Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Mobile Phone Addiction

বড়রাও জানেন কি

মোবাইল ফোনকে বাদ দিয়ে আজকের কিশোরদের জীবন কল্পনা করার উপায় নেই। তার প্রয়োজনও নেই। দুনিয়া যে পথে চলছে, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

Picture of a boy using smartphone.

অল্প বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে উদ্বেগের চিত্রটি ভারত-সহ গোটা বিশ্বেই কমবেশি এক। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪০
Share: Save:

এগারো বছর না-হওয়া পর্যন্ত মেয়ের হাতে মোবাইল দেননি তিনি, জানিয়েছেন এক বহুজাতিক মোবাইল সংস্থার ব্রিটিশ কর্ণধার। আরও বলেছেন, ছেলেমেয়েরা যে বয়সেই মোবাইল ফোন হাতে পাক না কেন, অনলাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। অতি অল্প বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের মোবাইল আসক্তি নিয়ে উদ্বেগের চিত্রটি ভারত-সহ গোটা বিশ্বেই কমবেশি এক। তবে এটাও ঠিক, স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রটি যে শুধুমাত্র বার্তা বিনিময়ের স্বল্প পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। এই প্রবণতা আরও গতি পায় অতিমারি-উত্তর বিশ্বে। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে মোবাইল ফোন অ-পরিহার্য।

ঠিক মতো ব্যবহার করলে মোবাইলের উপযোগিতা সীমাহীন। প্রশ্ন হল ভারসাম্য বজায় রাখার— এ কথা মনে রাখার যে, মোবাইল ফোনকে নিজের প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে হবে, তার দাসত্ব করলে চলবে না। অত্যধিক মোবাইল ব্যবহারের কারণে বহু মানুষেরই শরীর-মন-জীবন পাল্টে যাচ্ছে বিবিধ স্তরে, এবং স্বভাবতই শিশু-কিশোরদের উপরে তার প্রভাব আরও বেশি। তাদের লেখাপড়ায় প্রভাব ফেলছে মোবাইল-আসক্তি, একই ভঙ্গিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে মজে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শরীর, ঘরের বাইরে না বেরোনোতেও ক্ষতি হচ্ছে শরীরের। বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে চার পাশের জগতের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গেও। অন্য দিকে, সাইবার অপরাধের জগৎও প্রভাব ফেলছে তাদের অপরিণতমনস্ক জীবনে। গোটা দুনিয়াতেই অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে— একটি সমীক্ষা বলছে, ভারতে সেই হার বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ফলে, ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

মোবাইল ফোনকে বাদ দিয়ে আজকের কিশোরদের জীবন কল্পনা করার উপায় নেই। তার প্রয়োজনও নেই। দুনিয়া যে পথে চলছে, তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু, বিপদগুলিও অতি স্পষ্ট, অতি ভয়ঙ্কর। এখানেই মা-বাবার, পরিবারের দায়িত্ব। ছোটরা বাইরের পৃথিবী সম্বন্ধে স্বভাবতই অজ্ঞ। ফলে, তাদের বড় রাস্তায় একা ছাড়ার আগে যেমন বহু বার হাত ধরে, সঙ্গে নিয়ে সেই রাস্তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, সাইবার দুনিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই বিধেয়। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, কোন পথে চললে কী বিপদ হতে পারে, বারংবার জানাতে হবে তাদের। পাশাপাশি খুলে রাখতে হবে বিপদে পড়লে গোড়াতেই সেই কথাটা বাড়ির বড়দের বলতে পারার মতো পরিসরও। আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে, এ কথাটা বারে বারে বলে দেওয়ার পরও যদি সন্তান হাত পুড়িয়ে ফেলে, বাবা-মা আগে সেই ক্ষতে মলম লাগান। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় ভুলের ক্ষেত্রেও এই আশ্রয়টা বজায় রাখা জরুরি। এখানে বড় প্রশ্ন— মা-বাবারা কি আদৌ জানেন যে, তাঁদের কর্তব্য কী? কোথায় সন্তানকে সাবধান করতে হবে, কোথায় পথ দেখাতে হবে, কোথায় বিপদের সামনে হয়ে উঠতে হবে অলঙ্ঘ্য ঢাল? অভিভাবকরা কি জানেন, দিনের শেষে পরিবারের সবাই যখন এক সঙ্গে সময় কাটায়, তখন নিজেদের ফোনগুলোও সরিয়ে রাখতে হয়? মোবাইলের আসক্তি থেকে সন্তানকে রক্ষা করতে হলে ফোনের বাইরের জগৎটাকে আকর্ষণীয় করে তোলার দায়িত্বও নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mobile Phones Children Addiction Smartphone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE