E-Paper

কূটচিত্র

সম্প্রতি আরও দু’টি ঐতিহাসিক সংঘর্ষ দেখেছে একুশ শতকের পৃথিবী। কিন্তু ইউক্রেন ও প্যালেস্টাইনের থেকে সম্ভাব্য ভয়াবহতার হিসাবে নিঃসন্দেহে অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত।

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৫:৫৯

দেশের পশ্চিম সীমান্তে যতই যুদ্ধের দামামা বাজছে, এক বিশাল বিপদমেঘ ক্রমশ ছেয়ে ফেলছে ভারত-পাকিস্তান ভূখণ্ডের আকাশ। সম্প্রতি আরও দু’টি ঐতিহাসিক সংঘর্ষ দেখেছে একুশ শতকের পৃথিবী। কিন্তু ইউক্রেন ও প্যালেস্টাইনের থেকে সম্ভাব্য ভয়াবহতার হিসাবে নিঃসন্দেহে অনেকাংশে এগিয়ে রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত। আদ্যন্ত শত্রুতাসম্পর্কে অন্বিত দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের সামরিক সক্ষমতা ও কূটনৈতিক দক্ষতা, দুই-ই বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সামাজিক-অর্থনৈতিক দিক দিয়ে যেমন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের তুলনাই চলে না, সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন। সে কথা মাথায় রেখে নয়াদিল্লি যে সর্বতোভাবে সতর্ক, গত কয়েক দিনের যুগপৎ সামরিক প্রত্যাঘাত ও আত্মসংবরণই তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যে বার্তা ইতিমধ্যে ধ্বনিত হয়েছে, তাতেও পরিস্থিতির গুরুত্ব স্পষ্টত প্রতিফলিত।

প্রসঙ্গত, পরমাণু অস্ত্র থাকাই কোনও দেশের সামরিক ক্ষমতার একমাত্র সূচক নয়। সেই অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন দেশ কী নীতি মেনে চলে, সেটিও জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। ভারত পরমাণু অস্ত্রের ক্ষেত্রে ‘নো ফার্স্ট ইউজ়’ বা ‘প্রথম আঘাত নয়’ নীতিতে প্রতিশ্রুত। বিপরীতে, পাকিস্তান অত্যন্ত সচেতন ভাবে এই নীতি এড়িয়ে চলেছে। অর্থাৎ, ইসলামাবাদ যদি মনে করে তার সার্বভৌমতা কোনও ভাবে আক্রান্ত হতে পারে, তা হলে সে তার মহাস্ত্র প্রয়োগ করতেই পারে। বিষয়টি অতীব গুরুতর, কেননা, পহেলগাম সন্ত্রাসের পরও সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ কথাটি প্রকাশ্যে বলেছেন, যার ফলে দিল্লিকে আরও বেশি করে হিসাব মেপে পদক্ষেপ করতে হচ্ছে। বাস্তবিক, পরিস্থিতি যে এমন কঠিন আকার ধারণ করতে পারে, তা কোনও মতেই দিল্লির অজানা ছিল না, যেমন ছিল না চিনের কাছ থেকে পাকিস্তানের অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরাট সম্ভার প্রাপ্তির বিষয়টিও। পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের কৌশলগত মিত্রতা গত কিছু বছর যাবৎ প্রবল ঘনীভূত হয়েছে, যা নিশ্চয়ই আলাদা আলোচনা দাবি করে— তবে তার সঙ্গে ইসলামাবাদ পেয়ে গিয়েছে তুরস্ক-সহ পশ্চিম এশিয়ার অবারিত সহায়তা। ভারতও সমধিক শক্তিমান, স্থলবাহিনীর শক্তিতে ও ড্রোন ব্যবহারদক্ষতায় বিশ্বখ্যাত। কূটনৈতিক সহায়তাতেও দিল্লি এই মুহূর্তে আমেরিকা, রাশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ-সহ বহু বলে বলীয়ান। তবে ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে সামরিক ক্ষমতার সংযোগটি সহজবোধ্য, তাই বিস্ময়ের কারণ নেই যে এত সক্ষমতা সত্ত্বেও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতকে একাধিক বার পিছোতে হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চিন-পাকিস্তান ইকনমিক করিডর (সিপিইসি) এবং দি অর্গানাইজ়েশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) দিল্লিকে এই মুহূর্তে অতিরিক্ত সতর্ক রাখছে।

এক দিকে যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আমেরিকা-সহ অনেক দিক থেকে ইতিমধ্যে দুই দেশের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ এসেছে যাতে কূটনৈতিক কথোপকথনের দরজা বন্ধ না হয়, যাতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগোনো হয়— আবার অন্য দিকে কতকগুলি দৃষ্টান্ত ভাবিয়ে তোলার মতো। দুই দেশেরই রক্তসূত্রে বাঁধা ব্রিটেন দুই দেশকেই সহায়তার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ভারতকে আটকাতে বদ্ধপরিকর চিন বিন্দুমাত্র ধোঁয়াশা না রেখে ভারতের পদক্ষেপকে সোজাসুজি ‘আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছে। এবং মালয়েশিয়ার মতো পূর্বদিগন্তের প্রতিবেশী দেশ পহেলগাম-সন্ত্রাসে পাকিস্তানের দাবি অনুসারে ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত চেয়েছে। সামগ্রিক চিত্র মাথায় রাখলে মনে হতেই পারে, সামরিক সংঘাতকে সীমায়িত করে কূটনৈতিক সমাধানের দিকে এগোনোই হবে বিচক্ষণতার পরিচয়। শেষ অবধি সেই প্রবাদটি স্মরণীয় যে, শত্রুর প্রতি অস্ত্রনিক্ষেপ না করে তাকে সর্বতো পরাভূত করে ফেলাই হল প্রকৃত যুদ্ধকৌশল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

India Pakistan Clash India Pakistan Conflct

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy