E-Paper

দণ্ড-উত্তর

হাসিনাকে সমর্থনের অভিযোগে সাড়ে ছয়শো শিক্ষকের চাকরি প্রত্যাহারের দাবি শোনা গেল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তরফে। এ-হেন পরিব্যাপ্ত উদ্বেগ বুঝিয়ে দেয় যে ‘প্ররোচনা’র আশঙ্কা, এবং তৎসূত্রে আলোড়নের আশঙ্কাটি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৭

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড, অপ্রত্যাশিত ছিল না। তবু, মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগ নেত্রী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের পর নতুন করে বোঝা গেল সে-দেশের রাজনীতির তাপমান কত তীব্র হয়ে আছে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বন্‌ধের ডাক দেয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং দোকান ইত্যাদি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার কতখানি গোলযোগের ভয়ে, আর কতখানি প্রতিবাদে, সেই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও জানা নেই। বিপরীতে, অন্তবর্তিকালীন সরকার কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলাতে বদ্ধপরিকর হলেও তারা যে যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন নয়, তাও স্পষ্ট। সরকারের নির্দেশিকা: এ বিষয়ে শেখ হাসিনার কোনও মন্তব্য প্রকাশ করতে পারবে না সংবাদমাধ্যমগুলি। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার হলেন। হাসিনাকে সমর্থনের অভিযোগে সাড়ে ছয়শো শিক্ষকের চাকরি প্রত্যাহারের দাবি শোনা গেল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তরফে। এ-হেন পরিব্যাপ্ত উদ্বেগ বুঝিয়ে দেয় যে ‘প্ররোচনা’র আশঙ্কা, এবং তৎসূত্রে আলোড়নের আশঙ্কাটি উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার যে ছবিটি বহির্বিশ্বের সামনে উঠে আসছে, তা অবশ্যই গভীর উদ্বেগের। সেই অস্থিরতায় ইন্ধন জোগাতে পারে এই মৃত্যুদণ্ডের সিদ্ধান্ত, এই অনুমানও অতীব পীড়াদায়ক।

অবশ্যই ‘বহির্বিশ্ব’— অর্থাৎ প্রধানত ভারত— থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও সমাজ অতিমাত্রায় সংবেদনশীল। সেখানকার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘ভারতের গণমাধ্যমগুলির মিথ্যা প্রচার’ নিয়ে সরকারি ও সামাজিক ক্ষোভ প্রকাশ ধারাবাহিক ভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করে চলেছে। তবে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়ে অন্য দেশের, বিশেষত প্রতিবেশী দেশের— যার সঙ্গে সরাসরি সীমান্তসংযোগ রয়েছে— মতামত থাকবে না, বা তা প্রকাশ করা যাবে না, এতখানি দাবি করা অসমীচীন। বরং বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সরকারি ও সামাজিক স্তরে বর্ধিত সংযোগই কাম্য হওয়ার কথা।

প্রতিবেশী দেশের স্থিতি ও তার সঙ্গে সংযোগের প্রেক্ষিত থেকে দেখলে, আগামী নির্বাচনের জন্য যথাসম্ভব আন্তঃদলীয় সহযোগিতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিসরটি রক্ষা করা হোক, ভারতের প্রধান আগ্রহ এখানেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নেতা মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছিলেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে সে-দেশে ভোট হতে চলেছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই-অগস্ট‘অভ্যুত্থান’-এর পর তৈরি সনদেও স্বচ্ছ, দায়িত্ববান, গণতান্ত্রিক প্রশাসন ও বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে দূরত্ব রাখার অঙ্গীকার ছিল। তবে কিনা, এখন পর্যন্ত যে ছবি বহির্বিশ্ব দেখেছে, তাতে এই অঙ্গীকার রক্ষার দায়টি অধরাই ঠেকেছে। পূর্বতন সরকারের বিরুদ্ধে রাগ ও প্রতিহিংসার চড়া বহিঃপ্রকাশ বারংবার আক্রান্ত করেছে গণতান্ত্রিক শাসনের লক্ষ্যটিকে। দেশজোড়া অশান্তিচিত্র প্রতিভাত হয়েছে বিভিন্ন গোষ্ঠী, ছাত্রসমাজ, কর্মী-সমাজ, প্রতিবাদীদের বিক্ষোভে-প্রতিবাদে, কিংবা উগ্র ধর্মীয় হিংসায়, হুমকিতে। অর্থনৈতিক ছবিটিও মোটেই আশ্বাসদায়ক নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণার ফলে প্রথমত, গত বছরের অভ্যুত্থানে, এবং তার আগেকার সময়ে, শেখ হাসিনা সরকারের আগ্রাসন ও হিংসায় ধ্বস্ত ও ক্রুদ্ধ জনসমাজ এই ঘোষণায় ন্যায়বিচারের বার্তা খুঁজে পাবে। দুই, সমাজের যে অংশ শান্তি কামনা করে, এই তীব্র মেরুকরণকারী ঘোষণা তাদের সেই আশা আবারও ব্যাহত করবে। উদ্বিগ্ন ‘বহির্বিশ্ব’ কেবল এটুকুই আশা করতে পারে, জাতীয় নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশটি অন্তত আগামী কয়েক মাসে ধ্বস্ত হবে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangladesh India-Bangladesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy