E-Paper

পরিষেবার অধিকার

বেসরকারি হোক বা সরকারি, জনসাধারণ যার কাছ থেকেই পরিষেবা কিনুক না কেন, সংশ্লিষ্ট পরিষেবার সঠিক মান পাওয়া তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে।

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ০৫:৩৭

সম্প্রতি শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, অসম্পূর্ণ, গর্তে ভরা অথবা যানজটের কারণে চলাচলে অনুপযোগী জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীদের টোল দিতে বাধ্য করা যাবে না। রায়টি দেওয়া হয় কেরলের পালিয়েক্কারা টোল প্লাজ়ায় টোল আদায় স্থগিত করার কেরল হাই কোর্টের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদনের শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে। কেরলের ত্রিশূরের ৫৪৪ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের এডাপ্পালি-মান্নুথি অংশের খারাপ অবস্থার কথা উল্লেখ করে অগস্টের গোড়ায় কেরল হাই কোর্ট ওই সড়কে চার সপ্তাহের জন্য টোল আদায় স্থগিত করেছিল। সম্প্রতি কেরল হাই কোর্টের সেই রায় বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালত জানায় যে, যখন জনসাধারণ আইনত পরিষেবার জন্য মূল্য প্রদানে বাধ্য হয়, তখন তারা একই সঙ্গে রাস্তায় অবাধ ও নিরাপদ প্রবেশাধিকার দাবি করার অধিকার অর্জন করে। কিন্তু জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ বা এর প্রতিনিধিদের এই ধরনের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা জনসাধারণের বৈধ প্রত্যাশার লঙ্ঘন এবং টোল ব্যবস্থার ভিত্তিটিকেই ক্ষুণ্ণ করেছে।

এনএইচএআই নির্দিষ্ট কিছু রাস্তা বা সেতুর জন্য টোল কর আরোপ করে, এবং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত রাজস্ব সংশ্লিষ্ট রাস্তা এবং সেতুগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার খরচ মেটাতে ব্যবহৃত হয়। অথচ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাতীয় সড়কের শোচনীয় অবস্থার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সরকারি সংস্থাটির উদাসীনতার বিষয়টি। বস্তুত, ত্রিশূরের জাতীয় মহাসড়কের পরিস্থিতির বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারিতেই এনএইচএআই-কে সতর্ক করা হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বরং অভিযোগ, তারা মেরামতির দায়িত্বটি তৃতীয় পক্ষের ঠিকাদারদের উপরে ন্যস্ত করে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। সরকারি উদাসীনতার পাশাপাশি বহু ক্ষেত্রে জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলি প্রভাবিত হয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, রাজনৈতিক আঁতাঁতে কোনও সংস্থাকে চুক্তি পাইয়ে দেওয়া এবং সর্বনিম্ন মূল্যে চুক্তি আদায়ের মতো প্রবণতার জেরে। এ বছরের গোড়াতেই জাতীয় মহাসড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণের মান নিয়ে ক্রমবর্ধমান অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক উপ-ঠিকাদারি কিংবা সর্বনিম্ন মূল্যে চুক্তি হাসিল করে ঠিকাদারদের নিম্নমানের কাজের মতো পদ্ধতিগত সমস্যাগুলি সমাধানের নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককে। এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই সদ্যসমাপ্ত মহাসড়ক হয় খানাখন্দে ভরে গিয়েছে অথবা ধসে পড়েছে।

বেসরকারি হোক বা সরকারি, জনসাধারণ যার কাছ থেকেই পরিষেবা কিনুক না কেন, সংশ্লিষ্ট পরিষেবার সঠিক মান পাওয়া তাদের অধিকারের মধ্যে পড়ে। এর অন্যথা হলে, পরিষেবার মূল্য দেওয়ার কোনও দায় যে জনসাধারণের থাকা উচিত নয়, তা যথার্থই নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। দুর্ভাগ্য, যে কোনও সরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে কোনও কালেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ভুললে চলবে না, এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ সড়কের জেরে যানজট তো বটেই, কিছু ক্ষেত্রে দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয় মানুষকে। ফলে, জনসাধারণের স্বার্থ এবং অর্থ যেখানে জড়িয়ে, সেখানে এমন উদাসীনতা ও গাফিলতি চলে কি? কথাটি সড়ক নিয়ে বটে, কিন্তু সেটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Toll Tax poor road condition Supreme Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy