Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Roman Catholicism

যাও, পুরাতন

ক্যাথলিক চার্চের শাসনতন্ত্রকে খুব গণতন্ত্রপন্থী বলা যাবে না, চার্চের প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষণ ও লালনের লক্ষ্যে ষোড়শ বেনেডিক্ট হেঁটেছিলেন পুরাতনবাদের পথেই।

প্রাক্তন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের প্রয়াণ ও শেষকৃত্যের আবহে রোমান ক্যাথলিক বিশ্বে আবারও ফিরে এসেছে পুরাতন ও নতুনের প্রসঙ্গ।

প্রাক্তন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের প্রয়াণ ও শেষকৃত্যের আবহে রোমান ক্যাথলিক বিশ্বে আবারও ফিরে এসেছে পুরাতন ও নতুনের প্রসঙ্গ। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:১০
Share: Save:

গত ছ’শো বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ যিনি অবসর নিয়েছেন, স্বেচ্ছায় হয়েছেন ‘প্রাক্তন’। ‘পোপ ইমেরিটাস’ পদে গত প্রায় এক দশক যাপন করছিলেন অন্তরালের প্রার্থনাজীবন। তবে সে সব ছাপিয়ে, প্রাক্তন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের প্রয়াণ ও শেষকৃত্যের আবহে রোমান ক্যাথলিক বিশ্বে আবারও ফিরে এসেছে পুরাতন ও নতুনের প্রসঙ্গ— পুরাতন অর্থাৎ ষোড়শ বেনেডিক্ট, নতুন অর্থাৎ বর্তমান পোপ ফ্রান্সিসের জমানার বৈশিষ্ট্য, পার্থক্যও। ক্যাথলিক চার্চের শাসনতন্ত্রকে খুব গণতন্ত্রপন্থী বলা যাবে না, চার্চের প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষণ ও লালনের লক্ষ্যে ষোড়শ বেনেডিক্ট হেঁটেছিলেন পুরাতনবাদের পথেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর ধ্যানধারণা ছিল চূড়ান্ত প্রাচীনপন্থী— জন্ম নিয়ন্ত্রণ, সমকামিতা প্রসঙ্গে তাঁর মতামত বিতর্ক তৈরি করেছে নানা সময়ে। কট্টর সমালোচকেরা বলেন, ক্যাথলিক চার্চে ঘটে চলা যৌন হেনস্থা ও নির্যাতনের অভিযোগের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল তাঁর আমলে, সে সবের সুবিচার তো দূরস্থান, যথাযথ গুরুত্বও মেলেনি। প্রধান ধর্মগুরুর এই মনোভাবকে ভ্যাটিকানের অবরুদ্ধ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসাবেই দেখেছে বাকি বিশ্ব— একুশ শতকের খোলা হাওয়ার মুখে এ যেন মনের জানলাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার শামিল, ধর্মের চিরাচরিত প্রাতিষ্ঠানিকতার নামে সংস্কার থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকা।

পোপ ফ্রান্সিসের সময়ে অবশ্য ছবিটা পাল্টেছে। গোড়া থেকেই তাঁর মতামত, বিবৃতি ও নানা সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দিয়েছে, ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন ও চার্চের নীতির মধ্যে বেড়ে চলা ব্যবধান কমিয়ে আনতে তিনি কৃতসঙ্কল্প। ২০২১ সালে তাঁর উদ্যোগেই তৈরি হয়েছে চার্চের অধীনে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ভাবনা বিনিময় ও মতামত শোনার এক নতুন পরিসর। ভ্যাটিকান-বিশেষজ্ঞেরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, সঙ্গে এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন, সমসময়কে খোলা মনে গ্রহণ করার উদ্যোগ রোমান ক্যাথলিক চার্চ আগেও করেছে— ১৯৬০-এর দশকেই দ্বিতীয় ভ্যাটিকান কাউন্সিল বলেছিল, দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে চার্চকেও নমনীয় ও সহনশীল হতে হবে। পোপ ফ্রান্সিসের আহ্বানে অভূতপূর্ব সাড়া পড়েছে, গত বছর অক্টোবরে ক্যাথলিকদের পাঠানো মতামত বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, মানুষ চাইছেন ভ্যাটিকান ভাবনায় ও কর্মে আরও আন্তরিক হোক— চার্চ এত দিন যে আচরণগুলিকে ‘র‌্যাডিক্যাল’ মনে করে দূরে ঠেলে রেখেছে, এ বার তারও হাত ধরুক: চার্চের গঠনতন্ত্রে মেয়েদের সমানাধিকার নিশ্চিত হোক; নিপীড়িত ও বিপর্যস্ত, বিশেষ করে অভিবাসী-শরণার্থী মানুষের দিকে নজর ফিরুক, ক্যাথলিক এলজিবিটিআইকিউ+ গোষ্ঠীর মানুষ যেন চার্চের সহৃদয় সমর্থন পান; সর্বোপরি যে কোনও যৌন হেনস্থা ও দুর্নীতির ঘটনায় ‘নিজেদের লোক’কে আড়াল করা বন্ধ হোক। এ হল একুশ শতকের ক্যাথলিকতন্ত্র: উদার, সময়মুখী— ধর্মনিরপেক্ষ সমাজের মূল্যবোধের সঙ্গে যার বিরোধিতা নেই। ইউরোপে ক্যাথলিক ধর্মসংস্কারের ইতিহাস খুব সুখের নয়, বরং সংঘাতে দীর্ণ। এ কালের ইউরোপে বহু দেশে দক্ষিণপন্থী রাজনীতি ক্যাথলিক পুরাতনবাদকে হাতিয়ার করে এগোতে চাইছে, সেও খুব সুখের হবে না। আপাতত ক্যাথলিকতন্ত্রে যে পরিবর্তনের সুপবন বইছে তা আশাপ্রদ, সামনে কী আছে তা সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Roman Catholicism Pope Benedict XVI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE