E-Paper

বিপন্নতার অতলে

সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে আমেরিকা, ইউরোপ-সহ বহু দেশ তাদের নাগরিকদের উদ্ধার করছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদান থেকে। ভারতও রয়েছে সেই তালিকায়।

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৩ ০৪:৪১
Image of Sudan Clash

দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুদানে চলতে থাকা ভয়াবহ সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই কয়েক শত প্রাণহানি ঘটেছে। ফাইল ছবি।

সুদান জ্বলছে। দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশটিতে চলতে থাকা ভয়াবহ সংঘর্ষে ইতিমধ্যেই কয়েক শত প্রাণহানি ঘটেছে। আহতওকয়েক হাজার। সাম্প্রতিক ঘটনার জেরে আমেরিকা, ইউরোপ-সহ বহু দেশ তাদের নাগরিকদের উদ্ধার করছে ওই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে। ভারতও রয়েছে সেই তালিকায়। খার্তুম এবং দেশের অন্যান্য অংশে আটক ভারতীয়দের উদ্ধার করতে ইতিমধ্যেই ‘অপারেশন কাবেরী’ শুরু করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই প্রয়াস এখনও চলছে।

সুদান দেশটি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সোনা— এমন নানা খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এই সম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানই দেশটিকে বিশ্বের সব শক্তিশালী দেশ, পড়শি রাষ্ট্র তথা স্থানীয় নেতাদের শোষণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। বর্তমান সঙ্কটের সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালে, যখন দেশে গণতন্ত্র স্থাপনের উদ্দেশ্যে গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতা ওমর অল-বাশির’এর ৩০ বছরের নির্মম একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে। ওই সময় সুদানের সামরিক বাহিনী, প্যারামিলিটারি দল র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস-এর (আরএসএফ) সঙ্গে ও অসামরিক সরকার মিলে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গড়ে তুলেছিল। অনেকেই আশা করেছিলেন যে, এ বার দেশে একটা সুস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, দেশের হাল ফিরবে। ভুল ভেবেছিলেন তাঁরা। তখন থেকেই ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট— সামরিক বাহিনী এবং আরএসএফ— দু’তরফেরই প্রধান আগ্রহ ক্ষমতা দখলে। বাশিরের পতনের দু’বছরের মধ্যেই তাই তারা অসামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করে দেশের রাশ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। কিন্তু জনগণের চাপ এবং আন্তর্জাতিক মহল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ে তারা অসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়। তবে, দ্বন্দ্ব বাধে এর পরে সামরিক বাহিনীর ভার কার উপর থাকবে, সেই নিয়ে। দেশের সেনাপ্রধান আবদেল ফতা আল-বুরান আরএসএফ-এর সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি এবং আগামী দু’বছরের মধ্যে অসামরিক সরকার গঠনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু আরএসএফ বাহিনীর নেতা প্রাক্তন উপপ্রধান মহম্মদ হামদান ডাগলো-র ভয় ছিল, এতে তাঁর ক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাই তিনি এই প্রক্রিয়া পিছিয়ে দিতে চাইছিলেন। এই দুই নেতার মতানৈক্য শেষ পর্যন্ত দেশটিকে গৃহযুদ্ধের পথে ঠেলে দিয়েছে। ডাগলো, যাঁর সঙ্গে রাশিয়ার বেসরকারি সামরিক সংস্থা ওয়াগনের গ্রুপ এবং সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, সেনাপ্রধান বাশিরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। অন্য দিকে, আরএসএফ-কে দুরমুশ করতে সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত তাদের ঘাঁটিতে বিমান হামলা করে চলেছে।

ইতিহাস সাক্ষী, সুদানের রাজনৈতিক নেতারা কোনও কালেই জনগণের কল্যাণ বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন না। এমনিতেই দেশটি আর্থিক সঙ্কট, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি এবং খাদ্যাভাবে জর্জরিত। এমতাবস্থায় দেশে গৃহযুদ্ধ বাধলে সাধারণ্যের কী পরিস্থিতি হতে পারে, সহজেই অনুমেয়। যুযুধান নেতৃত্বের উচিত, সংঘর্ষ থেকে অবিলম্বে সরে এসে দেশের বর্তমান সমস্যাগুলি নিরসনের দিকে মন দেওয়া। তাঁদের দরিদ্র দেশটি নয়তো আরও বিপন্ন, বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sudan clash Sudan Conflict Sudan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy