E-Paper

শিরঃপীড়া

ঘটনার ঘনঘটা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সরকারের পূর্বপ্রস্তুতিতে আর ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করায় গলদ থাকলে কতটা রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে।

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩৫
Amritpal Singh.

খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংহ। ফাইল চিত্র।

মাস দুই আগেও যাঁকে মানুষ তত চিনতেন না, তাঁকে নিয়েই রাজ্য তোলপাড়, বিদেশে হুলস্থুল। ‘পঞ্জাব ওয়ারিস দে’ সংগঠনের খলিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিংহকে ধরতে পঞ্জাবে ভগবন্ত মানের সরকার ও পুলিশের তৎপরতা দেখে বলিউড-ছবির চিত্রনাট্য মনে পড়াও অসঙ্গত নয়— অভিযুক্তকে ধাওয়া করেছে পুলিশের কনভয়, মোতায়েন হয়েছে আধাসেনা, ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার, বিদেশে পলায়ন এড়াতে জারি হয়েছে লুক আউট নোটিস, আর ও দিকে গুরুদ্বারে ঢুকে পোশাক পাল্টে পালাচ্ছে অপরাধী, পুলিশের চোখে ধুলো দিতে একের পর এক বাহন পাল্টাচ্ছে, সে সবও ধরা পড়ছে নজর-ক্যামেরাতে, অথচ আসল মানুষটিকে ধরা যাচ্ছে না! অমৃতপালের যে সহযোগীরা ধরা পড়েছে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুদূর অসমের কারাগারে, দূরত্ব এখানে ঝঞ্ঝাটহীনতার সমার্থক। এই সব কিছুতেই পরিষ্কার, বছর তিরিশের যুবক নেতাটি পঞ্জাব সরকারের কতটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দুশ্চিন্তার আরও কারণ, রুমালের বেড়াল হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাক্রম। দেশের সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের প্রত্যক্ষ সমর্থক ও অংশগ্রহণকারী ছিলেন অমৃতপাল, এখন জানা যাচ্ছে, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতে তিনি দুবাইয়ে খলিস্তান আন্দোলন নিয়ে প্রচার শুরু করেন, এবং অচিরেই হয়ে ওঠেন দুর্দান্ত নেতা। পঞ্জাবের জনসমাজে মাদক এক লাগামছাড়া সমস্যা, দেশে ও রাজ্যে ফিরে মাদক-বিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলেন অমৃতপাল, কিন্তু তলে তলে তা ছিল খলিস্তান-সমর্থন ও দলবল বাড়ানোর কৌশল। মাদক-বিরোধী মঞ্চের মুখ নিজেই জড়িত ছিলেন মাদকের লেনদেনে, এবং বেআইনি অস্ত্র মজুত করার কাজে— এমন সব অভিযোগ রয়েছে পঞ্জাব পুলিশের এফআইআর-এ। মাদক, বেআইনি অস্ত্র, খলিস্তান ও সর্বোপরি আইএসআই— এই চার সংযোগে অমৃতপাল এখন ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধী, তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে।

এখানেই প্রশ্ন জাগে, পঞ্জাব সরকার, পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগ এত দিন কী করছিল? খলিস্তান আন্দোলন আজকের নয়, নিয়ম করে কিছু দিন পর পরই মাথাচাড়া দেয়, এই ধারণার বশেই কি অমৃতপালের কর্মকাণ্ডকে সরকার তত গুরুত্ব দেয়নি? খলিস্তান আন্দোলনের ধার-ভার খাস পঞ্জাবের চেয়ে ব্রিটেন কানাডা আমেরিকার মাটিতে ঢের বেশি, এই সত্যও সরকারের গোড়ার গা-ছাড়া মনোভাবকে প্রভাবিত করে থাকবে; নইলে অমৃতপাল-অভিযানের জন্য অমৃতসরে জি২০ সম্মেলন বৈঠক শেষ হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্র ও পঞ্জাব পুলিশের যৌথ বাহিনীকে অপেক্ষা করতে হত না। এখন পাঁচ দিন পেরিয়েও মূল অভিযুক্ত অধরা, বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রের অপদার্থতার দিকে আঙুল তুলছে; অমৃতপালের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র অভিযোগে ধরপাকড়-গ্রেফতার চলছে বেলাগাম, শিরোমণি অকালি দল ‘নিরপরাধ’দের বিনামূল্যে আইনি সাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে। ও দিকে লন্ডন ও সান ফ্রান্সিসকোয় ভারতীয় হাই কমিশন ও কনসুলেটে ভাঙচুর চালাচ্ছে খলিস্তানপন্থীরা। ঘটনার ঘনঘটা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সরকারের পূর্বপ্রস্তুতিতে আর ঠিক সময়ে ঠিক কাজটি করায় গলদ থাকলে কতটা রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Amritpal Singh Khalistan Punjab

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy