E-Paper

কণ্ঠরোধের দেশ

তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি হয় অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, প্রকৃত উদ্দেশ্য আসলে আরও বড়। উদ্দেশ্য হল— দেশময় এই বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যে, কোনও রকম প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদী চিন্তার কোনও জায়গাই রাখা হবে না ট্রাম্পের শাসনে।

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৪৯

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বনাম হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্রচারমাধ্যমের সূত্রে এই দ্বৈরথের অনুপুঙ্খ এখন জানা হয়ে গিয়েছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর কার্যত প্রশাসন, আইন, শুল্ক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সকল ক্ষেত্রেই কোনও না কোনও রকম সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তফাতটি কেবল সরকারের বিরুদ্ধ অবস্থানে প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের মৃদুতা ও তীব্রতায়। ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফরমান পাঠিয়ে যা যা পদক্ষেপ করতে বলেছে তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় বলেই নয়, গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামোয় যে কোনও স্বাধীন, স্বনির্ভর বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই অত্যন্ত অবমাননার— কোনও শিক্ষক কী পড়াবেন, কোন জাতি-গোষ্ঠী-নাগরিকতা বা ধর্মের ছাত্রছাত্রীরা সেখানে ভর্তি হবে তার যাবতীয় তথ্য কেন সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে? কেনই বা রাষ্ট্র চোখ রাঙিয়ে বলবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনও পাঠ-প্রকল্প স্থান পাবে না যার মূলসুর বহুত্ব, সাম্য, ‘ইনক্লুশন’? গাজ়ায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, ছাত্রছাত্রী থেকে নাগরিক যদি তার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, কেন তাকে ‘ইহুদি-বিদ্বেষ’ বলে দাগিয়ে একটি রাষ্ট্র স্রেফ বন্ধুরাষ্ট্র-কৃত্যের স্বার্থে নীতিপুলিশি ও ভীতিপুলিশি চালাবে? হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন তাঁরা মাথা নত করবেন না, রাষ্ট্র ও প্রশাসন কোনও পরিস্থিতিতেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর এমন দমননীতি চালাতে পারে না। হার্ভার্ডের এই প্রতিরোধ থেকে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা-অলিন্দেও ট্রাম্পীয় ক্ষমতার গণ্ডি নিয়ে নাকি প্রশ্ন ও সংশয় তৈরি হচ্ছে, সাম্প্রতিক সংবাদ।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি হয় অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, প্রকৃত উদ্দেশ্য আসলে আরও বড়। উদ্দেশ্য হল— দেশময় এই বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া যে, কোনও রকম প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদী চিন্তার কোনও জায়গাই রাখা হবে না ট্রাম্পের শাসনে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর এখন এই কাজে ব্যস্ত। কী ভাবে প্রচলিত ন্যায়ের ধারণাকে উল্টে দিয়ে তাকেই ন্যায়ের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা যায়, আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর সাম্প্রতিক কার্যকলাপ তার প্রমাণ। ‘এনিমি ফ্রম উইদিন’ কিংবা ‘দেশের ভিতরেই শত্রু’, এবং সেই শত্রু আসলে ‘দেশেরই শত্রু’: যুক্তিক্রম যদি এমন হয় তা হলে যে কোনও অজুহাতেই যে কোনও ব্যক্তিকে ‘ফাঁসিয়ে’ দেওয়া এখন মুহূর্তের কাজ। বিদেশি পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মী, যে কোনও ব্যক্তির কাজকেই কোনও না কোনও আশ্চর্য ব্যাখ্যায় ‘শত্রুতা’ বলে দাগিয়ে দেওয়া সম্ভব, আর কিছু না পেলে— আমেরিকায় এসে কেউ কাজ করছে মানে আমেরিকার মানুষের কাজ নিয়ে নিচ্ছে, অর্থাৎ আমেরিকার সঙ্গে শত্রুতা করছে, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নামক রাজনীতির উন্মত্ত সমর্থকদের কাছে এই যুক্তিটি তো রইলই। প্রসঙ্গত ২০২০ সালের যে নির্বাচনে ট্রাম্প হেরেছিলেন, এবং বাইডেন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা যিনি করেছিলেন, তাঁকেও এখন ‘আমেরিকার শত্রু’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে কোনটি দেশের স্বার্থ, কোনটি দলের, কোনটি ব্যক্তির— সেটাই জনসমাজের কাছে গুলিয়ে গিয়েছে। যে কোনও উচ্চারণকেই এখন দেশদ্রোহিতা বলা সম্ভব। বহু দিন ধরে বহু যত্নে তৈরি রাষ্ট্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস করে কী ভাবে ত্বরিত একটি তন্ত্রকে শেষ করে দেওয়া যায়, এই মুহূর্তে তার হাতে-গরম দৃষ্টান্ত আমেরিকা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump USA Harvard University

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy