Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
News

(অ)নিয়ম

গুগল বা ফেসবুক কিন্তু খবর বা নিউজ় কনটেন্ট ‘তৈরি’ করছে না, বহন ও পরিবহণ করছে মাত্র। এই কনটেন্ট তৈরি করছে সংবাদমাধ্যমগুলি।

The relationship between press-media and Internet based media is complex

আন্তর্জাল বিশ্বে যে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে তা একান্তই তাদের কৃতিত্ব। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ০৫:৩৮
Share: Save:

সংবাদমাধ্যম এবং আন্তর্জাল-মাধ্যমের সম্পর্কের জটিলতা পেরিয়ে মীমাংসার দিকে এগোনো সহজ নয়। সেই জটিলতার একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে সংবাদ পরিবেশন সংক্রান্ত ব্যবসা থেকে অর্জিত রাজস্বের বণ্টন। এ বার কানাডা সরকারের প্রস্তাবিত ‘অনলাইন নিউজ় অ্যাক্ট’-এর বিরোধিতা করতে চলেছে গুগল, কারণ সেই আইন অনুসারে গুগল বা ফেসবুকের মতো সংস্থাকে নিজেদের আন্তর্জাল-প্ল্যাটফর্মে খবর বা ‘নিউজ় কনটেন্ট’ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট সংবাদ সংস্থাকে মেধাস্বত্ব বাবদ অর্থ দিতে হবে। এমন আইনের প্রস্তাব নতুন নয়, বস্তুত অস্ট্রেলিয়ায় আগেই পাশ হয়েছে সমধর্মী ‘নিউ মিডিয়া বার্গেনিং কোড’, ফ্রান্সে ‘নেবারিং রাইটস’ ইত্যাদি।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই আন্তর্জাল সংস্থাগুলি এ ধরনের আইনের প্রতিবাদ করেছে। তাদের বক্তব্য: আন্তর্জাল-বিশ্বে তারা যে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে তা একান্তই তাদের কৃতিত্ব— আজ গুগল, ফেসবুক বা টুইটার-এর মাধ্যমে খবর বা আনুষঙ্গিক ‘কনটেন্ট’ যে মুহূর্তে অজস্র আন্তর্জাল-ব্যবহারকারী তথা সংবাদ-উপভোক্তার কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারছে, সেও তাদেরই দৌলতে। অথবা একে এমন ভাবে দেখা যেতে পারে— অজস্র আন্তর্জাল-সংবাদ উপভোক্তা তাঁদের পছন্দের খবরগুলি পেতে ভরসা করছেন গুগল বা ফেসবুককে, এই ভরসার জায়গাটি তৈরি করার কৃতিত্ব পুরোটাই ওই সংস্থাগুলির, তারাই আন্তর্জাল-ব্যবহারকারীদের চালিত করছে সংবাদ তথা সংবাদমাধ্যমগুলির ওয়েবসাইটের দিকে। অজস্র আন্তর্জাল-খবর, অগণিত সংবাদ-উপভোক্তার পথ ধরে আসছে বিপুল বিজ্ঞাপন, তা থেকে প্রাপ্ত অর্থে ফুলেফেঁপে উঠছে গুগল বা ফেসবুকের মতো সংস্থা— স্বভাবতই এই উপার্জন-পথে কোনও আইন বাগড়া দিলে সংস্থাগুলির সমস্যা বটে।

গুগল বা ফেসবুক কিন্তু খবর বা নিউজ় কনটেন্ট ‘তৈরি’ করছে না, বহন ও পরিবহণ করছে মাত্র। এই কনটেন্ট তৈরি করছে সংবাদমাধ্যমগুলি, যার পিছনে রয়েছে বিরাট ও অনবচ্ছিন্ন একটি কাঠামো। এই কাঠামোর নির্মাণ ও পরিচালনা বিপুল অর্থনির্ভর: সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও বেতন দিতে, সংবাদ তৈরির যান্ত্রিক, প্রযুক্তিগত ও অন্যান্য পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে অনেক অর্থব্যয় হয়। শ্রম, অর্থ, সময়, মনন ও গবেষণার যথার্থ ব্যবহারে যে নিউজ় কনটেন্ট তৈরি হয় তা উৎকৃষ্ট। ঐতিহ্যশালী সংবাদমাধ্যম বা সংস্থাগুলি এই উৎকর্ষ ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে। আন্তর্জাল-সংস্থাগুলির পরিবেশিত সংবাদের গুরুত্ব প্রথাগত ও প্রতিষ্ঠিত সংবাদসংস্থাগুলির বিশ্বাসযোগ্যতার জোরেই— কোনও ভুঁইফোঁড় সংস্থার সংবাদ প্রতিবেদন আর প্রতিষ্ঠিত সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনের গুরুত্ব সাধারণ পাঠকের চোখেও এক নয়। তাই গুগল বা ফেসবুকের মতো সংস্থা কোনও ভাবেই তাদের কৃতিত্ব ও উপার্জনের একতন্ত্র দাবি করতে পারে না। দুর্ভাগ্যের কথা, ভারতে এখনও এমন কোনও আইন তৈরি হয়নি, যার দ্বারা আন্তর্জাল-সংস্থাগুলিকে সংবাদ সংস্থার সঙ্গে রাজস্ব ভাগ করে নিতে বাধ্য করা যায়। সমাজমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহের অভাব নেই— সেই নিয়ন্ত্রণ বহু ক্ষেত্রেই অগণতান্ত্রিক— কিন্তু, ধ্রুপদী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে রাজস্ব ভাগের ন্যায্য তর্কটি তুলতে সরকার নারাজ। সেই আলোচনাটি অবিলম্বে শুরু হোক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

internet News Press
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE