Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Germany ends Nuclear Era

ব্যতিক্রমী

সত্তরের দশকে অন্যান্য দেশের মতো পরমাণু-বিরোধী আন্দোলনে মুখর হয় পশ্চিম জার্মানি। সে সময় বিরোধিতা হয় নতুন চুল্লি গড়া নিয়ে।

Germany shuts down its last nuclear power plants in Neckarwestheim.

জার্মানির নেকারওয়েসথাইম পরমাণু চুল্লি। ছবি: রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

পরমাণু শক্তি, না, ধন্যবাদ!’— জার্মানিতে এক সময় বহু গাড়ির বাম্পারে যে স্লোগানটি লেখা থাকত, তা সম্প্রতি বাস্তবে পরিণত হল সে দেশে। দাঁড়ি পড়ল দেশের শেষ তিনটি পরমাণু চুল্লি, ইসার, এমসল্যান্ড এবং নেকারওয়েসথাইম-এর উৎপাদন প্রক্রিয়ায়। যদিও পরমাণু শক্তি বন্ধের পরিকল্পনা সে দেশে সাম্প্রতিক কালের নয়, কয়েক দশকের পুরনো। আর তার প্রকৃত সূচনা আরও প্রাচীন। সত্তরের দশকে অন্যান্য দেশের মতো পরমাণু-বিরোধী আন্দোলনে মুখর হয় পশ্চিম জার্মানি। সে সময় বিরোধিতা হয় নতুন চুল্লি গড়া নিয়ে। বিশেষ করে, এমন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ঝুঁকি এবং পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতা উদ্বেগ বাড়ায় আন্দোলনকারীদের। পাশাপাশি, ১৯৭৯ সালে আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ডে পরমাণু কেন্দ্রের আংশিক ক্ষতি এবং ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলের দুর্ঘটনা ঘৃতাহুতি দেয় এই আন্দোলনে। এবং ২০০২ সালে জার্মানির তৎকালীন সরকার অঙ্গীকার করে ধাপে ধাপে দেশের পরমাণু চুল্লিগুলি বন্ধ করার। পরবর্তী সময়ে এই সিদ্ধান্ত নমনীয় হয়ে এলেও, ২০১১-য় ভূমিকম্প ও সুনামির কারণে জাপানের ফুকুশিমায় পরমাণু কেন্দ্রের দুর্ঘটনা পুনরায় গতি জোগায় দেশের পরমাণু কেন্দ্র বন্ধের প্রক্রিয়ায়। ২০২২-এর ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের শেষ তিনটি পরমাণু চুল্লি নিষ্ক্রিয় করার লক্ষ্য থাকলেও, শেষ পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে জ্বালানি সমস্যার জেরে সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করতে বাধ্য হয় বর্তমান সরকার। গত শনিবার অবশেষে দেশের বহুকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হল। অবশ্যই পরমাণু-পন্থী বিরোধী রাজনীতিকদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ় এবং অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক-কে। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে জার্মান পরমাণুকেন্দ্র অত্যন্ত নিরাপদ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, সেখানে কেন এমন সিদ্ধান্ত?

তা ছাড়া পরমাণু শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেখানে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে সাহায্য করে, সেখানে জার্মানি বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ হ্রাসের প্রচেষ্টার বিপরীতে হাঁটল না কি? বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দিনে এর প্রভাব দেশের শিল্পক্ষেত্রে অনুভূত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জার্মানি এক ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করেছে বলেই অভিমত অনেকের। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ভরতা বাড়াচ্ছে পরমাণু শক্তির উপরে, সেই সময় জার্মানির এমন সিদ্ধান্তে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু জার্মানি গড্ডলিকা প্রবাহে না ভেসে আরও জোর দিতে চায় বিকল্প বায়ুশক্তি এবং সৌরশক্তির উপরে। বর্তমানে কয়লাচালিত শক্তির উপরে জোর দেওয়া হলেও ২০৩৮ সালের মধ্যে দেশের সমস্ত কয়লাচালিত কেন্দ্র নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। লক্ষ্য, এই দশকের মধ্যেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির সাহায্যে দেশের আশি শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন। জার্মানির মতো উন্নত দেশের পক্ষে এমন দুঃসাহসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া ‘ঐতিহাসিক’ তো বটেই। তবে এমন সিদ্ধান্তের পিছনে যে রাজনীতির বড় ভূমিকা রয়েছে, অস্বীকার করা যায় না। জনসাধারণের একাংশের সমর্থন না থাকলে এমন পদক্ষেপ করা সম্ভবপর হত না, এ-ও ঠিক। আগামী দিনে জার্মানি এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারবে কি না, জানা নেই। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বর্তমানের দিকেই যদি তাকানো যায়, জার্মান সরকারের একটা বড় অভিনন্দন প্রাপ্য এমন সাহসী ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Germany Nuclear Energy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE