসনই নিঃশব্দ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হাসপাতাল চত্বরে শব্দবাজির দাপটের সামনে কার্যত কুঁকড়ে থাকে। নগর-রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের এমন দ্বৈত ভূমিকাই শেষ পর্যন্ত কোনও উৎসবে প্রশাসনিক সাফল্যকে সর্বাঙ্গসুন্দর হতে দেয় না, না কি লক্ষ্মীলাভের প্রবল বাসনায় এই কলঙ্কের দাগটুকু রেখে দেওয়া হয়, স্বেচ্ছায়?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rabindra Saobar Chhath Air pollution Sound pollution Subhas Sarobar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy