Advertisement
E-Paper

নীতি ও স্বার্থ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে পাঠাইতেছেন না। আপাত কারণ, শ্রীনগরে গেলে মিত্রমহাশয়ের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য আরও ভাঙিয়া যাইবে।

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ০০:২০

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে পাঠাইতেছেন না। আপাত কারণ, শ্রীনগরে গেলে মিত্রমহাশয়ের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য আরও ভাঙিয়া যাইবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে এই ব্যাখ্যা বিশ্বাস করিয়াছেন কি না জানা নাই, কিন্তু অন্য অনেকেই সম্ভবত করিতেছেন না। বরং ধরিয়া লইবার বিলক্ষণ হেতু আছে, যে কারণে তিনি নিজে নীতি আয়োগের বৈঠকে বা মাওবাদী দমন সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ দেন নাই, ঠিক সেই কারণেই অমিত মিত্রও জিএসটি পরিষদের বৈঠকে গরহাজির থাকিবেন। ইহা রাজনীতির যুদ্ধ। যেহেতু নরেন্দ্র মোদীর সহিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ দ্বৈরথ চলিতেছে, অতএব কেন্দ্রীয় সরকারের যে কোনও বৈঠক হইতে সরিয়া থাকাই পশ্চিমবঙ্গের রণনীতি। সেই নীতি দ্রুত দৃঢ় হইতে দৃঢ়তর হইতেছে। সমস্যা হইল, তাহাতে রাজ্যের বিলক্ষণ ক্ষতি হইতেছে, কেন্দ্রের নহে।

মোদীকে লইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি থাকিতেই পারে। কিন্তু সেই বিরোধ ব্যক্তির সহিত, তাঁহার রাজনীতির সহিত, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিটির সহিত নহে। জিএসটি পরিষদের বৈঠক বিজেপির মঞ্চ নহে, তাহা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসর। সেই পরিসরে ব্যক্তি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান নাই, তাহা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য খোলা। কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত রাজ্য সরকারের মতানৈক্য থাকিতেই পারে, কিন্তু সম্পর্কটি আবশ্যিক ভাবেই সহযোগীর, বৈরীর নহে। আলোচনা বন্ধ করিয়া কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে মতানৈক্য দূর করা যায় না। আদর্শ পরিস্থিতিতে নিখাদ রাজনৈতিক বিরোধের সমাধানসূত্রও আলোচনার মাধ্যমেই খুঁজিবার কথা। বিজেপি-র রাজনীতি লইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি থাকিলে তিনি তাহার বিরুদ্ধে যুক্তি সাজাইতে পারেন। উত্তরে বিজেপি প্রতিযুক্তি দিবে। এই আদানপ্রদানের মাধ্যমেই মধ্যবর্তী পরিসরটি আড়েবহরে বাড়িবে। সেই পরিসরটি রচনা এবং পরিবর্ধনই গণতন্ত্রের কাজ। বর্তমান ভারত অবশ্য সেই রাজনীতি হইতে বহু আলোকবর্ষ দূরে। রাজনীতিতে না হউক, অন্তত প্রশাসনিকতায় আলোচনার পরিসরটিকে বিনষ্ট হইতে না দেওয়া নেতাদের কর্তব্য।

শুধু নৈতিক কারণেই নহে, রাজ্যের স্বার্থের কথা ভাবিয়াই কেন্দ্রের সহিত আলোচনার সব কয়টি পরিসরকে ব্যবহার করা বিধেয়। কোন পণ্যের ক্ষেত্রে করের হার কী হইবে, জিএসটি পরিষদের বৈঠকে তাহা নির্ধারিত হইবার কথা। সব পণ্য সব রাজ্যের জন্য সমান তাৎপর্যপূর্ণ নহে। এমন বহু পণ্য আছে, যাহার উপর করের হার কম ধার্য হইলে একটি বা কয়েকটি রাজ্যের সুবিধা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তেমনই একটি পণ্য চটের থলি। তাহার উপর করের হার কম হইলে পশ্চিমবঙ্গের লাভ, কারণ অন্য কোনও রাজ্যে এই পণ্য উৎপাদন হয় না। উদাহরণটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই পণ্যটি ব্যবহার করিবার যে বাধ্যবাধকতা বেশ কিছু শিল্পের ক্ষেত্রে ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি তাহা তুলিয়া লইতে মনস্থ করিয়াছে। সেই বৈঠকেও রাজ্যের প্রতিনিধি ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের স্বার্থরক্ষা করিতে হইলে এই পরিসরগুলি ছাড়িলে চলে না। বরং, উপস্থিত থাকিয়া শেষ অবধি লড়িয়া যাওয়াই কর্তব্য। মুখ্যমন্ত্রী বার বার সেই কর্তব্যপালনে ব্যর্থ হইতেছেন। স্বেচ্ছায়।

Policies Interest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy