Advertisement
E-Paper

বার্ধক্যে সাবধান

২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বে সর্বাধিক দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত অসুখ বহনকারী দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। অ্যাজ়মার ক্ষেত্রে যেমন এ দেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে।

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৫

সম্প্রতি রোগ উপশমকারী চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে প্রতি ১০০ জনে ১২ জন ষাট-অতিক্রান্ত মানুষের এই সহায়ক চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গে এই হার প্রতি ১০০ জনে ১৭, ভারতের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই বিশেষ ধরনের সহায়ক চিকিৎসা সাধারণত জটিল রোগাক্রান্তদের ক্ষেত্রে জরুরি। উদ্দেশ্য, ব্যথা কমানো, রোগের উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং মানসিক চাপ হ্রাসের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে অসুস্থ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মান বৃদ্ধি। প্রথাগত ভাবে ক্যানসার, স্ট্রোক, হাড়ের নানা অসুখ এবং স্নায়ু সংক্রান্ত রোগের ক্ষেত্রেই এই সহায়ক চিকিৎসা অত্যাবশ্যক মনে করা হত। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই সমস্ত রোগকে পিছনে ফেলে তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে ‘ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজ়অর্ডারস’ বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত অসুখ। এবং একই সঙ্গে এই ধারণাটিকেও ভেঙে দিয়েছে যে, একমাত্র ক্যানসার এবং স্ট্রোকের ক্ষেত্রেই অন্যের উপর নির্ভরতা এবং দীর্ঘ চিকিৎসা-যত্নের প্রয়োজন পড়ে।

শুধুমাত্র ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রেই নয়, সার্বিক ভাবেও আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানের নিরিখে ভারতে শ্বাসজনিত রোগের চিত্রটি ভয়াবহ। ২০১৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বে সর্বাধিক দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত অসুখ বহনকারী দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। অ্যাজ়মার ক্ষেত্রে যেমন এ দেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে। গোটা বিশ্বে অ্যাজ়মাজনিত কারণে মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই ঘটে এখানে। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ় (সিওপিডি)-এর ক্ষেত্রেও তা-ই। সবচেয়ে বেশি সিওপিডি-র রোগী ভারতেই পাওয়া যায়। এই পরিসংখ্যান অপ্রত্যাশিত নয়। এর কারণ, ভারতে বায়ুদূষণের মাত্রাছাড়া বৃদ্ধি। প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ বাইরে কাজ করতে গিয়ে বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর কণার বিপজ্জনক মাত্রার মুখোমুখি হচ্ছেন। নগরায়ণ যত তার গতি বৃদ্ধি করছে, পাল্লা দিয়ে দূষিত হচ্ছে বাতাস। সেই দূষণ রোধ করতে, এখনও, কেন্দ্র ও অধিকাংশ রাজ্য সরকার দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপে নিতান্তই অনাগ্রহী। ফলত, যানবাহন, কলকারখানা থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত ধোঁয়া, ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো, শহরে নির্মাণকার্যের ফলে দূষক কণার বাড়বাড়ন্তের শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ বছর নভেম্বরে দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইন্ডেক্স পৌঁছেছিল ১০০০-এর কাছে, যা প্রায় এক দিনে ৪৯টি সিগারেট খাওয়ার সমান। এতটা দুর্বিষহ না হলেও কলকাতার দূষণ নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে। বিশেষত দীপাবলি পর্বে অনিয়ন্ত্রিত বাজির ব্যবহার এ বছরও শহরের কিছু অংশের বাতাসকে দ্রুত খারাপ থেকে ‘অতি খারাপ’-এর পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে।

অথচ, এই দূষণ ঠেকানোর উপায়গুলি কেন্দ্র, রাজ্য উভয় সরকারেরই জানা। এর জন্য নির্দিষ্ট আইনও আছে। কিন্তু আইন প্রয়োগে অনিচ্ছা এবং প্রশাসনের একাংশের অসৎ মনোবৃত্তি বায়ুদূষণ রোধের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। অনুমান, ২০২২ সালের ১৫.৩ কোটি থেকে ২০৫০ সাল নাগাদ তা দাঁড়াবে ৩৪.৭ কোটিতে। এঁদের জন্য সহায়ক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হলে তদনুযায়ী পরিকাঠামো প্রস্তুত করা এবং বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর নিয়োগ আবশ্যক। সেই আর্থিক প্রস্তুতি এ দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের আছে তো?

medical treatment Respiratory problems Respiratory Health
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy