Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Madhyamik

অগ্নিপরীক্ষা

গত দেড় বৎসর ধরিয়া যে সঙ্কটে ছাত্রছাত্রীরা পড়িয়াছে, তাহার জের কী ভাবে তাহাদের আগামী জীবনে বহন করিতে হইবে, তাহা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২১ ০৪:৪৯
Share: Save:

এই বৎসরের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরবর্তী বোর্ড পরীক্ষাসমূহ বাতিল হইল। পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে ও বিপক্ষে নানা মত উঠিয়া আসিতেছে, তর্ক বাধিতেছে। রাজ্য সরকার ইমেলে পরীক্ষার্থী, অভিভাবক-সহ নাগরিকদের মতামত লইয়া তাহার পরে নিজেদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছে। অবশ্য, এমন ক্ষেত্রে ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতিই শ্রেষ্ঠ পন্থা কি না, বিতর্ক থাকিতে পারে তাহা লইয়াও। কেহ বলিতে পারেন, জনগণের মতের বদলে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের লইয়া কমিটি গড়িয়া সিদ্ধান্ত লইলে তাহা অধিক গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর হইত। তবে বিতর্ক চালানো সহজ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন কাজ। কোভিডের ন্যায় অভূতপূর্ব এক স্বাস্থ্য-দুর্যোগের মধ্যে এমন বড় মাপের পরীক্ষা লওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন। আবার সঙ্গে সঙ্গে ইহাও মনে রাখিতে হইবে যে, করোনাকালে গত বৎসর যখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আংশিক বাতিল হইয়াছিল, পরীক্ষা না-হওয়া বিষয়গুলির মূল্যায়নে বিপুল নম্বর পাইয়া কলেজে ভর্তি হইতে গিয়া বহু ছাত্রছাত্রী দেখিয়াছিল যে, পছন্দের বিষয় মিলিতেছে না, কারণ প্রতিযোগিতা কেবল তীব্র হয় নাই, বিকল্প মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ভাল-মন্দের বিচারই সুকঠিন হইয়া দাঁড়াইয়াছিল। সমস্যা এইখানেই। গত বৎসর অংশত বাতিল পরীক্ষার জেরেই এই দশা হইলে এই বার সম্পূর্ণত বাতিল পরীক্ষার পর কী পরিস্থিতি হইতে পারে, অনুমান করা কঠিন নহে। সব মিলাইয়া, পরীক্ষা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী, অভিভাবক হইতে শিক্ষককুল সকলেই আপাতত বিষম উদ্বিগ্ন।

এই অবস্থায় একটিই সতর্কবার্তা দেওয়া সম্ভব। তাহা হইল— পরীক্ষার মূল্যায়ন লইয়া এই বৎসর বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত যেন তড়িঘড়ি না হয়, তাহা যেন সুচিন্তিত হয়, মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যেন একটি সুষ্ঠু মাপকাঠি নির্ধারিত হয়— সকল ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে যেন যথাসম্ভব এক ভাবে মূল্যায়ন হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা তো তবু এই মূল্যায়ন লইয়া বিদ্যালয়েই উচ্চতর স্তরে আসিবে, কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য এই ফলাফলের গুরুত্ব অপরিসীম— তাহাদের উচ্চশিক্ষার, তথা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের, ইহা ভিত্তিপ্রস্তর। সরকারের বাঁধিয়া দেওয়া পদ্ধতিতে যাচাইয়ের ভুলে ভবিষ্যতে শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে তাহাদের কোনও প্রকার অসুবিধায় পড়িতে না হয়, জীবনের বৃহৎ বৃত্তে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে হতাশা বা হীনম্মন্যতা না আসে, তাহা নিশ্চিত করিতেও এই মূল্যায়ন সুভাবিত হওয়া প্রয়োজন। আগের বৎসর ফলাফলের পরে কী সমস্যা দেখা দিয়াছিল, সেই সম্পর্কে বিশদ খোঁজখবর লইয়া, এই বার তাহা আটকাইতে কী পদক্ষেপ করা যাইতে পারে, সেই বিষয়ে শিক্ষকমহলের মতামত লওয়া জরুরি। পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত যেমন চটজলদি ঘোষিত হইল, মূল্যায়ন পদ্ধতি নির্ধারণে যেন তাহা না হয়— যথেষ্ট আলোচনা, বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়িয়া পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। করোনা-সঙ্কটের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক হইল পাঠ-দুনিয়ার পরিব্যাপ্ত ধ্বস্ততা। গত দেড় বৎসর ধরিয়া যে সঙ্কটে ছাত্রছাত্রীরা পড়িয়াছে, তাহার জের কী ভাবে তাহাদের আগামী জীবনে বহন করিতে হইবে, তাহা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সেই সঙ্কট যেন আর না বাড়ে, তাহা দেখা কর্তব্য, সরকারেরও, শিক্ষা-সমাজেরও। এই বিরাট গুরুদায়িত্বের কথা মাথায় রাখিয়া পরবর্তী পদক্ষেপগুলি ভাবা হউক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

higher secondary examination Madhyamik coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE