E-Paper

বিপর্যয়ের মেঘ

প্রাণহানি, স্তব্ধ পরিবহণ আর জলে ডোবা রাস্তার মুম্বই মনে করিয়ে দিয়েছে ২০০৫ সালের ২৬ জুলাইয়ের সেই ভয়ঙ্কর দিনকে, যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৯৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল গোটা শহর।

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ০৫:১৭

ভারতের পক্ষে এ বড় নির্দয় বর্ষা। ঘন ঘন বিপর্যয়ে তছনছ হয়েছে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল। উত্তরকাশীর ধারালী গ্রামকে হড়পা বানে সম্পূর্ণ ধুয়ে দেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ার জেলার একাংশ। তীর্থযাত্রী অধ্যুষিত চিসোতি গ্রামে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নেমে আসা কাদাজলের স্রোতে তলিয়ে গিয়েছেন ৬০-এর অধিক মানুষ। অগস্টের শেষেও প্রকৃতির রোষ কমার চিহ্নমাত্র নেই। কাঠুয়াতে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বান প্রাণ কেড়েছে অন্তত সাত জনের। সম্প্রতি বৃষ্টি-ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে চামোলির থারালীও। বিপর্যয়ের মেঘ শুধুমাত্র পাহাড়ি অঞ্চলের মাথাতেই জমে থাকেনি, নেমে এসেছে মুম্বইয়ের মতো অত্যাধুনিক নগরেও। অগস্টের বৃষ্টির কোটা মাত্র চার দিনে পূরণ হয়েছে সেখানে। প্রাণহানি, স্তব্ধ পরিবহণ আর জলে ডোবা রাস্তার মুম্বই মনে করিয়ে দিয়েছে ২০০৫ সালের ২৬ জুলাইয়ের সেই ভয়ঙ্কর দিনকে, যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৯৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে ডুবে গিয়েছিল গোটা শহর।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় রুখে দেওয়া অসম্ভব। কিন্তু যে অনুঘটকগুলি এই বিপর্যয়ের তীব্রতা বহু গুণ বৃদ্ধি করে, অবিলম্বে প্রয়োজন তাকে সংশোধনের। প্রায় প্রতি বর্ষায় মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা, বেঙ্গালুরুর মতো শহরের ডুবে গিয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলার পিছনে রয়েছে প্রশাসনিক অপদার্থতা। মুম্বইতে বর্ষায় অধিক বৃষ্টি নতুন নয়। কিন্তু গত কয়েক বছরে এ শহরে ‘উন্নয়ন’-এর যে জোয়ার দেখা গিয়েছে, তার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে বহু পিছিয়ে পড়েছে নিকাশিব্যবস্থার সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন-প্রতিরোধী পরিকাঠামো গঠনের মতো অত্যাবশ্যক পদক্ষেপগুলি। তদুপরি, ভুলে-ভরা নগর পরিকল্পনা, আবহাওয়ার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও প্রস্তুতিতে খামতি নাগরিক যন্ত্রণাকে আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি করেছে। এবং এই সমস্যা মুম্বইয়ের নিজস্ব নয়। ভারতের প্রায় প্রতিটি নগরেই যে ‘শহুরে বন্যা’র তোড় দেখা যাচ্ছে, তার মূলেও রয়েছে পরিকল্পনাহীন নগর সম্প্রসারণ, অবরুদ্ধ নিকাশি-পথ, যত্রতত্র আবর্জনা, প্লাস্টিক জমার সমস্যা। বদলে যাওয়া বৃষ্টিপাতের চরিত্র এই পরিস্থিতিকে আরও অসহনীয় করে তুলেছে।

পাহাড় এবং সমতলের ধ্বংসের রূপটি পৃথক, কিন্তু অভিঘাত প্রায় একই। সাধারণ নাগরিকের জীবন ও রুজি-রোজগারে টান পড়া। একের পর এক বিপর্যয় চরম আবহাওয়ার মুখে ভারতে প্রশাসনিক অ-প্রস্তুতিকে প্রকট করে তোলে। টাকার অঙ্কেও ক্ষতির মূল্যটি বড় কম নয়। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৫ বছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভারতের ক্ষতির পরিমাণ ১২.৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। সুতরাং শুভবুদ্ধির জাগরণ, এই মুহূর্তে, আবশ্যক। নিকাশিব্যবস্থার সংস্কার আশু প্রয়োজন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থাটিকেও আরও নিখুঁত করতে হবে। গত বছর কেরলের ওয়েনাড়ের ভয়ঙ্কর ভূমিধসের পরিপ্রেক্ষিতে এই দাবিটি উঠেছিল। দেশ জুড়ে সেই ব্যবস্থাপনা নির্মাণ সবে শুরু হয়েছে। প্রত্যন্ত জায়গাটিতেও সেই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কত দ্রুত পৌঁছবে, তার উপর নির্ভর করবে বহু মানুষের জীবন-জীবিকা। আবহাওয়া দফতর, বিজ্ঞানী, পরিকল্পনাবিদ, এবং স্থানীয়-রাজ্য-জাতীয় স্তরের কর্তৃপক্ষের মধ্যে নিবিড় সংযোগ স্থাপন ক্ষতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। প্রশ্ন হল, সেই সংযোগ কে করবে, কবে?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Disaster Climate Crisis

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy