E-Paper

অনাবশ্যক

ভারতীয় সংবিধানের ১৫ নম্বর ধারাতে জাত বা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যকে অপরাধ বলে নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তফসিলি জাতি ও জনজাতি গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের নির্যাতন রুখতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে ১৯৮৯ সালের আইনে।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৫ ০৪:৪০

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্ণবৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে কর্নাটক সরকার একটি নতুন আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে, যার নামকরণ করা হয়েছে রোহিত ভেমুলার নামে। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঁচিশ বছরের দলিত ছাত্র রোহিতের আত্মহত্যা দেখিয়েছিল, একবিংশ শতকের ভারতেও দলিত, জনজাতি, ওবিসি বা ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বৈষম্য, বিদ্বেষ এবং হিংসা কত তীব্র হতে পারে। বস্তুত রোহিতের মৃত্যুর অনেক আগেই বিভিন্ন অনুসন্ধানে প্রকাশ হয়েছিল যে, বর্ণ-হিংসা ধারাবাহিক ভাবে ঘটে চলেছে। ২০০৭ সালে এস কে থোরাট কমিটি, ২০১২ সালে মুঙ্গেকর কমিটি দেখিয়েছিল, মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত-জনজাতি গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি নানা উপায়ে দুর্ব্যবহার করা হয়। তাদের জাতি উল্লেখ করে ডাকা, বৃত্তির সুযোগ থেকে বাদ দেওয়া, সংরক্ষিত আসনে (কোটা) পড়ার সুযোগ পেয়েছে বলে চিহ্নিত করা এবং অসম্মান করা, শ্রেণিকক্ষে বা তার বাইরে কোণঠাসা করা, ইত্যাদি। আইআইটি, আইআইএম, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যার ঘটনা অধিকাংশই ঘটছে দলিত-জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। পড়াশোনা শেষ না করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও তফসিলি জাতি-জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যেই বেশি। এঁদের মধ্যে মেয়েরা বিশেষ ভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অতএব শিক্ষাক্ষেত্রে বর্ণবৈষম্য, অসম্মান, হিংসা দূর করা একটি অত্যন্ত জরুরি কাজ, সে বিষয়ে প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন কেবল এই যে, তার জন্য একটি নতুন আইনের প্রয়োজন ছিল কি? চালু আইন এবং বিধিনিষেধের যথাযথ প্রয়োগেই কি কাজ হত না?

ভারতীয় সংবিধানের ১৫ নম্বর ধারাতে জাত বা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যকে অপরাধ বলে নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তফসিলি জাতি ও জনজাতি গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের নির্যাতন রুখতে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে ১৯৮৯ সালের আইনে। এ ছাড়া, বিশেষ ভাবে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে জাত, ধর্ম, লিঙ্গ প্রভৃতির ভিত্তিতে বৈষম্য বা বিদ্বেষের ধরনগুলি চিহ্নিত করা, এবং অভিযুক্তের শাস্তির জন্য ব্যবস্থাও তৈরি হয়েই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশদ নির্দেশিকা দিয়েছিল ২০১২ সালে। শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন গ্রহণ, বাছাইয়ের প্রক্রিয়া, পরীক্ষায় নম্বর দান, বৃত্তি দান, ফলপ্রকাশে বৈষম্য থেকে শুরু করে ক্লাসরুমে, হস্টেলে, ক্যান্টিনে, লাইব্রেরিতে অন্যদের থেকে আলাদা জায়গা নির্দিষ্ট করা, বা আলাদা ধরনের ব্যবহারকে অপরাধ বলে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে বৈষম্য-বিরোধী আধিকারিক নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। এক দশকেরও বেশি আগে তৈরি এই ব্যবস্থা, কিন্তু তার প্রয়োগ হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বিধিনিয়ম এড়িয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের পদ হয় শূন্য রাখছে, না হলে তাঁকে যথাযথ ক্ষমতা দিচ্ছে না। পুরনো অস্ত্র খাপে ভরে রেখে নতুন অস্ত্র নির্মাণের বরাত যে দেয়, তার যুদ্ধের ইচ্ছা নিয়ে সংশয় জাগতে বাধ্য।

নিত্যনতুন যুদ্ধ-ঘোষণা রাজনীতির অস্ত্র। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, জিতে এলে রোহিত ভেমুলার নামাঙ্কিত আইন তৈরি করবে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসনের জন্য। এপ্রিলের গোড়ায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কর্নাটক, তেলঙ্গানা এবং হিমাচল প্রদেশের কংগ্রেস সরকারকে লিখিত ভাবে অনুরোধ করেন এই আইন কার্যকর করতে। কর্নাটক প্রথম উদ্যোগী হল। রোহিতের নামাঙ্কিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, দলিত-জনজাতি গোষ্ঠীর ছাত্রছাত্রীর নির্যাতনের ঘটনায় দোষীর এক বছরের কারাবাস এবং দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি অনুদান হারাতে পারে, ইত্যাদি। শাস্তির খাঁড়া উদ্যত করার চাইতে, অভিযোগ গ্রহণ ও নিরসনের একটি সক্রিয়, তৎপর ব্যবস্থা চালু রাখা, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে বর্ণবৈষম্যের আকার-প্রকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি— এই কাজগুলি নিয়মিত করে যাওয়া দরকার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rohith Vemula Rohith Vemula Suicide Karnataka Government Caste Discrimination Educational Institutes

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy