Advertisement
E-Paper

অ-বিচার

বিচার সম্পূর্ণ না হওয়া অবধি আইনের নজরে নিরপরাধ বিবেচিত হইবার অধিকার প্রত্যেকের সমান।

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৫:০৭

ভারতীয় বিচারব্যবস্থার দর্শন বলিবে, যত ক্ষণ অবধি কাহারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তত ক্ষণ অবধি তাঁহাকে নিরপরাধ গণ্য করা বিধেয়। এবং, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায় এই বিচারাধীন— অতএব নিরপরাধ— নাগরিকদেরও ব্যক্তি স্বাধীনতায় পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে। তাঁহাদের সেই অধিকারের পথে প্রথম ধাপ, জামিন। এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণ আয়ার বলিয়াছিলেন, ভারতীয় বিচারব্যবস্থার মৌলিক আদর্শটি সহজ কথায় হইল, জেল নহে, ‘বেল’— অর্থাৎ, বিচারাধীন ব্যক্তিকে জামিন দেওয়াই বিধেয়। অতি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে জামিন না-মঞ্জুর হইতে পারে, কিন্তু ক্ষেত্রটি কেন ব্যতিক্রমী, তাহার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। অনতিঅতীতে এক মামলায় বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও ব্যক্তিস্বাধীনতার তাৎপর্য স্মরণ করাইয়া দেন। কেহ অনুমান করিতে পারেন যে, শীর্ষ আদালতের অবস্থান যেখানে এতখানি স্পষ্ট, ভারতীয় বিচারব্যবস্থা নিশ্চয় সেই নির্দেশ মানিয়াই চলিতেছে। সামান্য পরিসংখ্যান প্রয়োগেই এই ভ্রম ভাঙিতে পারে। দেশের হাই কোর্টগুলিতে বকেয়া জামিনের আবেদনের সংখ্যা একানব্বই হাজারের অধিক; জেলা আদালতগুলিতে তাহা আরও বেশি, প্রায় দুই লক্ষ। স্পষ্টতই, নিম্নতর আদালতগুলি সর্বোচ্চ আদালতের পথনির্দেশ মানিতে নারাজ। বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা বজায় রাখিয়াও স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন যে, জামিনের আবেদন না-মঞ্জুরের এই প্রবণতা ভারতীয় সংবিধান-স্বীকৃত ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী।

কেহ সংশয় প্রকাশ করিতে পারেন যে, জামিন না-মঞ্জুর করা বর্তমানে একটি রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হইয়াছে। শাসকদের নিকট যাঁহারা বিপজ্জনক বলিয়া প্রতিভাত, সচরাচর তাঁহাদের জামিন মিলে না। জামিনের অপেক্ষায় থাকিতে থাকিতে স্ট্যান স্বামী জেলেই প্রয়াত হইলেন। আর এক বৃদ্ধ, কবি ভারাভারা রাও, বহু যন্ত্রণা সহ্য করিয়া শেষ পর্যন্ত জামিন পাইয়াছেন। সাংবাদিক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ— এমন বহুবিধ পরিচয়ের মানুষ তো বটেই, এমনকি রাজনীতির সহিত আপাত-সংযোগবিহীন চিত্রতারকারাও সহজে জামিন পান না। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর হাজতবাসের কথাটি স্মরণে আসিতে পারে। যে হেতু সুশান্তের মৃত্যুকে বিজেপি বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করিবার কথা ভাবিতেছিল, অতএব রিয়ার হাজতবাস দীর্ঘায়িত হইয়াছিল বলিয়াই দুর্জনে রায় দিবে। অভিনেতা শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খানের হাজতবাসের পিছনেও কেহ ভিন্নতর উদ্দেশ্যের সন্ধান পাইতে পারেন। শোনা যাইতেছে যে, রিয়া এবং আরিয়ান, উভয়ের ক্ষেত্রেই মামলা সম্ভবত অতি দুর্বল— কিন্তু, তাহাতে জামিন পাইবার সুবিধা হয় নাই। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই রাজনৈতিক পাঁকে বারংবার আদালতের নাম জড়াইয়া যাইতেছে।

কেহ বলিতে পারেন যে, জনপরিসরে পরিচিত ব্যক্তি অথবা তারকাদের ক্ষেত্রে জামিনের প্রক্রিয়াটি কঠোরতর হইতেছে। তারকারা সমাজের বহু ক্ষেত্রেই অন্যায্য সুবিধা পাইয়া থাকেন— অথবা, পান বলিয়া সাধারণ মানুষের ধারণা। ফলে, তারকাদের জামিনের ক্ষেত্রে আদালত কঠোরতর অবস্থান গ্রহণ করিলে সাধারণ মানুষ তাহার মধ্যে ন্যায্যতার প্রতিফলন দেখিতে পাইতে পারেন, তাহা অস্বীকার করা চলে না। কিন্তু, তাহা প্রতিফলন নহে, বিভ্রমমাত্র। কারণ, কেহ তারকা হউন বা সাধারণ মানুষ, আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেকেই সমান। ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, বিচার সম্পূর্ণ না হওয়া অবধি আইনের নজরে নিরপরাধ বিবেচিত হইবার অধিকার প্রত্যেকের সমান। কেহ জনপরিসরে পরিচিত নাম বলিয়া যদি তাঁহার সেই অধিকার খর্ব করা হয়, তাহা ভারতীয় সংবিধানের দার্শনিক অবস্থানের পরিপন্থী হইবে।

Aryan Khan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy