Advertisement
১০ মে ২০২৪
Safety of Journalists

সুরক্ষার নামে

সাংবাদিকেরা যাতে নির্বিঘ্নে খবর সংগ্রহ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে ২০১৭ সালেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল।

Amit shah.

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:০৭
Share: Save:

রক্ষকের ভক্ষক হয়ে ওঠার অভ্যাসটি স্রেফ রূপকথায় নয়, রাষ্ট্রনীতিতেও বহুলপ্রচলিত। আর সেই কারণেই শঙ্কা জাগছে, উত্তরপ্রদেশে আতিক আহমেদ খুনের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে বিশেষ নিয়ম বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়র (এসওপি) তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা কতটা আন্তরিক। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পুলিশের সামনেই গ্যাংস্টার-রাজনীতিকের খুন আতঙ্ক জাগায়, উপস্থিত কোনও সাংবাদিকের প্রাণসংশয় হতে পারত যে কোনও মুহূর্তে। আতিকের আততায়ীরা টিভি-সাংবাদিকদের ছদ্মপরিচয়ে অকুস্থলে ছিলেন, সে কারণেই এখন তড়িঘড়ি নিয়ম বাঁধাবাঁধি— সাংবাদিকদের পরিচয় আরও ভাল ভাবে যাচাই করা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। মনে পড়তে পারে, সাংবাদিকেরা যাতে নির্বিঘ্নে খবর সংগ্রহ করতে পারেন সেই লক্ষ্যে ২০১৭ সালেও কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল।

দেখেশুনে মনে হতে পারে, সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে কেন্দ্রীয় সরকারের চিন্তার শেষ নেই। অথচ, আসল ছবিটি ঠিক এর উল্টো— আজকের ভারতে সংবাদ-সংগ্রহের সামগ্রিক চিত্রটি যে কত বিপজ্জনক, সাংবাদিকরা যে পদে পদে কত ঝুঁকি ও বিপদ মাথায় নিয়ে কাজ করছেন তার শেষ নেই। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকের বিশ্ব-তালিকায় ভারতের ক্রমশ অধঃপতন যদি তার একটি দিক, অন্য দিকটিতে একের পর এক সাংবাদিক হেনস্থা, নিগ্রহের ঘটনা, এমনকি সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও বিরল নয়— কৃষক আন্দোলনের সময় এই উত্তরপ্রদেশেই এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে কয়েক জন কৃষকের সঙ্গে এক সাংবাদিককেও গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ, আজও তার সুবিচার হয়নি। কার্যত এই ভারতে সাংবাদিকের সুরক্ষা অলীক কল্পনা, সাংবাদিককে প্রশাসনের বাধাদান, প্রতিনিয়ত হুমকি, হেনস্থাই এখানে স্বাভাবিক ঘটনা— সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে তল্লাশি, ইন্টারনেট বন্ধ করে কাজে বাধা দেওয়া, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গের মামলা, ইউএপিএ-র মতো আইনে জেলে ভরে রাখা, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয় ও কর ফাঁকির দায় চাপানো, বাদ নেই কিছুই। এই সে দিনও রাজনীতি সরগরম ছিল ‘পেগাসাস স্পাইওয়্যার’ নিয়ে; অভিযোগ, ফাঁস হয়ে যাওয়া তিনশো ভারতীয় ফোন নম্বরের মধ্যে সরকারের অপ্রিয় ও বিরোধী বলে পরিচিত সাংবাদিকদের ফোন নম্বরও ছিল!

যে দেশের প্রধানমন্ত্রী কদাপি সাংবাদিক সম্মেলনে আগ্রহী নন, সরকারের সমালোচনা করলেই যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তাঁদের বশংবদ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সাংবাদিকদের কাঠগড়ায় তোলেন, সেই সরকার সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, অবিশ্বাস্য মনে হয়। এসওপি-র ধাপগুলি আসলে সুরক্ষার নামে সাংবাদিককে নিয়ন্ত্রণেরই নামান্তর, এ প্রশ্ন ওঠা তাই মোটেই অসঙ্গত নয়; পরিচয় যাচাইয়ের কড়াকড়ির নামে নেতা-মন্ত্রীদের প্রশ্ন করা থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখাই বিজেপি-শাসিত সরকারের মতলব কি না, ভেবে দেখার। সুরক্ষা ছল মাত্র, আসলে সংবাদ ও সাংবাদিককে নিজেদের নজরে রাখাই লক্ষ্য। তা কখনও, কোনও মূল্যেই হতে দেওয়া যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah journalist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE