E-Paper

প্রশ্নের মূল্য

সাংসদরা যে বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে সামনে এনেছেন, তা হল কেন্দ্রের দ্বিচারিতা।

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:১১
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

একশো দিনের কাজের বকেয়া আটকে রাখার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদদের পাশে দাঁড়ালেন হরিয়ানা এবং গুজরাতের কংগ্রেস সাংসদরা। এমনকি, এ রাজ্যের এক বিজেপি সাংসদও প্রশ্ন তুললেন, আদালতের নির্দেশের পরেও কেন প্রকল্প চালু করেনি কেন্দ্র? কলকাতায় সম্প্রতি সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) বৈঠক দেখাল, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি সচল, সক্রিয় থাকলে রাজনৈতিক ভেদাভেদের উপরে উঠে বৃহত্তর জনস্বার্থের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে কাজ করা সম্ভব। সামাজিক ন্যায় এবং স্বচ্ছ প্রশাসনের জন্য চাপ তৈরি করাও অসম্ভব নয়। দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজের প্রকল্প তিন বছর বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র, দেয়নি বকেয়া টাকাও। এই অবস্থান যুক্তিহীন, বৈষম্যমূলক এবং বিধিবিরুদ্ধ, সব দলের সাংসদরা সে কথাই বললেন বৈঠকে। কলকাতা হাই কোর্ট ১৮ জুন কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, পয়লা অগস্ট থেকে ফের প্রকল্প চালু করতে। হিসাবে গরমিলের জন্য প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার অবকাশ দেয় না মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা আইন (২০০৫), তা-ও মনে করিয়েছিল আদালত। কেন্দ্র সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। কিন্তু সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি যে প্রশ্নগুলি তুলেছে, তার উত্তর দিতেও কেন্দ্র দায়বদ্ধ। সেই প্রতিষ্ঠানটিকে অবলম্বন করে নানা রাজ্যের, নানা দলের সাংসদ পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের ধারাবাহিক বঞ্চনার উত্তর চাইলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কার্যত নিরুত্তর রইলেন। বিজেপি সাংসদ অপরাজিতা সারঙ্গীও বলেন, হাই কোর্টের রায়ের পরেও গরিব মানুষের টাকা আটকে রাখা উচিত নয়। পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটি একটি মূল্যবান মুহূর্ত।

সাংসদরা যে বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে সামনে এনেছেন, তা হল কেন্দ্রের দ্বিচারিতা। বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেও একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। গুজরাতের কংগ্রেস সাংসদ শক্তিসিন গোহিল সবিস্তারে তুলে ধরেন বিজেপি-শাসিত গুজরাতে দুর্নীতির বহর। সংবাদে প্রকাশ, রাস্তা, বাঁধ প্রভৃতি নির্মাণের ভুয়ো রসিদ দাখিল করে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের একাত্তর কোটি টাকা উধাও করা হয়েছে গুজরাতে। এই কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হয়েছিল সে রাজ্যের বিজেপির এক মন্ত্রীর দুই ছেলেও। এর পরেও গুজরাতে একশো দিনের কাজের জন্য বরাদ্দ বন্ধ করেনি কেন্দ্র, অনিয়ম প্রতিহত করতে দৃঢ় পদক্ষেপও করেনি। হরিয়ানার কংগ্রেস সাংসদ জয় প্রকাশও দুর্নীতির মোকাবিলায় কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তৃণমূল সাংসদরা মনে করান, সিএজি-র তদন্তে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশার মতো রাজ্যেও একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বিবৃতিতেই বলা হয়েছে যে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান-সহ নানা রাজ্যে বহু ভুয়ো কার্ড ধরা পড়েছে। সে সব ক্ষেত্রে চুরি-যাওয়া টাকা উদ্ধারের শর্ত দিয়ে টাকা বন্ধ করেনি কেন্দ্র। কেবল পশ্চিমবঙ্গের টাকাই আটকে রাখা হয়েছে। তৃণমূল দলের তরফে একে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরোধিতা বলেও দাবি করা হয়েছে।

কেন কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ চালু করছে না, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে পনেরো দিনের মধ্যে লিখিত জবাব চেয়েছে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি। যে ভাবে আদালতের নির্দেশ মানতে বিলম্ব করছে কেন্দ্র, সে ভাবে হয়তো সংসদীয় কমিটির নির্দেশও এড়াবে, অথবা পাঠাবে কিছু অসার, চর্বিতচর্বণ উত্তর। তবু এই গুরুত্বপূর্ণ কমিটি যে কেন্দ্রকে তার জবাবদিহির দায় মনে করিয়েছে, দল-নির্বিশেষে সাংসদরা যে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতা এবং বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছেন, এ সংবাদ যেন কালো মেঘের কিনারায় রুপোলি রেখা। অতীতে রাজ্য সরকার বিরোধীদের কাছে, গ্রামের মানুষের কাছে জবাবদিহির দায় এড়িয়েছিল। স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, বিধিপালন: এগুলিই গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Central Government PAC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy