উল্লেখযোগ্য সংবাদ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। পহেলগাম আক্রমণ ও তৎপরবর্তী যুদ্ধের পর এই প্রথম তাঁর সে রাজ্যে পা দেওয়া। ফলে শ্রীনগরে ২৯ মে অমিত শাহের উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকটিকে ঘিরে রাজনৈতিক— এবং কূটনৈতিক— আগ্রহ ছিল যথেষ্ট। সামনেই অমরনাথ যাত্রা, ৩ জুলাই-এর আর বেশি দেরি নেই, ফলে পহেলগাম-ঘটনার ছায়ায় নিরাপত্তা এখন একটি অতি জরুরি প্রশাসনিক চিন্তা। প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী মোদীরও যাওয়ার কথা জম্মু-কাশ্মীরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের প্রধান লক্ষ্যই ছিল, যুদ্ধধ্বস্ত স্থানগুলি কী ভাবে পুনর্গঠিত করা যায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ ফিরিয়ে আনা যায় ইত্যাদি বিবেচনা। নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন, দু’টি জরুরি বিষয়ে জোর দিলেন তিনি। তবে স্থানীয় স্তরের সহযোগিতা ভিন্ন এ কাজে এগোনো মুশকিল, সেটা জানা সত্ত্বেও তা নিয়ে বিশেষ তৎপরতা দেখা গেল না।
উল্লেখযোগ্য সংবাদ অবশ্য এটুকুই নয়। দেখা গেল, কাশ্মীরের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে বসলেন না, বসলেন কেবল জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর (এল-জি) মনোজ সিংহ। গত নির্বাচনের পর এ বছর এই নিয়ে তিন বার নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক স্তরের প্রশাসনিক বৈঠক হল। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হল, অনেক জরুরি প্রস্তাবও উঠল, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বাদ। অথচ নির্বাচন যখন হয়েছে, তখন জনপ্রতিনিধিত্বের সরকারের কিছু গুরুত্ব থাকা উচিত ছিল। নচেৎ, গণতান্ত্রিক— এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়— ব্যবস্থার পদদলন ছাড়া অন্য কোনও সিদ্ধান্ত টানা যায় না। ঘটনা হল, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনে (২০১৯) সেখানকার আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এল-জি’র তত্ত্বাবধানে থাকবে, এমনই ঠিক হয়েছে। কিন্তু তার অর্থ এমন নয় যে, এত বড় জাতীয় সঙ্কট তৈরি হওয়ার পরও প্রদেশভিত্তিক পরিস্থিতি বিবেচনার জন্য বৈঠকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত মন্ত্রিসভার শীর্ষ ব্যক্তিকেই সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা হবে।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা আক্ষেপ করেছেন যে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর নতুন বন্দোবস্তে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যাতে কাশ্মীরে পর্যটনের দায়িত্ব তাঁর প্রশাসনের উপর ন্যস্ত, তিনি নিজেই পর্যটন বিষয়ক দফতর দেখেন, কিন্তু পর্যটক নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁদের নয়। সেটি দেখেন এল-জি। এর ফলে সহযোগিতা ও আন্তঃ-প্রশাসনিক বোঝাপড়ার অসুবিধা তৈরি হয়, এমন ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। তবে একটি বিষয় কোনও ইঙ্গিত ছাড়াই বোঝা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বেশ কিছু কাল যাবৎ কাশ্মীরের জন্য ‘রাজ্য’ স্বীকৃতির জন্য প্রয়াস করছেন। কিন্তু আপাতত যে তার কোনও সূদূর সম্ভাবনাও নেই, একাধিক বার তাঁকে অবজ্ঞার দৃষ্টান্ত দিয়েই কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার বুঝিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে পহেলগাম আক্রমণ ঘটে যাওয়ার পর সেই সম্ভাবনা সুদূরতর হল, বিলীনপ্রায়ও বলা যেতে পারে। কেবল দিল্লির উচ্চ মহলের মতামতই নয়, এখন সমগ্র দেশের জনসমাজেও কাশ্মীরের রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি উত্তরোত্তর অগ্রহণযোগ্য দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসের ছোবল কেবল মানবজীবনকেই ছিন্নভিন্ন করে না, বৃহত্তর রাজনৈতিক পটভূমিকেও এই ভাবে সমূলে পাল্টে দেয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)