Advertisement
E-Paper

নাচিতে না জানিলে

সেই কারণেই বিরোধী রাজনীতির দায়িত্বও অস্বাভাবিক বেশি। গণতান্ত্রিক পরিসরটিকে রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করিবার দায়টি বিরোধী দল তথা দলনেতাদের প্রাথমিক দায়।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ০৮:০৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

রাহুল গাঁধী সচরাচর যাহা ভাবেন তাহাই বলেন, যে ভাবে ভাবেন সেই ভাবেই বলেন। কংগ্রেসের সাংসদ তথা ভূতপূ্র্ব সভাপতির এই স্ব-ভাবকে অনেকেই তাঁহার বুদ্ধির ঘাটতি বলিয়া বিবেচনা করেন। সেই সমালোচনাকে যুক্তিহীন বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া কঠিন। তবে রাজনীতিক আপন চিন্তাভাবনার কথা সাফ সাফ বলিয়া দিলে শ্রোতাদের একটি উপকার হয়— তাঁহারা সহজেই বুঝিয়া লইতে পারেন কোনটি সত্যই রাজনীতিকের ‘মন কি বাত’। সম্প্রতি একটি আলোচনায় প্রবীণ অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল গাঁধী জানাইয়াছেন, ভারতের বর্তমান শাসকরা দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে দখল করিয়া তাহাদের স্বাধীনতা বিনাশ করিয়াছেন এবং তাহার ফলে বিরোধী রাজনীতিকদের পক্ষে আপন ভূমিকা পালন করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে, কারণ, তাঁহার ভাষায়, ‘প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ব্যতীত আমরা রাজনীতিকরা কাজ করিতে পারি না’।

কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। সংসদ হইতে বিচারবিভাগ, সংবাদমাধ্যম হইতে বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এবং, বৃহত্তর অর্থে, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বাধীন ভাবে আপন আপন কাজ করিতে পারিলে তবেই গণতন্ত্র সার্থক হইতে পারে। বিশেষ করিয়া, যে গণতন্ত্র বিরোধী দল ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয় না, তাহা কেবল অসম্পূর্ণ নহে, বিপন্ন। নরেন্দ্র মোদীর ভারতে সেই বিপন্নতা কোন মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে, তাহা আজ দুনিয়ার কাহারও অজানা নহে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টে ভারতীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিক অবক্ষয়ের তথ্য গভীর উদ্বেগের সহিত নথিভুক্ত হইতেছে। বিরোধিতা করিলেই শাসকরা নাগরিককে দেশদ্রোহী বলিয়া চিহ্নিত করিতে তৎপর, তৎপর গ্রেফতার করিতে, নানাবিধ অভিযোগে হয়রানি, হেনস্থা ও নিপীড়ন করিতে। তদুপরি, শাসকদের প্রশ্রয়ে ও পরিচর্যায় পোষিত রকমারি গুন্ডাবাহিনীর অত্যাচার তো আছেই। বিরোধী রাজনীতির পক্ষে ইহা নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক কঠিন সময়।

সেই কারণেই বিরোধী রাজনীতির দায়িত্বও অস্বাভাবিক বেশি। গণতান্ত্রিক পরিসরটিকে রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করিবার দায়টি বিরোধী দল তথা দলনেতাদের প্রাথমিক দায়। দুর্ভাগ্যের কথা, ভারতে বিরোধী দলগুলি সেই দায় যথেষ্ট পালন করিতে ব্যর্থ। শাসকের অন্যায়ের প্রতিবাদে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু বিক্ষোভ আন্দোলন দেখা গিয়াছে, কিন্তু বড় আকারের সংগঠিত প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়িতে বিরোধী দলগুলির তৎপরতা বিরল। এই বিষয়ে রাহুল গাঁধী ও তাঁহার দলের ব্যর্থতা সমধিক। কংগ্রেসের শক্তি অতীতের তুলনায় অনেক কম হইলেও সর্বভারতীয় পরিচিতির মাপকাঠিতে এখনও বিরোধী রাজনীতির সমন্বয়ে এই দল যথেষ্ট কাজ করিতে পারে। তাহা দলের আপন পুনরুজ্জীবনের স্বার্থেও জরুরি। অথচ, কংগ্রেস এখনও অন্দরমহলের বিবিধ কলহ সামলাইতেই নাজেহাল, রাহুল গাঁধীর নিজের সক্রিয়তাও প্রধানত টুইট-দুনিয়াতে সীমিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘শাসকরা বিরোধিতার পরিবেশ কাড়িয়া লইয়াছেন, তাই বিরোধিতা করিতে পারিতেছি না’— এমন যুক্তি লজ্জাকর অক্ষমতা ও আলস্যের অজুহাত হইয়া দাঁড়ায় না কি? ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ শাসকরা কি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সাজাইয়া দিতেন? যে কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত চেষ্টা ও অপচেষ্টা সত্ত্বেও দমিয়া না গিয়া আপন আন্দোলনকে আরও প্রসারিত করিতে অগ্রসর হইতেছেন, তাঁহাদের দৃষ্টান্তও বিরোধী দলগুলিকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রেরণা দিতে পারিল না কেন— আলোচনা সভায় রাহুল গাঁধী এই অপ্রিয় প্রশ্নটির সম্মুখীন হন নাই। কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্র তাঁহার নিকট, এবং দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রীদের নিকট প্রশ্নটির উত্তর চাহিবে। সদুত্তর।

Congress Rahul Gandhi maan ki baat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy