E-Paper

মিত্রান্বেষী

মুম্বই-আমদাবাদ দ্রুত-গতি রেল প্রকল্পের জন্য কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে টোকিয়ো। জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দানের ক্ষেত্রে অন্যতম গ্রহীতা ভারত।

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪০

অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক কারণে ক্ষেত্রবিশেষে তিক্ত সম্পর্ক যেমন পারস্পরিক অংশীদারিতে পরিণত হতে পারে, তেমনই ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি বহনকারী মসৃণ সম্পর্কও বিপর্যস্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে তেমনই এক টালমাটাল পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে ভারত। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি পূর্বমুখী হতে বাধ্য করেছে ভারতকে। সেই সূত্রেই অতি সম্প্রতি এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শক্তি জাপানে কৌশলগত সফর সেরে এলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সফরকালে জাপান ভারতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে: ২০২২ সালে ৫ ট্রিলিয়ন জাপানি ইয়েনের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩৫ সালের মধ্যে ১০ ট্রিলিয়ন জাপানি ইয়েনে উন্নীত হয়েছে। যৌথ বিবৃতি ছাড়াও দুই পক্ষ থেকে একটি ‘২০৩৫ ভিশন স্টেটমেন্ট’ পেশ করা হয়, যার মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সংযোগ এবং সবুজ প্রযুক্তি রূপান্তরের মতো সহযোগিতার আটটি ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি, সেমিকন্ডাকটর, পরিবেশবান্ধব শক্তি, টেলিকম, ফার্মাসিউটিক্যাল, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ ছাড়াও নতুন ও উদীয়মান এআই প্রযুক্তির মতো কৌশলগত ক্ষেত্রগুলিতে সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নির্বিঘ্ন রাখতে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উদ্যোগ চালু করছে দুই দেশ। শুধু তা-ই নয়, এ-ও ঘোষণা করা হয়েছে যে, ২০৩০-এর মধ্যে ভারতে তাদের ই১০ সিরিজ়ের বুলেট ট্রেন চালু করবে জাপান। বস্তুত, মুম্বই-আমদাবাদ দ্রুত-গতি রেল প্রকল্পের জন্য কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে টোকিয়ো। জাপানের বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দানের ক্ষেত্রে অন্যতম গ্রহীতা ভারত।

অন্য দিকে, গত দু’দশকে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গাঢ় হয়েছে মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টার জেরে। যদিও মোদীর সফরের শেষে জারি করা যৌথ বিবৃতিতে চিনের কোনও উল্লেখ করা হয়নি, তবুও এটা স্পষ্ট যে পূর্ব চিন এবং দক্ষিণ চিন সাগরের পরিস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষের ‘গুরুতর উদ্বেগ’ এবং নৌ-পরিবহণের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে এমন ‘যে কোনও একতরফা পদক্ষেপ’-এর তীব্র বিরোধিতা বেজিংকে লক্ষ্য করেই। অন্য দিকে, চিন-জাপান অ-মিত্রতার ইতিহাস অনেক পুরনো। ভারত এবং জাপান উভয়ই কোয়াড গোষ্ঠীর সদস্য এবং এ বছরের শেষে গোষ্ঠীর পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার কথা দিল্লিরই। ইতিমধ্যে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং কোয়াডের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুই দেশই যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক লক্ষ্যকে চরিতার্থ করতে দ্বৈত সম্পর্ক জোরদার করা দুই দেশের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ।

ঘটনা হল, সদস্যদের যৌথ নিরাপত্তা স্বার্থের কারণে কোয়াড তার কৌশলগত লক্ষ্যে অবিচল থাকবে, এমনটা আশা করলেও বিশ্বব্যাপী ক্রমপরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে ভারতের সংবেদনশীলতা সহজবোধ্য। বিশ্ব পরিসরে আজ মিত্রের বড়ই অভাব দিল্লির। এমতাবস্থায় আগামী দিনে দিল্লি মিত্র অন্বেষণের পথেই এগিয়ে চলবে, না কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খুশি করতে তাঁর নীতি পুনর্নির্মাণ করবে, সময়ই তা বলবে। তবে, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে দিল্লিকে তার ঐতিহ্যবাহী ভারসাম্যমূলক নীতির চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Diplomacy Donald Trump

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy