E-Paper

বাঁধা বুলি

পুরসভার চেয়ারম্যান স্বয়ং সাফাইকর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে এলাকা পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। এই দায়িত্বটি তাঁর নয়। তার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ আছে, বেতনপ্রাপ্ত কর্মীও আছেন। আগ বাড়িয়ে সাফাইয়ের কাজে নামলেই তা দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দেয় না।

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৫ ০৪:১৯

মধ্যমগ্রাম পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে— আগামী দিনে যে সব ক্লাব বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় পদযাত্রা উপলক্ষে জলসত্র বা পুণ্যার্থীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে চাইবে, তাদের প্লাস্টিক-থার্মোকলের পরিবর্তে শালপাতা বা কাগজের গেলাসের মতো পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহার করতে বলা হবে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি জলসত্রের পাশে আবর্জনা ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ‘বিন’-এর ব্যবস্থা করা হবে। আচমকা বোধোদয়ের কারণ, সম্প্রতি এক ধর্মীয় পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যশোর রোড সংলগ্ন এলাকায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিক-সহ আবর্জনার স্তূপ জড়ো হতে দেখা গিয়েছিল। স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রতি বছর এমন ঘটনাই ঘটে। এবং ভুক্তভোগীমাত্রেই জানেন পুরসভার প্রতিশ্রুতির সেই ‘আগামী দিন’ কখনও আসে না। বরং এ-হেন শুভবুদ্ধি কিঞ্চিৎ আগে জাগ্রত হলে বিপুল আবর্জনা সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের পরিশ্রমটি বাঁচত। লোকবল, অর্থবলের অভাবে পুরসভাগুলির বহু জরুরি কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যা ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ, যার ব্যবহারে ক্ষতির পরিমাণ কারও অজানা নয়, তার বেআইনি ব্যবহারে প্রশ্রয় দিয়ে পুরসভাগুলি দিনের পর দিন সময় ও অর্থের অপচয় ঘটিয়ে চলেছে।

সমগ্র ঘটনায় রাজনৈতিক চমকটিও স্পষ্ট। পুরসভার চেয়ারম্যান স্বয়ং সাফাইকর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে এলাকা পরিষ্কারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন। এই দায়িত্বটি তাঁর নয়। তার জন্য নির্দিষ্ট বিভাগ আছে, বেতনপ্রাপ্ত কর্মীও আছেন। আগ বাড়িয়ে সাফাইয়ের কাজে নামলেই তা দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দেয় না। সত্যিকারের সদিচ্ছা থাকলে এলাকায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধে অনেক আগেই উদ্যোগী হওয়া যেত। সে কাজ করা হয়নি। জনসমাগমের স্থানে পর্যাপ্ত আবর্জনা ফেলার পাত্র রাখা যে আবশ্যক, সেই অত্যন্ত সাধারণ ভাবনাটিও সংশ্লিষ্ট দফতর ভেবে উঠতে পারেনি। ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ভারতে নির্দিষ্ট কিছু এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ও থার্মোকলের তৈরি সামগ্রীর উৎপাদন, মজুত ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। রাজ্যের দায়িত্ব ছিল সেই নিষেধাজ্ঞার পালন। অথচ, সাম্প্রতিক সরকারি রিপোর্টেই দেখা গিয়েছে, কলকাতা-সহ একাধিক পুরসভা বেআইনি প্লাস্টিককে উৎসে আটকানো তো দূরের কথা, তার বিক্রি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এক টাকাও জরিমানা আদায় করতে পারেনি। মধ্যমগ্রামের সাম্প্রতিক ঘটনা এই সুবিশাল ব্যর্থতার তালিকায় যৎসামান্য সংযোজন।

রাজ্যের যে কোনও উৎসব-পার্বণ-জমায়েতেই প্লাস্টিক, থার্মোকলের বাটি, থালা, গেলাসের ব্যবহার অবাধ। গত ২১ জুলাই শাসক দলের মহা-সমাবেশ অন্তে মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল এই ধরনের সামগ্রী। অথচ, এই সামগ্রীগুলি খাদ্য, পানীয় পরিবেশনে ব্যবহৃত হলে এগুলিতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সেই খাদ্য, পানীয়ের সঙ্গে মিশে মানবশরীরে প্রবেশ করে, এবং ক্যানসার-সহ দুরারোগ্য রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই শুধুমাত্র আগামী দিনের রঙিন কাহিনি না শুনিয়ে কথায় আর কাজের ফারাকটি সর্বাগ্রে মুছতে হবে। কেন এত দিনেও প্লাস্টিকের রমরমা বন্ধ করা গেল না, সেই আত্মসমীক্ষাটিও করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে চটকদার রাজনীতি গুলিয়ে ফেললে নাগরিকের পক্ষে তা বিপজ্জনক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Plastic use Thermocol Plate Kolkata Municpal Corporation KMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy