E-Paper

প্রকৃত পাঠ

এক-একটি ঘটনা বা অঘটন যখন সমাজজীবনে প্রবল অভিঘাত তৈরি করে, তখন তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাত দুঃখ ক্ষোভ ও শোক অচিরেই রূপ নেয় ক্রোধ ও অসহিষ্ণুতায়।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৬:০৮
Share
Save

কোনও স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছেন, বুঝিয়ে দিচ্ছেন এই অশান্ত সময়ে কী করতে হবে। পাঠ্যক্রমে থাকা কবিতা কোনও স্কুলে হয়ে উঠছে সময়ের প্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক, পড়ানো হচ্ছে জোর দিয়ে। স্কুল শুরুর আগে প্রার্থনা বা ‘অ্যাসেম্বলি’তে, অথবা অনুষ্ঠান-উৎসব উপলক্ষে কোথাও বেছে নেওয়া হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের ‘ভারততীর্থ’ কবিতা বা মনীষীবাক্য— যা ঐক্য, মৈত্রী, সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতার কথা বলে। কলকাতার বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে এমন নানা ভাবনা ভেবেছেন, বাস্তবে করেও দেখাচ্ছেন।

কেন এ কাজের দরকার পড়ল? এক-একটি ঘটনা বা অঘটন যখন সমাজজীবনে প্রবল অভিঘাত তৈরি করে, তখন তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে জাত দুঃখ ক্ষোভ ও শোক অচিরেই রূপ নেয় ক্রোধ ও অসহিষ্ণুতায়। পহেলগাম-কাণ্ডেও তা-ই হয়েছে, আকস্মিকতার প্রাথমিক ধাক্কা কাটতে না কাটতে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রবল ঘৃণার তোড়। সমাজমাধ্যম তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রেই জনজীবনও হয়ে উঠেছে ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতার আধার, সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে এক সারিতে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে চার পাশের বিপুল সংখ্যক নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে, স্রেফ একটি ধর্মবিশ্বাসের ‘অপরাধ’-এ। প্রাপ্তবয়স্ক এমনকি প্রাপ্তমনস্ক মানুষেরা যেখানে চরম উগ্র ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছেন, সেখানে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা অনেক বেশি। এদের প্রায় সবাই কমবেশি সমাজমাধ্যমে যুক্ত, এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ— স্কুলের নিয়মশৃঙ্খলায় জড়ানো সময়টুকুর বাইরে তারা কী ভাবছে বা কী করছে, সমাজমাধ্যমে বা বাড়িতে পাড়ায় কোচিংয়ে বন্ধু-আড্ডায় বা অন্য সামাজিক পরিসরে তারাও এই ঘৃণার জালে জড়িয়ে পড়ছে কি না, সে খবরটি সব সময় রাখা হয় না।

এই কাজটিই কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ করতে চাইছেন। নিঃসন্দেহে তা জরুরিও। বিদ্যায়তনের কাজ শুধু বইয়ের পাঠ নয়, বৃহত্তর জীবনের পাঠও দেওয়া, সবাই জানেন। সেই জীবন সব সময় বৃহৎ নয়, অনেক সময়ই ক্ষুদ্রতায় আচ্ছন্ন। এক-একটি ঘটনার জেরে সেই ক্ষুদ্রতা মানবিকতারও সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাতে ক্রমাগত ইন্ধন জোগায় স্বার্থান্ধ রাজনীতিও, যেমন দেখা যাচ্ছে পহেলগামের ক্ষেত্রে। এই পরিস্থিতিতে অল্পবয়সি স্কুলপড়ুয়ারা কী ভাবছে সেই খোঁজটি নেওয়া অতি জরুরি। কিশোরমন খুব সহজেই বাইরের পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়, পহেলগামের জেরে যে বিদ্বেষবিষ সর্বত্র ছড়াচ্ছে তা অজানতে তাদের মধ্যে ঢুকে পড়তেই পারে। এই জায়গাটিতেই স্কুলের বিরাট ভূমিকা: ক্লাসের পড়ার বাইরেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝবেন তারা বিভ্রান্ত বা ত্রস্ত কি না; তাদের শেখাবেন, অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতার কোনও বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, কল্যাণীর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একটি চরম সাম্প্রদায়িক পোস্টার পড়েছিল, পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আর একটি পোস্টারে দেখা গেছে তারই প্রত্যুত্তর, ‘ঘৃণার রাজনীতি এখানে হয় না’। এই উত্তর এসেছে ছাত্রছাত্রীদের তরফেই। উগ্রতার জবাব অত্যুগ্রতা নয়, মানবিকতার বিসর্জন নয়, এই শিক্ষাটি এই ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে এসে পেয়েছেন, বুঝেছেন। অল্পবয়সি স্কুলপড়ুয়াদের ক্ষেত্রে এই বোঝানোর দায়িত্বটি স্কুলগুলিকে নিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Schools Students Pahalgam Terror Attack

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।