E-Paper

বাণিজ্যের নতুন পর্ব

নয়াদিল্লি একে ‘সার্বিক ধাক্কা’ না বলে ‘ভাল-মন্দ মেশানো সিদ্ধান্ত’ হিসাবে দেখছে, অন্তত প্রাথমিক ভাবে।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩৮
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আমেরিকা থেকে ভারতে যে পণ্য রফতানি করা হয়, ভারত নাকি তার উপরে প্রকাশ্য এবং গোপন পন্থায় মোট ৫২ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করে। শুল্কের এই হিসাবটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কোথা থেকে পেল, ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রক এখনও সে প্রশ্ন করেনি। কেন, সে উত্তরটি সহজ— দুনিয়ার কোন দেশ আমেরিকান রফতানির উপরে কী হারে ‘প্রকৃত আমদানি শুল্ক’ আরোপ করছে, হোয়াইট হাউস নিজস্ব গণিতবিদ্যা প্রয়োগ করে সেই অঙ্ক কষেছে। ভারতের ক্ষেত্রে ধার্য হয়েছে ৫২ শতাংশের ‘অপরাধ’— যেমন, ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে ‘প্রকৃত আমদানি শুল্ক’-র হার ৯০%, চিনের ৬৭%। নয়াদিল্লি যদি বোঝে যে, এ নিয়ে তর্ক বাড়িয়ে লাভ নেই, তা হলে সেই উপলব্ধিকে ভিত্তিহীন বলা ঠিক হবে না। ‘দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা’ এই ‘অন্যায্য বাণিজ্যের বোঝা’ থেকে আমেরিকাকে মুক্তি দিতে ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি মতো রেসিপ্রোকাল ট্যারিফস বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। হোয়াইট হাউস সূত্র জানাচ্ছে, কোন দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ (অর্থাৎ, সে দেশ থেকে আমেরিকা মোট যত ডলারের পণ্য আমদানি করে, এবং সে দেশে মোট যত ডলারের পণ্য রফতানি করে, তার ব্যবধান) কত, তার ভিত্তিতেই স্থির হয়েছে পাল্টা শুল্কের হার। ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ৪৫.৬৭ বিলিয়ন ডলার— সে দেশের মোট ১.২ ট্রিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতির ৩.৮%। ভারতের ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্কের হার ধার্য হয়েছে ২৬%। তার মধ্যে ১০% দুনিয়ার সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য— ভারতের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক আরও ১৬%।

নয়াদিল্লি একে ‘সার্বিক ধাক্কা’ না বলে ‘ভাল-মন্দ মেশানো সিদ্ধান্ত’ হিসাবে দেখছে, অন্তত প্রাথমিক ভাবে। খেয়াল রাখা ভাল, আমেরিকার ট্রেজ়ারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, যদি কোনও দেশ আতঙ্কিত হয়ে উল্টোপাল্টা কিছু করে না বসে— অর্থাৎ, রেসিপ্রোকাল ট্যারিফের উপরে প্রতিস্পর্ধী শুল্ক না বসায়— তা হলে তাদের পণ্যের উপরে আমদানি শুল্কের হার পরে ফের বিবেচনা করা যেতে পারে। কাজেই, ভারতের পক্ষে সাবধানি পদক্ষেপই বিধেয়। বিশেষত, গত কয়েক বছরে বাণিজ্যসঙ্গী হিসাবে আমেরিকা ভারতের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে— ২০১১ সালে ভারতের মোট রফতানির ১০% যেত আমেরিকায়; ২০২৪-এ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮%। সুতরাং, অন্তত মাঝারি মেয়াদেও আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা ভারতের স্বার্থেই প্রয়োজন। তার জন্য ভারত আরও কিছু ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমাবে বলে অনুমান করা চলে— দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি প্রণয়ন করা হবে কিছু দিনের মধ্যেই। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে চড়া শুল্ক বিষয়ে আমেরিকা আপত্তি জানিয়ে রেখেছে।
আশা করা যায় যে, আমেরিকার সব শর্ত মেনে না-নিয়েও কী ভাবে পাল্টা শুল্কের হার কমানো সম্ভব হতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকার সে পথ খুঁজবে।

কিন্তু, এ ছাড়াও একটি অন্য প্রশ্ন থাকছে। কোন দেশের উপরে কেন বর্ধিত পাল্টা শুল্ক চাপানো হচ্ছে, আমেরিকার বাণিজ্য দফতর তার একটি খতিয়ান পেশ করেছিল। ভারতের ক্ষেত্রে চড়া শুল্কের পরিচিত অভিযোগের পাশাপাশি কয়েকটি কথা ছিল— যেমন, এ দেশে রিটেল ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি বিষয়ে কিছু বাধানিষেধ আছে; ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থারই আধিপত্য; বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য প্রতিকূল নিয়ম, ইত্যাদি। আমদানি শুল্ক নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে এই কথাগুলি স্বভাবত ওঠে না। এখন যে উঠছে, তা একটি সংশয় তৈরি করছে— বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আমেরিকা কি নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ভিন দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রেও হস্তক্ষেপ করার কথা ভাবছে? ‘আর্থিক উদারীকরণ’-এর নতুন পর্ব? সেই চাপ যদি আসে, ভারত তা সামলাতে তৈরি তো?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump US Tariff

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy