Advertisement
০৪ মে ২০২৪
G20 Summit 2023

দক্ষিণবায়ুর জোর

একটি বিষয় সংশয়াতীত, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি এ-হেন ‘ঠান্ডা’ মনোভাব মূলত কূটনীতিবিশ্বে পরিবর্তনেরই ইঙ্গিতবাহী।

g20 summit.

জি-২০ সম্মেলন। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:৩৭
Share: Save:

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গোড়া থেকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতকে যে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত জি২০ সম্মেলনে তার এক অগ্নিপরীক্ষা হল বললে অধিককথন হবে না। এক দিকে আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলি এবং অন্য দিকে মিত্র রাষ্ট্র রাশিয়া— যুদ্ধের আবহ চলছেই, তার মধ্যে এই বৈঠকের আয়োজন ও পরিচালনায় কোনও তরফকে না চটানোই ছিল ভারতের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। নয়াদিল্লি আপাতত সাফল্যের সঙ্গেই উত্তীর্ণ হয়েছে সেই কূটনৈতিক পরীক্ষায়। সম্মেলনের সদস্যদের সর্বসম্মতিতেই গৃহীত হয়েছে জি২০-র আনুষ্ঠানিক বিবৃতিটি, যেখানে কৌশলগত ভাবেই রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের কোনও উল্লেখ রাখা হয়নি। বরং সব রাষ্ট্রকেই একে অপরের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। ভারতীয় সূত্র বলছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতির বৃহত্তর স্বার্থে, মূলত চিনকে ঠেকাতেই ঘোষণাপত্রের সুর নরম রাখা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। তবে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হয়ে সম্মেলনে উপস্থিত বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভারভের প্রতিক্রিয়ার দিকেও নজর রাখা হচ্ছিল বইকি। লাভারভ পরে বিবৃতিতে সম্মেলনটিকে একটি মাইলফলক হিসাবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, ভারত-সহ ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর কারণেই ঘোষণাপত্রে রাশিয়াকে কোণঠাসা করা হয়নি। প্রসঙ্গত, সম্মেলনের আগে এই লাভারভই কিন্তু অন্তিম ঘোষণাপত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য থাকলে তা আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

অন্য দিকে, সম্মেলনে উল্টো সুর শোনা যায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র গলায়। তিনি বিবৃতি দেন, ঘোষণাপত্রটি রাশিয়ার পক্ষে মোটেই কোনও কূটনৈতিক জয় নয়। বরং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার একতরফা আক্রমণের প্রবল নিন্দা করেছে জি২০-র অধিকাংশ সদস্যই। তবে, মাকরঁ এ-ও স্বীকার করে নেন যে, জি২০ অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার মঞ্চ, নিরাপত্তা বিষয়ক নয়। বৈঠকের ‘ভারসাম্য নীতি’-র বিরুদ্ধে অসন্তোষ গোপন করেনি ইউক্রেন। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেঙ্কো-র নিজের এক্স হ্যান্ডেলে সম্মেলনের ঘোষণাপত্র নিয়ে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিও। সন্দেহাতীত ভাবে গত বছরের বালি সম্মেলনের তুলনায় নয়াদিল্লিতে ইউক্রেনের প্রতি আচরণ— শীতল। ফলে ইউক্রেনের বিরক্তি সহজবোধ্য। প্রশ্ন হল, স্বল্পমেয়াদে ভারত ‘সাফল্য’ পেলেও দীর্ঘমেয়াদে এই সাফল্য কি বজায় রাখা আদৌ সম্ভব?

একটি বিষয় সংশয়াতীত, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি এ-হেন ‘ঠান্ডা’ মনোভাব মূলত কূটনীতিবিশ্বে পরিবর্তনেরই ইঙ্গিতবাহী। গত কয়েক বছরে গ্লোবাল সাউথের প্রথম সারির দেশগুলি আন্তর্জাতিক মঞ্চে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এই বাস্তবটিকে শুধু পশ্চিমি শক্তিসমূহই নয়, খোদ আমেরিকাও মান্যতা দিতে শুরু করেছে। আগামী দিনে এই পটপরিবর্তন কোন দিকে ঠেলবে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপকে, এখনও স্পষ্ট নয়। আর দিল্লিকে যেটা বুঝতে হবে, তার কঠিন পথের এই সবে শুরু। জি২০ যে ভাবেই সামাল দেওয়া যাক না কেন, আসল চ্যালেঞ্জ রাশিয়া, চিন এবং আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলা। সেটা সহজ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

G20 Summit 2023 Narendra Modi Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE